somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রান্নাঘরের তৈজসপত্রের বাতচিৎ

১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাদী ছোটবেলায় গল্পবলার সময় প্রায়ই বলত আমাদের মানুষের মত নাকি অনান্য জীবজন্তুদের আবেগ অনুভূতি আছে। এমনিকি গাছেরও নাকি আছে.....গাছের পাতারা নাকি একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে। তারপর আমরা যখন গাছের পাতা কিংবা ফুল ছিঁড়ে ফেলি তখন নাকি তারা কান্না ও করে। ছোটবেলার মত এখনো এসব কথা বিশ্বাস করি। পিঁপড়াদের খেয়াল করে দেখেছি তারা যখন একসারিতে দলবেধে চলে তখন বিপরীত পাশ থেকে আরেক সারি পিঁপড়া আসলে ফেস টু ফেস দুইটা পিঁপড়া মাথা নেড়ে কি জানি বলে। তাদের বাতচিৎ অনুবাদ করে অনেকটা এমন দাঁড়াবে ...

১ম পিঁপড়া : হ্যালো ভাইজান শইলডা ভালানি
২য় পিঁপড়া : হ ভালোই। তবে জানের ভয়ে রাইত্যে ভালা ঘুম অয় না
১ম পিঁপড়া : ক্যান? কেডাই হুমকি দিচে
২য় পিঁপড়া : আরে বদ মাইনষের কথা কই। ছোট মুখ দিয়া একটা কামড় দিলেই এমুন ডলা দেয় যে নাড়িভুড়ি সব বাইর হইয়্যা যায়। আমরা ছোড আর তোরা দৈত্যের মতন বড় বইল্যা কি হারাজীবন এমুন ডলার উপরে রাখবি নাকি?
১ম পিঁপড়া :থাউকগ্গা মন খারাপ কইরো না। আমি যাইগ্যা। কাম আছে ...খবর পাইচি সামনের বাসায় নাকি আইজ ভালাই খানাপিনা হইবো। হালকা-পাতলা টেস্টু কইরা আসি গা।

পিঁপড়ার কথা বাদ দেই। আজ রান্না করতে গিয়ে মনে হলো এই বাসন-কোসন মানে রান্নাঘরের যাবতীয় জিনিসপাতিরা যদি নিজেদের মাঝে সুখ দুঃখের আলাপ চালাইতো তাহলে কি বলত? নিশ্চয় ভালো বলবে না,বদনাম তো অবশ্যই করবে। কারণ আমার রাগ উঠলেই আমি রান্নাঘরে ঢুকে সামনে যা পাই দেই আছার। আমার মা এজন্য প্রতিবার বাসায় এসেই রান্নাঘরে গিয়া সবার কুশলাদি জানতে চায় মানে চেক দিয়া দেখে আমি আছার মাইরা কয়টার চেহারার নক্সা বদলাইয়্যা দিছি। যাইহোক এখন দেখি বাসন কোসনরা কি টকিং করে আর কত বদনাম করে সেই সাথে তাদের সুখ-দুঃখের কিছুটা ভাগীদার হই ...

১.বড় পাতিল (পানি সিদ্ধ করার জন্য): আইচ্ছা আপনারা কন দেহি তেনারা এত পানি খায় ক্যান ? আমারে আর আমার তেনারে মানে সোয়ামীরে গলা পর্যন্ত এমুন করে পানিতে ডুবাইয়া রাখে যে ঠিকমতন উয়াশ(শ্বাস কাটা) কাটতে পারিনা। এরপরে দুইজনেরে দুই চুলায় বসাইয়্যা পানি ফুটায়। পানি ফুটাবি ভালা কতা টাইম দেখে ফুটা । ছোড আফায় আমাগো চুলার উপর বসাইয়া দিয়া এমুন ঘুম দেয় ....অনেক পরে আইস্যা দেহে পানি কমতে কমতে তলানিতে গিয়া ময়লার স্যুপ হইয়া গেছে । এতক্ষণ আগুনে বসাইয়া রাখছে খালি হাঁসফাঁস করতাছি কহন এই দোজখের বাইরে যামু :((

২.ভাতের পাতিল: এইবার আমারে কথা বলতে দেন দেহি। বাসায় ছোট,বড় মাঝারী সাইজের চান্দা ব্যাটারীর মতন আমার কয়েকজন ভাই বেরাদার আছে। মেহমান আসলে বড়ভাই গো ডিমান্ড বেশী নাইলে বাকি সময় ছোট আর মেঝের কাছে ওরা পাত্তা পায় না। ছোড আফায় কি অকাম করছে সেদিন জানেন? চুলায় ভাত বসাইয়া সে মনের সুখে ব্লগিং করতাছে। আর ভাত পুড়ে আমার নুরানী খোমাডারে এমুন কালা করে দিচে যে ছাই-সাবানে ঘষা-মান্জাতে ও চেহারার আগের সাইজ আসতাছে না। ভাবতাছি একবার স্পা,ফেসিয়াল,ম্যানিকিউর ,প্যাডিকিউর যা আছে সব করাইয়া খোমার আগের জৌলুস ফিরাইয়া আনতে হবে :(

