রোববার রাত সোয়া ১১ টা। বাসায় স্টার ক্রিকেট চ্যানেলে অস্ট্রেলিয়া- ইংল্যান্ড ২য় ওয়ানডে ম্যাচ দেখছিলাম। তখনই সহকর্মী তুহিনের ফোন। উদ্বিগ্ন কন্ঠ। বললেন, খবর শুনছেন ফারুক ভাই মারা গেছেন। দেশ টিভিতে দেখাচ্ছে।
আমি স্তব্দ। হতভম্ব । বুকটা ধকধক করছে। নাহ, খবরটা সত্যি নাও হতে পারে। হেড অফিসে ফোন দিলাম। সব চ্যানেলেও শোক সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। সত্যিই ফারুক ভাই নেই......নেই...
আহমেদ ফারুক হাসান। দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক এবং বার্তা সম্পাদক। বয়সও এমন কিছু নয়। ৪৭। চেহারায় বরাবরই একটা রুক্ষ ভাব। তবে কাঠিন্যের আড়ালে তার কোমল হৃদয়। নাহলে অমন রোমান্টিক গান লেখেন!
এন্ড্রু কিশোরের ঈদের অ্যালবামে ফারুক ভাই গান লিখেছেন। শ্রোতারা শুনবে, কিন্তু গীতিকারের শোনা হল না....
প্রতিদিন বিকেল ৫ টায় ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হত। তিনি চট্টগ্রাম অফিসে ফোন করতেন নিঊজ / রিপোর্ট কি আছে তার লিস্ট নিতে। ফারুক ভাই একটু মেজাজি লোক ছিলেন। ঝাঁঝালো কন্ঠ। ফোন করেই সোজা প্রশ্ন, আজ কি আছে বলো। পাছে ধৈর্যহারা হয়ে যান তাই দ্রুত দিনের সব রিপোর্ট গড়গড় করে বলে শেষ করতাম।
তিনি আমাদেরকে তুমি করেই সম্বোধন করতেন। টের পেতাম তার আন্তরিকতা।
বড্ড কাজ পাগল ছিলেন লোকটা। মানবজমিনের ব্যুরো চিফ শামসুদ্দিন হারুন ভাই একটা ঘটনা বললেন। ফারুক ভাই তখন মানবজমিনে। এক সকালে বাসায় নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলেন। কি কারনে যেন ভাবি ফোন করায় ফারুক ভাই মহাক্ষুব্ধ। বললেন- 'তোমাকে না বলেছি অফিসে ফোন করবা না। ডিস্টার্ব হয়।'
পিতা মাতাকে অসম্ভব ভালবাসতেন। মাস তিনেক আগে তাঁর পিতার ওষুধ পাচ্ছিলেন না ঢাকায়। চট্টগ্রামে ফোন করলেন। সহকর্মী শহীদুল্লাহ শাহরিয়ারকে বললেন - 'যেভাবেই হোক যত টাকা লাগুক এই ওষুধ যোগাড় কর। আমার বাবাকে বাঁচাতে হবে।'
বাবা ঠিকই আছেন কিন্তু সেই পুত্র নেই। বিধির কি লীলাখেলা...
সোমবার মধ্যরাতে শ্যামল মিত্রের গান শুনছিলাম।
" কি আশায় বাঁধি খেলাঘর...
বেদনার বালুচরে ... "
বারবার মনে পড়ছিল ফারুক ভাইয়ের কথা। মাত্র ৮ বছর বয়সী ছেলে আর স্ত্রীকে অসহায় রেখে এ কেমন যাত্রা। নির্লোভ সৎ স্পষ্ঠবাদিতায় অনন্য ফারুক ভাই এভাবে যেতে পারলেন !
প্রতিদিন বিকেলে ঠিকই ৫টা বাজবে। কিন্তু না ফেরার দেশ থেকে ফারুক ভাইয়ের ফোন আসবে কি ? তবুও আমি কান পেতে থাকি। অফিসে ফোনের রিং বাজলেই মনে হয় এই বুঝি তিনি ফোন করলেন...
জানি এ অপেক্ষার শেষ নেই।
তবুও আমি কান পেতে রই.. .
'' কোনদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে বহিবে যে দীর্ঘশ্বাস
ঝরা বকুলের কান্না.. ব্যথিবে আকাশ
..ফিরিবার পথ নাহি
দুর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়
হে বন্ধু বিদায়.........."