বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে কার্যকর, আর সবচেয়ে বিষাক্ত অস্ত্রটি হলো—"ভারতীয় দালাল" তকমা। এই তকমাটি যেন এক জাদুর কাঠি—যার স্পর্শে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা মতাদর্শ রাতারাতি "শত্রু" হয়ে যায়!
১৯৭১-এ যারা মুক্তিযুদ্ধে লড়েছেন, পাকিস্তানি মিডিয়া তাদের বলেছে "ভারতের এজেন্ট"। ১৯৭৫-এ যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো, তারা দাবি করলো—"ভারতের দাসত্ব থেকে মুক্তি"। জিয়ার বিরোধীরা জিয়াকে বলেছে "ভারতের দালাল", খালেদ মোশাররফকে বলেছে "ভারতের দালাল", এরশাদ বলেছে সাত্তার সরকারকে "ভারতের তাবেদার"। আজকে সালাহউদ্দিন আহমেদ থেকে জেনারেল ওয়াকার—সবাই একই গালির শিকার!
মজার ব্যাপার হলো, এই তকমা লাগানোর জন্য কোনো প্রমাণ লাগে না, কোনো যুক্তি লাগে না। শুধু একটা ক্যাম্পেইন চালাও—"ইন্ডিয়ার দালাল, ইন্ডিয়ার দালাল!" আর দেখো, ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬.৫ কোটি মানুষই ভেড়ার মতো সেই স্লোগান দিতে শুরু করে! নিউজিল্যান্ডের ভেড়ারা যেমন হুইসেল শুনে দৌড়ায়, আমাদের রাজনীতির মেষপালকরাও তেমনই একটি ইশারায় জনগণকে ইচ্ছামতো ঘুরপাক খাওয়ায়!
কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই "ভারতীয় দালাল" তকমার পেছনের আসল উদ্দেশ্য কী?
উত্তরটা সহজ—সত্যকে ঢাকতে, দায়িত্ব এড়াতে, এবং জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে।
কারণ, যখন আপনি কাউকে "ভারতের দালাল" বলবেন, তখন তাকে মেরে ফেললেও মানুষ উল্লাস করবে! তার বিচার চাইবে না, তার বক্তব্য শুনবে না। এই তকমা এতটাই শক্তিশালী যে এটি কোনো ব্যক্তির পুরো ইতিহাস, সংগ্রাম, বা আদর্শকে মুহূর্তে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে!
আসল কথা হলো—যে সমাজে যুক্তি, প্রমাণ, এবং বিচার-বিশ্লেষণের চেয়ে "গালি" বেশি কার্যকর, সে সমাজ কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্র বা ন্যায়বিচার পাবে না। আজকে আপনি কাউকে "ভারতের দালাল" বলে গালি দিচ্ছেন, কালকে আপনার পিঠেও সেই তকমা সেঁটে দেওয়া হবে। কারণ, এই খেলা কোনো নীতির নয়—এটা ক্ষমতার খেলা।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার—
১. ভেড়া হয়ে থাকবেন, নাকি নিজের বুদ্ধি দিয়ে ভাববেন?
২. গালি শুনে হুইসেলের মতো দৌড়াবেন, নাকি সত্যের পক্ষে দাঁড়াবেন?
৩. ইতিহাসের সেই চক্রাকার বিভীষিকা থামাতে চান, নাকি আরও একবার "ভারতীয় দালাল" তকমার নতুন শিকার তৈরি করতে চান?
মনে রাখবেন, যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, ইতিহাস তাদের বারবার একই গর্তে ফেলে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