৩.তরকারীর কড়াই: আমার তেমন কাম কাজ নাইক্যা। তেনারা খালি পাতিলে তরকারী রান্না করে। আমার কাম অইলো মাঝে মাঝে ভাজি কিংবা শাক রান্না করলে ডাক পড়লে।যাইকগ্গা আরামে বইয়া বইয়া থাকি খারাপ কি....বেশী খাটাইলে তো খোমাডা আপনাগো মতন বেসাইজের হইয়া যাইত কবে :D

৪.শিল-পাটা: এরা আগে আমাগোরে যে কষ্ট দিত । টাইম টেবল নাই আইসা বাটা শুরু করে দিত। আহারে কি সুখের দিন ছিলো। কিন্তু যেইদিন থেকে ব্লেন্ডার বদমাইশ আইলো তার কদর বেশী আমাগো কেউ পুছেও না ।কিছু বাটার দরকার পড়লেই ঐ ব্লেন্ডারে কাছে যায় আর ব্যাটা বদমাইশ আকাশ পাতাল এক করে ভো ভো শব্দ করে পাঁচ মিনিটে তাগো কাম শেষ করে দেয়। তাড়াতাড়ি কাম হইলেই হইবো নাকি বদমাইশটা যে শব্দ করে পরিবেশ দূষণ করে,ঘুমের বারোটা বাজায় আর মাস শেষে কারেন্টের বিল বাড়ায় এর বিচার করবো কেডাই? কথার মাঝে শিল ফুরকি কেটে বলে উঠলো " আমারে তারা এখনো ভালোবাসে। এই যে প্রায়ই আস্তা সুপারী ছ্যাচা দিবার হলে আমার কাছে আসে। কিন্তু আমার রাগ হইছি সেইদিন পেরেক ঠুকতে গিয়া হাতুড়ি না পেয়ে আমারে দিয়া কাজ চালাইছে। শরীরে যে ব্যাথা পাইচি কয়দিন ঠিকমতন নড়ন চড়ন বন্ধ ও ছিলো" :((

৫.খুন্তি আর চামুচ : আমি খুন্তি আমার কাজ ভালা কইরাই জানি। মাছ ভাজবি ভালা কতা তাই বলে সারাক্ষণ গরম তেলে ডুবাইয়া রাখবি? তোগো যদি এমনে গরমে তেলে ডুবাইয়া রাখতাম তাইলে বুঝতি কত কষ্ট লাগে। আমি প্রায়ই রাগ হলে লাফ দিয়া ওগো পায়ের উপরে ঝাপাইয়া পইরা খোঁচা দিয়া আসি। আমারে গরমে তেলে ডুবাই্যা উঠানের নাম না করলে এমুন খোঁচা খাইতেই হইবো। এই চামুচমিয়া চুপ করে আছে তারও কারণ আছে। তারে তো কেউ পেরেশান করেনা। সুন্দর করে ঘষামান্জা করে ঝকঝকে করে রাখে। চামুচ মাথা নেড়ে অভিযোগ করলে তারেও নাকি প্রায়ই তরকারিতে ডুবাইয়া রাখে।একেতে তেলাক্ত খাবার তারউপর সেখানে ডুব দিয়া থাকতে থাকতে তার মুখে নাকি ছোট ছোট পাহাড় সাইজের ব্রণ হয়েছে। সে তার ব্রণের চিন্তায় বেশী বাতচিৎ করতে রাজী হলো না :-*

৬.বেলন-পিঁড়ি আর তাওয়া: বেলন পিঁড়ি তো ম্যালা খুশী । তারা ভাবতো ছোড আফায় আইলস্যা...রুটি বানাইতে চায়না। অনেকদিন পরে সেদিন যখন রুটি বানানোর সময় কাজে লাগাইছে খুশীতে তাদের চোখে পানি চলে আসছে ...এত সুখ ও বুঝি তাদের ভাগ্যে লেখা ছিলো। কিন্তু আফায় ভালো রুটি বানাইতে পারেনা। রুটি চান্দের মতন গোল হয়নাই আর চামড়ার মতন শক্ত রুটি দেখে আফা সব দোষ তাদের দিলো। দুঃখে তারা দুইজনে গলা ধরে অনেক কাঁনছে। বেলন তো আরো কইলো বাসার কেডা নাকি পিঠ চুলকানির সময় বেলন দিয়া পিঠ চুলকাইছে। ছিঃ ছিঃ মান সম্মান আর রইলো না। তাওয়াকে কিছু বলার সুযোগ দিলে সে ভাব নিয়া শুধু একটা কথাই বললো " দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসের" /:)

