somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার হেমন্ত গাঁথাঃ

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার হেমন্ত গাঁথাঃ
হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই আমাদের পরিচিত, অনেক স্মৃতির অনেক ভালবাসার।হারিয়ে যাওয়ার এই লিস্টে যেমন আছে সামাজিক মুল্যবোধের মত অমোচনীয় রীতিনীতি তেমনি আছে আমাদের তীব্র অনুভূতির জায়গা প্রকৃতির অপরুপ রুপ।আমার ছোটবেলাটার বড় হয়ে যাবার হাহাকার কেও ছাপিয়ে আজকাল আমার কানে বাজে হেমন্তকালের মৃত্যু ঘন্টা।
হেমন্ত আমার সেই ছোট্টবেলার আপনজন ,আমার প্রিয় ঋতু রচনা লিখতে গিয়ে খুব মন চাইত একবার হেমন্তকালের কথা লিখি, সবাই তখন গ্রীষ্মের আম কাঠাল , শীতের পিঠা পুলি আর খেজুরের রস , বর্ষার কদম আর ভরা নদী খাল বিল আর শরৎের সাদা মেঘের ভেলা নিয়ে ব্যস্ত।নিতান্তই অবহেলায় বছরের কোন এক কোনায় পড়ে থাকে অলক্ষ্যে অনাদরে।সেই অবহেলায় কিনা জানি না আজ সত্যি সত্যি হেমন্তের অনপস্থিতি বড্ড চোখে পড়ে।
হেমন্তকালের প্রকৃতি আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা ভাদ্র মাসের মত বৃষ্টি হবার কথা নয়, কারো মন মন্দির স্যাতস্যাতে থাকার কথা নয়। এ সময়ে ফসলে ফসলে ছড়িয়ে থাকে মাঠ-ঘাট-বন বাদাড়। সৃষ্টির সকল জীবের মাঝে মাঝে দেখা মেলে চঞ্চলতা, সখা-সখিদের কলকাকলীতে মুখরিত থাকে আকাশ-বাতাস-প্রান্তর।শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মতো হেমন্ত তীব্র, প্রখর অথবা মুখরা নয় তাই হেমন্তকে আলাদা করে দেখা যায় না, ম্লান, ধুসরিত আর অস্পষ্ট হেমন্তকাল শুধু অনুভবের।বসন্তের তীব্র ফুলের গন্ধ , পাখির গান অথবা গ্রীষ্মের খরতাপ, বৈশাখি ঝড় কিংবা বর্ষার ভরা নদী নালা, ঘন ঘোর বরষায় দিনব্যাপী ঝমঝম বৃষ্টির মত করে হেমন্ত জানান দেয় না আমি আছি ,আমি এসেছি।হেমন্তের এই অন্তর্মুখীতা, এই মৌনতা আমাকে আলাদা করে নাড়া দেয়।আজো নস্টালজিক হয়ে পড়ি , স্মৃতিরা কাতর করে ফেলে আমায় হেমন্তের সেই শান্ত, শব্দ হীন, নীরব দিগন্ত প্রসারিত অব্যক্ত রুপের কথা স্মরন করিয়ে দিয়ে।
হেমন্তের ব্যাপ্তিকাল সঠিকক ভাবে নিরুপন করা যায় না , কার্তিক - অগ্রাহায়ন এই দুই মাস হেমন্তকাল ধরা হলেও হেমন্ত শরৎ থেকে আলাদা নয় কিংবা শীত থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।হেমন্ত নিরবে সরব থেকেও উদাসীন, নিমগ্ন নিজেকে নিয়েই।হেমন্ত একই সাথে সকালে শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় মুক্তোর মেলা আবার সোনালি পাকা ধানের মাঠের মউ মউ গন্ধ হয়ে ধরা দেয় কবির চোখে। নববধূর নতুন নোলকের গায়ে ঝিকিমিকি করা সোনা রোদের ঝিলিক প্রকৃতিতে, মৃদু হিমস্পর্শ হৃদয়ে শিহরন জাগায়। শিশির স্নাত সকাল, কাচাসোনা রোদ মাখা স্নিগ্ধসৌম্য দুপুর, পাখির কলকাকলি ভরা ভেজা সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জোস্না ডুবানো আলোকিত রাত হেমন্তকালকে যেন আরো রহস্যময় করে তোলে সবার চোখে, প্রকৃতিতে এনে দেয় আরেক ভিন্নমাত্রা।
হেমন্তের এই মৌনতাকে ছাপিয়ে বাংলার মানুষের জীবনে নবান্ন প্রবেশ করে জাগরনের গান হয়ে , হেমন্তের একমাত্র সরব উপস্থিতি নবান্ন জানান দেয় হেমন্তের কথা ,মানুষের জীবনে এনে দেয় সার্বজনীন লৌকিক উৎসবের ছোয়া। নবান্ন মানেই নতুন অন্ন , গ্রামের মাঠে মাঠে চলে ধান কাটার ধুম, হেমন্তে এই ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।সাধারনত অগ্রাহায়ন মাসে নতুন আমন ধান কেটে সেই ধানের চাল দিয়ে রান্না করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই নবান্ন উৎসব। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। একদিন হয়তো এইগুলো গ্রাম্য রুপকথা হিসেবে টিম টিম করে জেগে থাকবে লোকগাথা আর বইয়ের পাতায়।
নতুন ফসল ঘরে তুলে নতুন বছর শুরু করার নিমিত্তেই বুঝি এক সময় বাঙলা বছর শুরু হত হেমন্ত কাল দিয়ে, সম্রাট আকবর ও তার প্রবর্তিত বাঙলা সাল শুরু করেছিলেন অগ্রাহায়ন দিয়ে।
সকালের সোনারঙা রোদ বাড়িয়ে দেয় বাংলার পথঘাট আর মাঠের উজ্জ্বলতা , গ্রামের মাঠে যতদূর চোখ যায়, দেখা মেলে সর্ষে ফুল ৷ মনে হয়, হঠাৎ হঠাৎ ভ্রম হয় আয়েশি প্রকৃতি যেন সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে হলুদ বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিষ্টি রোদ পোহাচ্ছে । চোখে পড়ে লাউয়ের মাচায় যৌবনবতী তরুণীর মতো লিকলিকে প্রতিটি ডগার খিলখিল হাসি, হাওড়-বিলে অতিথি পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দও কানে আসে।এটা হচ্ছে হেমন্তে বিদায়ের খানিক আগের চিত্র , আমার হলো সারা আর তোমার শুরু গাইতে গাইতে শীতকে আহবান করে আমার প্রিয় আত্মমগ্ন হেমন্ত।
কুয়াশার ধূসর চাদর গায়ে হুট করে এক ভোরে আমাদের দোরে হানা দেয় কমনীয় শীত, শিশিরে ভিজে লাল টকটকে হয়ে ওঠে বাসার ছাদের টবের লাল গোলাপটাও ৷বিদায় নিয়ে নেয় হেমন্ত।।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×