২০০৯ সালের তামিল মুভি আধাভান(Aadhavan)-এর অফিসিয়াল রিমেক মুভি হচ্ছে "শিকারি (Shikari)" ।এই 'Aadhavan' আবার ১৯৯০ সালের মালায়ালাম মুভি "His Highness Abdullah"র রিমেক ছিল ।
"হারাবো তোকে" গানটা রিলিজ হওয়ার পর থেকে যতবার মুভিটার নাম মুখে আনতে হয়েছে- প্রথমেই বেরিয়ে গেছে - হারাবো তোকে !খানিক বাদে চিন্তা-ফিকির করে মনে করে পেরেছি "শিকারি"টাইটেলটা

কাহিণী সংক্ষেপঃ
ছোটবেলা থেকেই জজ বাবার অবাধ্য ছেলে রঘু ওরফে রাঘব ।ঘটনাচক্রে একদিন বাবার হাতেই গুলি করে পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে ।এবার বন্ধুর মাকে খুন করে শুরু হয় তার কিলিং মিশন! সেখান থেকে পালিয়ে এসে পরে বাংলাদেশে ।হয়ে ওঠে সুলতান ।
নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে সুলতান ।টার্গেট কিলিংয়ে যার তুল্য আর কেউ নেই ।
এসব মুভির মাঝের ঘটনা ।শুরুটা আরো একশনে ভরপুর ।প্রথমেই এক পুরোহিতকে মারার মিশন আসে ।এরপর শহরের বিখ্যাত এক জজকে শ্যূট আউট করার অফার পায় সুলতান ।তাকে শ্যূট করতে গিয়ে নিজের বাবাকে চিনে ফেলেন সুলতান ।শুরু হয় তার অন্যরকম যাত্রা- এবার পিতাকে বাঁচানোর জন্য অভিনব কায়দায় জজের বাড়িতে বাবুর্চি হিসেবে আশ্রয় নেয় ।এগুতে থাকে মুভির কাহিণী ।লোক দেখানো একের পর এক মিস টার্গেটে মেতে ওঠে সুলতান ।।এদিকে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আসে ছোটবেলার রঘুর পরিচয় ।নায়িকার কাছেই সবার আগে ধরা দেয় সুলতান ।এরপর দাদি.....। বাবার নিকট প্রচন্ড ঘৃণীত রাঘব তার আসল পরিচয় প্রকাশ করতে পারে না পিতার কাছে ।চলতে থাকে মুভি ।এগুতে থাকে নায়ক-নায়িকার প্রেম ।বাড়তে থাকে কাহিণীর গভীরতা ।।
একশন ধর্মী সিনেমাটিতে সর্বপ্রথম উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে- এর অভিনয় শিল্পীগণ ।।একগাদা অভিঞ্জ অভিনয় শিল্পী এবং মুভি মেকারদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সুন্দর কিছুরই জন্ম দিয়েছে ।
সাকিব-শ্রাবন্তী জুটি নিয়ে আলাদা করে না বললেই নয় ।এই প্রথম দুজনে জুটি করলেও তাদের ভিতরের বোঝাপড়া ছিলো অসাধারণ ।শ্রাবন্তীর গ্লামার সাকিবের বিপরীতে ফুটে উঠেছে বলেই এই একশন মুভিতে রোমাঞ্চকর অনুভূতি সত্যিই পুলকিত করে ।দুই জন দুজনের জায়গায় ছিল একদম পারফেক্ট ।এই মুহুর্তে একে সমগ্র বাংলার পারফেক্ট জুটিও বলাও যেতে পারে!!

