somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উলটো স্রোতের ভাষণ

২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানীং ভাইরালের যুগ। আমার দুর্ভাগ্য এই যে, বহু কিছু ভাইরাল হয় কিন্তু আমার জানাই হয় না। স্থূল-সস্তা বিষয় যারা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায়, ডানপন্থা-ভিত্তিক আদর্শের যারা ঠিকাদার, আমিন বলে যাবেন না -টাইপ কথাবার্তা যারা বলে তাদের প্রায় অধিকাংশকেই আনফলো করা। আমার আত্মরম্ভিতা থেকে একথা বলছি না, এটা আমি করি নিজে সুস্থ থাকতে। এতকিছুর পরও কদিন হলো নাকি এক রসালো ভিডিও ফেসবুক নামক সিনেমা হলে চলছে। ভাগ্য দেবতা আমার প্রতি তার করুণার হাত প্রসারিত করতে কার্পণ্য করায় সেটি আমাকে জানতে হল আকারে ইঙ্গিতে লেখা কতিপয় কিছু ফেসবুক বন্ধুর পোষ্ট থেকে। সুললিত কারুকার্যময় ভাষায় বন্ধুদের সেসব লেখার পাঠোদ্ধার করতে নেহায়েত কম ঝক্কি যায়নি আমার উপর দিয়ে।

আমার নিজস্ব নির্বুদ্ধিতা আর অপরিপক্বতার দরুণ এ যুগের বহুকিছু জানতে না পারলেও, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সাম্প্রতিক একটা লেখাও চোখ এড়ায়নি। এর কারণ, যে মানুষদের মানবতাবাদী হিসেবে জানি, যাদের চিনি উদারপন্থী অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে, যাদের লেখা পড়ে ঋদ্ধ হতে চেষ্টা করি, তারা পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত বঞ্চিত শোষিত, সভ্যতার বল্গাহীন অশ্লীল প্রবঞ্চার শিকার এক নিরতিশয় ভাগ্যাহত জাতির প্রতি তাদের ন্যুনতম করুণার দৃষ্টি প্রসারিত করতেও করুণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।  

আত্মপ্রচার ও নিজের ঢোল পেটানোর তকমা লাগার ঝুঁকি সত্বেও একটি কথা বলতেই ইচ্ছে করছে। ২০১৬ সালের ২৬ শে নভেম্বর। আসাদের সিরিয়ায় জনসাধারণের উপর রাসায়নিক হামলা হয়েছে কেবল। সেদিন শীতের সন্ধ্যায় ফেসবুকে বসে আমি দেখলাম এক নিদারুণ ভিডিও। রাসায়নিক পদার্থ নাকে মুখে ঢুঁকে একদল শিশু উথাল পাথাল হয়ে মারা যাচ্ছে। আমার হৃদয় ভেঙ্গে চুর্ণ বিচুর্ণ হয়ে গেল।

এক একটি ঘটনা ঘটে, আর পৃথিবীকে কাঁপিয়ে যায়। আমি নতুন নতুন প্রতিজ্ঞা করি। কী করে এই পৃথিবীকে এক বাসযোগ্য, নিবিড় শান্তির পৃথিবী করা যায় সেই চিন্তায় আমি মরে মরে যাই। এরপর যখন দেখি আমার মত মূল্যহীন মানুষ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই তখন দমে যেতে যেতে আবার দাঁড়িয়ে পড়ি। ভাবতে থাকি কিছু একটা করতেই হবে আমাকে। একমাত্র মৃত্যুকেই ভাগ্যের হাতে ছেঁড়ে দিয়েছি। বাকি সব আমাকেই করতে হবে। জীবনে একটা জিনিসই শিখেছি। সবসময় নিপীড়িতের পাশে থাকতে হবে আর নির্যাতকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সিরিয়ায় ওই হামলা নিয়ে আমার কিছু করার নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনের ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করবো, খাদ্যে পরিমিতি আনবো, মাছ মাংসের মত বিলাসিতা এই জীবনে আর নয়। প্রায় দেড় বছর শাকাহারী থাকার পর দেহে নানা রোগ বাধিয়ে অবশ্য সেই ত্যাগ আমাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। সে ভিন্ন আলোচনা। 


ইউরোপে থাকা এক উদার চিন্তার বাঙ্গালি আপু একটা ভিডিও শেয়ার করলো। সেখানে দেখা গেল কিছু আফ্রিকান কিশোর মিলে এক সাদা ছেলেকে পেটাচ্ছে ইউরোপের কোন শহরে। সাদাদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে প্রেমের অন্ত নেই। ওই আপুরও ধর্মনিরপেক্ষ উদার মন সেটা দেখে হুহু করে উঠলো। কুলাতে না পেরে দিলেন শেয়ার করে। সেই ভিডিওতে এক শ্বেতকায় ইউরোপবাসী কমেন্ট করলেন, “ঘৃণা ছড়ানোর বাহক হইও না” (ইংরেজি থেকে অনূদিত)। 



ঘৃণার পৃথিবীতে আমার করণীয় কি? আমাদের কার কথায় কীভাবে কোন দিক দিয়ে ন্যুনতম হলেও কোন ব্যক্তি মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের ঘৃণা- বিদ্বেষ প্রকাশ প্রায় সেটি খেয়াল করে চলতে হবে, আর তা কিছুতেই হতে দেওয়া উচিত হবে না। সেই অপছন্দের মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের রাজনৈতিক বা ধর্মীয় আদর্শ নিয়ে কড়া সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু সেই মানুষের প্রতি ঘৃণা বা অসম্মান প্রদর্শন এক ক্ষমাহীন অপরাধ। আমার ফেসবুক বন্ধুদের আমি এই অনুরোধই জানাবো। তবে তাতে কাজ বিশেষ হবে তাতে আমার আস্থা কম। একারণেই শিরোনাম দিয়েছি ভাষণ। মানুষকে দিয়ে সব করানো সম্ভব, শুধু ভাষণ দিয়ে কিছু হয়নি কোনকালেই।


২৮ আগস্ট ২০১৯
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে 

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:৩৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×