বৃস্টি আসবে ।
আসবে বলেই
আমি অপেক্ষায় ছিলাম।
এরই মাঝে
দু' বার
ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে গেছে।
মাঝে কে যেনো একবার দরজায়
কড়া নেড়ে গেছে,
কারো অস্পস্ট গলা শুনতে পেলাম-
" খেয়ে নে !"।
মাঝে আরও এক সপ্তাহ কেটে গেলো
এখনো বলছে-
" খেয়ে নে...খেয়ে নে। "
মাঝে পরীক্ষার-ডেট চলে গেলো।
থাংক গড!
সিলেবাসটি আগেই হারিয়ে ফেলেছিলাম,
যেমনটি ভেবেছিলাম
সেভাবেই
আফসোসটি দ্রুত কেটে গেলো।
এখনো দরজার কড়া নেড়ে বলছে জননী-
" বৃস্টি আসবে....
বৃস্টি আসবে
খেয়ে নে রে পাগলা ছেলে
খেয়ে নে ! "।
আমি অ্যাডামেন্ট, অটল
আশ্বিন চলছে কেবল, তাতে কি?
মনোবল মেঘের মত জমছে ,
কাল-পরশু.....
বৃস্টি নিশ্চিত হবে
হবে প্রবল।
এর মাঝেই,
পানি ও কারেন্ট-এর বিল-গুলো দিবো,
স্কুল থেকে নামটা কাঁটাবো,
দেবাশীষের পাওনা টাকা-টাও ফিরিয়ে
দিবো দিবো বলে
এ জীবনে তক্ষনি দিবো।
এক মুঠ-চাল
ওর কাছ থেকে হাওলাৎ নিয়েছিলাম,
ভাবছি ওর মেস-এ ফিরে
ভূনা-খিচুড়ি রেঁধে আসবো।
বৃস্টি আসবেই,
আর একদিনো বাকি নেই।
দ্রুত। দ্রুত।
কাঁধ-ব্যাগটি গুছানো আছে।
ট্রেনের টিকেট কনফার্ম আছে দুটো।
সুরচিতা
কথা দিয়েছে আমায়-
" বৃস্টি আসবে। নির্ঘাৎ
আর আমরা একত্রে পালিয়ে যাবো। "
( মা এখনো ডাকছে---খেয়ে নে...খেয়ে নে....)।
স্টেশনে দাড়িয়ে ভাবছি
----খাওয়া হলো না।
তবে আগামী বর্ষায় নিশ্চয়ই ঘরে ফিরবো।
সেই কবেকার তুমি
জননী
হয়তো এখনো জানোনি-
সুরচিতা আমার মত পুচকি ছেলের সাথে মোটেই আসছে না ।
আমি স্কুল পলাতক,
খিদে পেটে,
"ট্রেন ছাড়তে দেরী আছে....
খেয়ে নে রে....
হায় বুক...
কি করিস রে সোনা-কপাল
জানিস যবে এ জগতে
তক্ষনি
ভালো ভাবে আর
সুরচিতা তখন অনার্স-এর ফাইনাল !!"
যাক গিয়ে!
বয়েশের ফারাকটা যতই থাক না কেনো ?
থাকবে না
আর বৃস্টি-বর্ষা মেঘের কবলে,
আসবে না জানি সুরচিতা
আমি নিজেকে নিয়ে সামলে
আর সামলে নিয়েছে
দ্রুত ছোটা ট্রেনটি
মুষল বৃস্টির প্রবলতা।
মা-কে দেয়া কথাটি রাখতে পারিনি
কত বর্ষা এলোগেলো, বাড়ি ফেরা হয়নি।
জননী নিশ্চয়ই এখনো ভুলেনি--
না খেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম
দ্রুত।
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ছোট,
বুক পকেটে ছিলো টিকেট কেনা দুটো
আর অপেক্ষায় ছিলাম..... ........না জানি কত?
ইতোমধ্যে, মা-র কাছ থেকে
চিঠি পেয়েছি চারখান।
জানলাম সুরচিতা পাশ করেছে
অনার্সের অভিযান,
জানলাম দেবাশীষ-দা এখনো মেস-এ পরে আছে
আর হেলালের গ্যারেজটা বিক্রি হয়ে গেছে।
জানলাম....আরো কত কি
নাকের ডগায় মাইনাস-টু ফ্রেম বসাতে হবে শিঘরি,
আর জানাচ্ছে বহু কিছুই আমাকে পৃথিবী।
তবে জানে কি সুরচিতা?.....
আমি আছি আগেরই মত----ওর থেকে
ছ'বছর-তিন-মাস-ছোট,
তবু তারই প্রেমে বিশন্ন আপাতত।
তাই মাঝে মাঝে
বিশন্ন কোনো রাতে
আমারও জানতে ইচ্ছা করে-
সেই কবেকার তুমি
আজও কি আছো সেই একি,
যতবার নিখুত কলপনায়
জরিয়েছি তোমায়
নম্যাড বা ভ্যাগাবন্ড থাকার
চির পন টাকে
রাখতে পারিনি।
যখন কোনো নির্জন
গিরিপথ বা জলপথ পেরুতাম
তোমায় সাথে নিয়ে আসবার
ইচ্ছেটা বেরে যেতো ততবার
তোমার ফিরিয়ে দেয়া আংটি-টা
চেয়ে নিশসন্গতার সাথে
আপোস করে নিতাম।
তোমার মখমোল ওরনাটি
না বলেই নিয়ে এসেছিলাম,
যে রাত দেবদারু গাছের নিচে কাটিয়েছিলাম
সেখানেই হারিয়ে ফেলি।
চারদিন আগে
মল্লিকাদের বাড়ী থেকে চিঠি পেয়েছি,
বড়পক্খ দুদিন বাদেই তোমায় নিয়ে যাবে।
সেই কবেকার তুমি
কাল অন্যের প্রিয়া হয়ে যাবে।
আমি প্রায় ফিরতে নিয়েছিলাম
এই পৃথিবী আমায় ফিরতে দেয়নি,
শুধুই দেখিয়ে ছিলো
সুদুরে এক শালবন।
ওটার লোভে এগিয়ে গেলাম আরও কিছু দুর,
তখনি আকাশ থেকে আবার
বৃষ্টি পরতে শুরু করলো,
মনে হচ্ছে বৃষ্টি হওয়াটাই যুতসই
অতয়েব
হচ্ছে না আর আমার
বাড়ী ফেরা
হচ্ছে না ফেরা
তোমাদের শহরে
বধয়
আর কখনই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



