somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন্ত্রিত্ব হারিয়ে নৌমন্ত্রী

২৩ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মন্ত্রণালয়ের চারিদিকে মানুষে-সাংবাদিকে গমগম করছে। নৌমন্ত্রীর আজই শেষ দিন। কাল থেকে নতুন মন্ত্রী আসবেন। আজ তাঁর শেষ সংবাদ সম্মেলন। প্রস্তুতি চলছে। সবাই অপেক্ষা করছে মন্ত্রীর শেষ কথা শোনার জন্য কিন্তু মন্ত্রীর খবর নাই। উপস্তিত সাংবাদিকেরা মন্ত্রীর পিএ মফিজকে জিজ্ঞেস করতে করতে অস্থির করে ফেলেছে। উপায়ন্তর না দেখে মফিজ গেল মন্ত্রীর ঘরে। কাছাকাছি যেতেই ঘোড়ার মত চিঁচিঁ শব্দ। ঘরে ঢুকে নাকে এল দুর্গন্ধ, কানে গেল গানের আওয়াজ। মফিজের মনে পড়লো মন্ত্রী দুপুরে বিয়ের দাওয়াত খেয়েছে। এজন্যই ঘর ভর্তি গন্ধ। ভাল মন্দ খেলেই অন্তত দুই দিন মন্ত্রীর কাছে ঘেঁষা যায় না। কিন্তু গান কোথা থেকে আসলো! আরেকটু কাছে যেতেই ঘোড়ার মত চিঁচিঁ শব্দের কারণ বোঝা গেল। মন্ত্রী গান গাইছেন, আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো…। নতুন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়ার পর থেকেই টানা এই গান গুনগুন করে চলেছেন মন্ত্রী।

মফিজঃ স্যার সবাই বসে আছে অনেকক্ষণ।

মন্ত্রীঃ মেকআপ ওম্যানের খবর নাই আর আমি গণেশ সেজে শুয়োরেরবাচ্চা সাংবাদিকদের সামনে যাই তাই না! আজকে অঞ্জনা-আপা স্টাইলে মেকআপ নিব। এই মহিলার মেকআপ সেন্স খুবই উন্নত, যত দেখি তত মুগ্ধ হই।

মফিজঃ কিন্তু আপনের প্রিয় নায়িকা তো অঞ্জু ঘোষ। তার মত মেকআপ নেন।
মন্ত্রীঃ গাধা নাকি! অঞ্জু তো মিডিয়ায় নাই, অঞ্জনা আছে। আমার যৌবন তো কেটেছে অঞ্জুকে দেখেই। ঢলঢল দেহগঠন। কপালের একপাশে কার্লি করা চুল। এটা দেখে আমিও চুল কার্লি করতে গেছিলাম, তখন থেকে পার্মানেন্ট কার্লি হয়ে গেছে। তার 'মধুমালা মদনকুমার' ছবিটা পনেরোবার দেখেছি। আমার মোবাইলে ছবির সব গান আছে। শুয়োরেরবাচ্চা কয়টা আইছে?

মফিজঃ পঞ্চাশজনের কম হবে না। গ্লিসারিনটা এনেছি দেখেছেন স্যার? তিন অনু কার্বন, আট অনু হাইড্রোজেন আর তিন অনু অক্সিযেন, একেবারে অর্জিনাল। এক ফোটা চোখে দিবেন, টল টল করে পানি পড়া শুরু হবে।

মন্ত্রীঃ আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে চোখে পানি থাকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। কাঁদতে আমাকে হবেই। আমার আবার চোখের ব্যারাম, মানুষ মরে গেলেও কান্না তো দূরের কথা হেসে দেই। দেখলি না ঢাকায় দুইটা ছাত্রছাত্রী মরল, সাংবাদিকের সামনে ফিক করে হেসে দিলাম। সামান্য সেই হাসি নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড। তাই প্রতিজ্ঞা করেছি এবার চোখের পানি আমার চাইই চাই।

মফিজঃ কিন্তু স্যার শেষ পর্যন্ত এই গ্লিসারিনেও কাজ না হলে?

মন্ত্রীঃ কোন সমস্যা নাই, আমি কি বলদ নাকি একটা অপশন নিয়া বইসা থাকব। কান্নার সময় সিনেমার দৃশ্য মনে করতে হবে। দ্য ক্রেইন্স আর ফ্লাইং ছবির সারস পাখি উড়ে যাওয়ার দৃশ্য, অথবা ব্যালাড অব এ সোলজার ছবির মা ছেলের বিদায়ের দৃশ্য দেখলে নাকি হু হু করে কান্না আসবে আমার মেয়ে বলেছে। সমস্যা হল আমি দশবার এই সিন দেখলাম কিন্তু চোখের পানির খবর নাই।


মফিজঃ কেমনে খবর থাকবে স্যার। এইগুলা তো অখাদ্য ছবি। ছবির মত ছবি হল অচিন দেশের রাজকুমার। আহা অঞ্জু ঘোষের কি ড্যান্স! স্যার, আমি ঠিক করেছি একটা ছবি বানাবো। নাম দিয়েছি মন্ত্রী কেন হাসে। সামাজিক অ্যাকশন। দর্শক কাঁদতে কাঁদতে হল থেকে বের হবে।

