somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুলের ফুলঝুরি

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধানমন্ডি থেকে প্রতিদিন সকালে অফিসে আসার সময় আমাকে খামারবাড়ি অতিক্রম করে আসতে হয়, এতদিন হইচই আর জ্যামে ঠাসা ঠাসি জায়াগাটা পার হবার সময় বেশিরবাগ দিনই হয়ত আধঘুমে থাকতাম বিরক্তি নিয়ে কিন্তু আজকাল জায়গাটা যেন প্রানকাড়া মোহনীয় রূপ ধারন করেছে। জায়গাটায় পৌঁছালে অন্যরকম ভাল লাগা আর প্রশান্তিতে ভরে যায়। খামার বাড়ি থেকে ফার্মগেটের বড় সড়ক পর্যন্ত পুরোটা রাস্তা জুড়ে শুধু ফুল আর ফুল, হরেক রকমের হরেক রঙয়ের গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস নাম না জানা অর্কিড, রজনিগন্ধ্যা ইত্যাদি ফুল যেন নেশা ধরিয়ে দেয়।
তবে ঢাকাবাসিদের কাছে ফুলের কদর বরাবরই অনেক বেশী, মোগল আমলের নবাব থেকে শুরু করে জমিদার অভিজাত শ্রেণীর কাছে ফুলের সমাদর প্রায় কিংবদন্তীতুল্য। সমগ্র ঢাকা শহর জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য ফুল বাগিচা। এইসব ফুল বাগিচাগুলি এখন আর টিকে না থাকলে বাগিচাগুলোর নাম বুকে ধারন করে কালের সাক্ষী হয়ে আজো বেঁচে আছে ফুল বাগিচা গুলোকে ঘিরে গড়ে উঠা অসংখ্য এলাকা/মহল্লা। যেমন : শাহবাগ, লালবাগ, দিলকুশা- সেই বিখ্যাত দিলকুশা গার্ডেন, হাজারীবাগ, মোমিনবাগ, বাগে হসেনুদ্দিন, শান্তিবাগ, নবাব বাগিচা, বাগে মুসা, চামেলীবাগ, পরীবাগ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এইসব বাগান পরিচর্যা করার জন্য সরকার, আমির উমরারা গড়ে তুলেছিল বিশাল মালী সমাজ। এখানে বলে রাখা ভালো যে ঢাকা শহরের ঐতিহ্য অনুসারে কোন এলাকার নাম অই এলাকা যে জন্য বিখ্যাত সেই অনুসারে হয়ে থাকে যেটা আমরা ফুলবাগিচার নামানুসারে এলাকার নামকরনে দেখেছি। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন একটি এলাকা গড়ে উঠা কিংবা নাম নির্ধারণ করা হত ওই এলাকায় বসবাসকারী অধিবাসীদের পেশা অনুযায়ী। ঢাকা শহরের বিখ্যাতসব ফুল বাগিচাগুলোর পরিচর্যায় নিয়োজিত বিশাল মালী সমাজের বসবাসের জন্য গড়ে উঠেছিল মগবাজার সংলগ্ন মালিটোলা এবং অদুরেই মালিবাগ। ফুলবাগিচার এত ছড়াছড়ি ছিল যে মালিদের পাশাপাশি "মালাকার" নামে আরেকটি পেশাজীবী সমাজ গড়ে উঠেছিল , তাদের নামে মালাকার টোলা নামে একটা এলাকা ও গড়ে উঠেছিল। সেইসব মালাকারদের কাজ ছিল ফুলের মালা, গহনা, সেহরা প্রভৃতি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করত। সেই সময় থেকেই ঢাকাবাসীরা বিয়ে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুল ব্যবহার করত আর হিন্দু সম্প্রদায় তাদের পুজো পার্বণে এইসব মালাকারদের কাছ থেকে তাজা ফুল, ফুলের মালা সংগ্রহ করত। এইসব ফুল বাজারের মধ্যে বিখ্যাত ছিল ফুলবাড়িয়া, আরেকটি ফুলের বাজার এখনো ধুকে ধুকে টিকে আছে বাবুবাজার ফাঁড়ির কাছে যা কুমোরটুলির অভিযাত্রী বাবুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল।
সেইসব ফুল বাগিচাগুলো ও নাই, নাই ফুলের বাজার গুলো শুধু শাহবাগটাই টিকে আছে ফুলের বাজার হিসেবে যদিও বাগিচাটা আর নেই। তবে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ঢাকা শহরে আবার ফুলের জয় জয়কার, বড় বড় রাস্তার পাশে জমকালো ফুলের দোকান। বিভিন্ন অনুষ্ঠান গুলোতে ফুলের ব্যবহার ও বেড়েছে। সেই বড় বড় বাগিচাগুলো আর ফিরে পাওয়া না গেলেও হরেক রকম আর হরেক রঙের ফুলে ছেয়ে যাবে প্রতিটা অলিগলি আর রাজপথ, সৌন্দর্য আর সুগন্ধে নাড়া দিবে প্রতিটা ইট পাথরের প্রাণ, প্রত্যাশা রইলো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×