ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে শব্দটি এসেছে লাতিন ওয়ার্ড ভ্যালোর (ঠঅখঙজ) থেকে, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ (ঈঙটজঅএঊ) বা সাহসী। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম থেকেই এ ভ্যালেন্টাইনস ডে শব্দটি এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই ভ্যালেন্টাইন? কোনো বিশেষ একজন নয়। তার মধ্যে একজন হলেন 'ভ্যালেন্টাইন রোম'। রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস মনে করতেন বিবাহিত, পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ সৈনিকের চেয়ে অবিবাহিত ও শৃঙ্খলমুক্ত যুবকরা সৈনিক হিসেবে বেশি পারদর্শী হয়। তাই বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল যুবকদের জন্য। ভ্যালেন্টাইন গোপনে গির্জায় প্রেমিক যুবকদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সাহায্য করতেন। বলা হয়ে থাকে, এই ভ্যালেন্টাইনই লিখেছিলেন প্রথম ভ্যালেন্টাইন নোট। জেলে থাকা অবস্থায় পড়েছিলেন জেলারের কন্যার প্রেমে। ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর অর্থাৎ তাকে মাটিতে পুঁতে রাখার আগে তিনি তার প্রেমিকাকে চিঠি লিখে গিয়েছিলেন এবং যেখানে স্বাক্ষর করেছিলেন, 'ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন' বা 'ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন' বলে। আজ পর্যন্ত চলছে এ প্রচলন। আরও কয়েকজন ভ্যালেন্টাইন একই তারিখে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সমাধিস্থ হয়েছিলেন।
অনেকেই মনে করেন ভ্যালেন্টাইনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতেই অর্থাৎ ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইনস দিবস বা ভালোবাসা দিবস প্রথম উদযাপিত হয়। রোমানরা তখন ফেব্রুয়ারি মাসে 'লুপারসিলিয়া', বিশেষ করে ১৫ ফেব্রুয়ারি 'উর্বরতা ও পরিশুদ্ধতা'র জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করত। তাই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এটি গির্জায় উদযাপন শুরু করলেও ৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে পোপ জিলাসিয়াস, খ্রিস্টান ও রোমান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ১৪ ফেব্রুয়ারিকে 'ভ্যালেনটাইনস ডে' হিসেবে আখ্যা দেন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রচলিত অনুষ্ঠানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে তখন প্রচলিত ছিল যে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পাখিরা তাদের সঙ্গী নির্বাচন করে, তাই ১৪ ফেব্রুয়ারিই হবে 'ভালোবাসা দিবস'। এভাবেই শুরু। কোথায়, কখন, কীভাবে, কেন শুরু হয়েছিল এসব না ভেবে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি পরিচিতি পেল ভালোবাসার দিন হিসেবে।
আমাদের সংস্কৃতিতেও সেই আবহমানকাল ধরে ফাল্গুন মাসকে ভালোবাসার মাস বলা হয়। ফাল্গুন এলেই আমরা গাই 'ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে'। মেতে উঠি বসন্ত উৎসবে। সঙ্গে সঙ্গে ১৯৮৮ সাল থেকে আমাদের দেশেও পালিত হচ্ছে 'ভ্যালেন্টাইনস ডে' বা 'বিশ্ব ভালোবাসা দিবস'। আজ সারাবিশ্বেই পালিত হচ্ছে এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে এবং যথারীতি নতুনের পথে থাকে সমালোচনার কাঁটা বিছানো। এমনকি মানুষ যখন প্রথম লিখতে শুরু করল, প্লেটোর মতো দার্শনিক বিরোধিতা করেছিলেন মানুষের স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কায়। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে ভালোবাসা দিবসকেও বিধর্মীয় বা অপসংস্কৃতি বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তা দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ শুধু নতুনের চির পুরনো পথচলা।
আমি শুধু একটি কথাই বলব, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি-কাটাকাটির অস্থিরতায় ভরে গেছে এ পৃথিবী। অন্যের জীবন এমনকি নিজের জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। বিশ্বায়নের এ যুগে নিরবচ্ছিন্ন থাকা সম্ভব নয়। সবকিছুরই ছায়া এসে পড়ে আমাদের জীবনে। প্রভাবিত করে আমাদের আমাদের নতুন প্রজন্মকে। আর এমন অবক্ষয়ের যুগে কেউ যদি ভালোবাসার বাণী নিয়ে আসে তা গ্রহণ করতে আমাদের সংশয় কেন?
সৌজনে সমকালের সেলিমা তাসনীম ছন্দা..........
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৯:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