সংগীত/মিউজিকঃ
যেকোন মুভির বাণিজ্যিক সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করে মুভি রিলিজ হওয়ার আগে রিলিজ হওয়া মুভির গান গুলোর উপর ।Indradeep Das Gupto-এর মিউজিক পরিবেশনায় সেক্ষেত্রে শিকারিকে সফলই বলবো আমি ।মুভিটির বাণিজ্যিক দিকে আমি যাচ্ছি না তবুও এতটুকু বলতেই পারি- এর গান গুলো প্রচুর পরিমাণ দর্শক টেনেছে ।ব্যক্তিগত ভাবে আমি সাকিব বিদ্বেষী(ঠিক তা নয়!) "হারাবো তোকে" গানটা দেখেই শিকারির সাকিবের ফ্যান হয়ে যাই

কমেডিঃ
একশন মুভিতে এই জিনিসটা পুরোটাই নির্ভর করে কমেডিয়ান তথা অভিনয় শিল্পীর উপরে ।কলকাতার মুভিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ "খারাজ মুখার্জী" এখানে সেই জায়গাটা খুব ভাল করেই পুরন করেছে মনে করি ।সঙ্গে নায়িকার হবু বর হিসেবে লন্ডন হতে আগত কমেডিয়ান সুব্রত বড়ুয়ার অবদান ছিল চোখে পড়ার মত । রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে তার গীটারের কারুকাজ সেটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে
একশন/ফাইটিং-
ইন্ডিয়ার বিভিন্ন মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত মুখ ফাইট মাষ্টার "রাজেস কান্নান"এর পরিচালনায় মুভিটির একশন ছিল বিশেষ কিছু ।আরেক ভয়ঙ্কর গ্লামারার ভিলেন রাহুল দেব এর ভূমিকা এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ।আর সাকিব খানের একশন ,ফাইটিং ছিল বিশেষ কিছু ।এই লুকে সাকিব যে কতটা অসাধারণ হতে পারে শিকারি না দেখলে তা বিশ্বাস করা দায়!
অন্যকথাঃ
জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং ইসকে মুভিজের ব্যানারে জাকির হোসেন ,জয়দেব মুখার্জির পরিচালনায় আব্দুল আজীজ ,হিমাংসু ধানুকার পরিবেশনা "শিকারি" মুভিটা আসলেই বিশেষ কিছু । ৫লক্ষ ৮০হাজার বাজেটের মুভিটি ঈদের দিন থেকে আয় করেছে ৪লক্ষ ৭০হাজার ডলার ।এখনো ওপার বাংলায় মুক্তি মেলেনি এর ।আগামী ১২ আগষ্ট মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে ।।
কিছু সমালোচনাঃ
কোন মুভির সমালোচনা করার নূন্যতম যোগ্যতা আমার নেই ।তবুও যেহেতু মুভি রিভিউ লিখছি- কিছু সমালোচনা তো করতেই হয়
প্রসঙ্গতঃ এই অংশের পুরোটা জুরেই রয়েছে আমার/আমাদের আবেগ!
১. বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে হলেও আমাদের অভিনয় শিল্পীর ব্যবহার এখানে মাত্র ২ জন!! মূল চরিত্র সাকিব খান এবং পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে অভিনীত অমিট হাসান ছাড়া বাকি সব অভিনয় শিল্পীই ছিলেন ওপার বাংলার ।।
২. দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মুভির ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখি- এর কিছু অংশের চিত্রায়ন উভয় দেশেই হয়ে থাকে ।কিন্তু এটিতে মাত্র ১০ সেকেন্ড মত সময় মাত্র চিত্রায়ন হয়েছে বাংলাদেশে ।বাকি সম্পূর্ণ চিত্রায়নের প্রেক্ষাপট "ভারত"!এই অসংগতি চোখে ভেসে ওঠে ।
৩. মুভির সবচেয়ে ভাললাগার অংশ হচ্ছে এর গানগুলো ।অথচ সেখানে একজন আমাদের দেশীয় সিঙ্গার নেই!! এটা মেনে নিতে কষ্টই হয় বটে ।Jaaz কর্তৃপক্ষ এখানে ভূমিকা রাখতে পারত ।"আর কোন কথা না হবে" টাইটেলের গানটা অরিজিত্ সিং থেকেও আমাদের হৃদয় খানের কণ্ঠে আরো বেশি ভাল হতো মনে করি ।
এই আবেগীয় অংশ বাদ দিলে পুরো মুভিটাকে মার্ক দিতে হলে আমি ৯০ ভাগ মার্কই দিচ্ছি !!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