মন্ত্রীঃ এই সামাজিক ছবির জন্য আমি একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখব। ‘হাসতে নাকি জানে না কেউ কে বলেছে ভাই, ওই দেখনা মন্ত্রী মোদের কেমনে হেসে যায়’। 


মফিজঃ স্যার কোথায় যেন এটা শুনেছি মনে হইতেছে

মন্ত্রীঃ কোথাও শুনস নাই। এই মন্ত্রী নকল করার লোক না। 


মফিজঃ তবে গান শুনেই বোঝা যাচ্ছে উন্নত রুচির মানুষ না হলে এসব লেখা সম্ভব না। এজন্যই আপনার রুচির তারিফ করতে হয়।

মন্ত্রীঃ আর রুচি। মন্ত্রী হইতে পারলাম না রুচি দিয়া করবো কি। আচ্ছা বলতো, মোগল প্রশাসনে ইরানি আফগানি তুর্কি এমনকি ভারতীয় হিন্দু মুসলিম মন্ত্রীর সমারোহ ছিল। তাহলে আজকের এই শিশু মন্ত্রীসভায় আমার মত একজন মেকাপ সচেতন ব্যক্তিকে নিলে মন্ত্রীসবার শ্রী বৃদ্ধি হতো না? বল হতো না?

মফিজঃ স্যার নেত্রী আজ বুঝবে না বুঝবে কাল, কপাল ঢুকবে আর আপনাকে খুঁজবে। সব মন্ত্রী ফেল করবে।

মন্ত্রীঃ চিন্তা করে দেখ, জওহরলাল নেহরুর কেবিনেটে মন্ত্রী ছিলেন ১৩ জন। তাঁরা আজকের পুরা ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান শাসন করেছে। বঙ্গবন্ধুও ১০-১২ জন নিয়েই দেশ চালিয়েছেন। অথচ এখন মন্ত্রী পঞ্চাশ জনের মত, আর আমার জায়গা হল না। ১৯৩২ সালে জিন্নাহ যেমন ভারতবাসীর উপর রাগে দুঃখে বিলাত চলে গেছিলেন, মন চায় আমিও দেশ ছাইড়া চইলা যাই।

মফিজঃ আমি ভেবে পাইনা, এই দেশ আপনাকে ছাড়া কেমনে চলবে?

মন্ত্রীঃ - জার্মানি ফ্রান্স দখল করেছিল ১৮৭০ সালে। শ্রমিকেরা এর বিরুদ্ধে লড়ে ৭২ দিন ফ্রান্স দখল করে রাখে। আমিও তো লাখ লাখ শ্রমিকের নেতা, মন্ত্রিত্ব হারিয়ে হায় হায় করেতেছি, অথচ বান্দীর বাচ্চারা একটাও আমার পক্ষে রাস্তায় নামলো না!

মফিজঃ ওই কামলার বাচ্চারা আপনার মর্ম বুঝবে কেমনে স্যার! চলেন স্যার এবার যাই। অনেক লেট।

মন্ত্রীঃ ব্ল্যাক বক্সার ব্র্যান্ডের জাইঙ্গাটা দে। এবার এমনভাবে জাইঙ্গা পড়বো আগের মত কেলেঙ্কারি যেন না হয়। চিন্তা করে দেখ, মন্ত্রী কথা বলছে, তল দিয়ে পেনিস ফুলে ফুলে আছে। বজ্জাত সাংবাদিকেরাও বেছে বেছে ওই ছবিটাই প্রকাশ করছে। নেত্রী থেকে সাংবাদিক, সবাই আমার পেছনে লেগেছে।

দুজনে হাঁটতে লাগল। সম্মেলনের রুমে ঢোকার আগ মুহুর্তে মফিজ আলতো করে মন্ত্রী দুই চোখে দুই ফোটা গ্লিসারিন দিয়ে দিল। দুই চোখ লাল হয়ে পানি পড়তে লাগলো।

মফিজঃ স্যার সমস্যা তো একটা হইয়া গেল। শুরু করার আগেই চোখে পানি। পানি আসতে হবে টাইম মত।
মন্ত্রীঃ ভেবেছিলাম কোন সাংবাদিক যদি জিজ্ঞেস করে গত দশটি বছরের স্মৃতিচারণ করুন। সাথে সাথে কেঁদে দিব। কিন্তু এ কী হল। চোখের পানি তো থামেই না। তবে কাজটা মন্দ হয় নাই। চোখে পানি আসতে আসতে তোর “মন্ত্রী কেন হাসে” ছবির জন্য একটা নজরুল সঙ্গীত লিখে ফেললাম, আমি জনম জনম মন্ত্রিত্বের জন্য কাঁদিবো…।

মফিজঃ ভেরি স্যাড গান, আমার ছবির সাথে একেবারে মিলে গেছে স্যার!


ধন্যবাদান্তে,
জাহিদ কবীর হিমন
২৩ মার্চ, বার্লিন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×