৭.বটি: এই বাসার আফায় ম্যালা লাইক করে আমারে। তার প্রিয় অস্ত্র নাকি বটি...লোকমুখে শুনি সে অনেকরেই থ্রেট দিয়া বলছে" ভোঁতা বটি দিয়া জবাই করবো"।এই জন্যই দেখি আমারে সবসময় ভোঁতা বানাইয়া রাখে খালি মাংস কাটার সময় ধার দিয়া নেয়। যাইহোক আফার প্রিয় অস্ত্র হিসেবে আমার নাম শুনে ম্যালা আনন্দে আছি B-)

৮.পানির জগ ও গ্লাস : পানির জগের মনে ম্যালা অভিমান কারণ বাসায় ফিল্টার আনার পরে তারে কেউ আর খুঁজে না। খালি বাসায় মেহমান আসলে তারে শেলফের কোনা থেকে বের করে নিয়া আসে। আর গ্লাস তো আরেককাঠি এগিয়ে কারণ তারে বাদ দিয়া সবাইরে সে মিনারেল ওয়াটারের বোতলে ভরে পানি খাইতে দেখে। আরে বাবা গ্লাসে ভরে পানি না খাইলে ক্যামনে পানির তেষ্ঠা মিটবো তোগো। যত্তসব বেকুবের দল X(

৯.থালাবাটি: থালাবাটি বললো এমনিতে তাদের তেমন কোন অভিযোগ নাই খালি কষ্ট পায় বাসায় মেহমান আসলে শ্রেনীবৈষম্যের শিকার হলে। সেটা কেমন জানতে চাইলো তারা জানালো এমনিতে সবসময় খাওয়ার সময় মেলামাইনের থালাবাটি ব্যবহার করে কিন্তু মেহমান আসলে তাদের কোনায় ফেলে রেখে সিরামিক আর কাঁচের থালাবাটির রে নিয়া দৌড়ায়। এটা তাদের ইগোতে লাগে। আরেকটা ব্যাপারে বিচার চাইলো প্রায়ই সবার হাত থেকে তাদের ফেলে দেওয়া হয়....তারা মেলামাইন নাজুক শরীর ব্যাথা লাগে এটা বুঝতে হবে :|

১০.গ্যাসের চুলা: গ্যাসের চুলারে কিছু বলতে দিতে চায় নাই তাও সে নাছোড়বান্দা কিছু বলবেই ।বলতে দেবার পর দেখি তার অভিযোগের শেষ নাই। সারাদিন চুলা জ্বালাইয়া রাখে,প্রায়ই তার গায়ের তেলের ছিটা পড়ে,ভাতের ফেনা আর চা পড়ে তার চেহারার বারোটা বাজছে। তার উপর শীতেরদিনের ওভার টাইম করতে হয়। সারাদিনের পর রাতের বেলায় ও সে সার্ভিস দেয়। তার নাকি এত জ্বালাতন আর সহ্য হয় না। সারাদিন জ্বলতে জ্বলতে তার শুধু মাইলসের ধিকি ধিক আগুন জ্বলে,বুকে নদী বইয়া চলে গানটাই গাইতে ভালো লাগে ;)

তাদের এতসব কুটনামি বদনামি আর সুখ দুঃখের আলাপের মাঝে কি জানি একটা কাজে রান্না ঘরে গিয়া লাইট অন করার সাথেই সাথেই সবাই চুপ....যারে বলে মুখে তালা দিয়া জবান বন কইরা রাখছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৪৪
৫৮টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সমসাময়িক চিন্তা ও পাশের দেশের অবস্থা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩৩

পাশের দেশের মি শুভেন্দু বাবু যেভাবে চিন্তা করেন, তাতে তাদের দৈনত্যাই প্রকাশ পায়! অথচ বহু বছর আগেই তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। যাই হোক, এই সবকিছুই থেমে যাবে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনধিকার চর্চা নয়, শান্তিরক্ষি ভারতে প্রয়োজন

লিখেছেন মোহাম্মদ সজল রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৫

বাংলাদেশে একজন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত এবং ইসকন সংগঠন থেকে বহিঃস্কৃত ধর্ম প্রচারক বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তার মুক্তির জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক শ্রেণীর জনগণ যেভাবে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×