আটশো তলার বিশাল বাড়িটা একদম অন্ধকার হয়ে থাকে রাতের এই শেষ প্রহরে.. শুধুমাত্র ছয়শো ছেষট্টি তলায় আলো জ্বলতে থাকে সারা রাত ধরে। দিনরাত প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই নিজের বাড়িতে বসে গবেষণা করেন ডক্টর ডি.. ডি ফর ডেভিল! তিনি যে ডেভিল নামের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী এর প্রমান পাওয়া যায় তার চেহারায়.. ডক্টর ডি দেখতে সত্যিই সাক্ষাত্ শয়তান! তবে একটা ব্যাপার স্বীকার করতেই হবে, বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে তিনি অপরাজেয়.. আজ পর্যন্ত তার আই কিউ রেকর্ড কেউ ভাঙ্গতে পারেনি। প্রচলিত আছে যে, ডক্টর ডি এর আই কিউ এক হাজার সাধারন মানুষের আই কিউ এর যোগফলের সমান! তবে এবারের প্রোজেক্টের শুরু থেকেই কেন জানি বারবার হোচট খেতে হচ্ছে তাকে। মনটা অসম্ভব বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে। তার এই প্রজেক্ট সফল হলে পৃথিবী উন্নয়নের শীর্ষস্তরে চলে যাবে.. এটা জানা সত্ত্বেও তার চাহিদা মেটাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সরকার। তাদের কথা হলো এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে। কি অদ্ভূত কথা! আরে বাবা.. বৃহত্ স্বার্থে ক্ষুদ্র কিছু তো বিসর্জন দিতেই হবে।বিরক্তিতে চোখ কুঁচকে ফেললেন ডক্টর ডি। আচমকা অন্য পথে বইতে শুরু করলো তার চিন্তাধারা.. অন্য কারো সাহায্য লাগবে কেন, সে নিজেই তো এসব করতে পারেন। এমন কিছু তো না, মাত্র নয়শো জন মানুষ.. যাদের জীবনের বিনিময়ে পৃথিবী পেতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেটওয়ার্ক! প্রশ্নটা কঠিন, কে তাকে এতজন মানুষ সরবরাহ করবে? উত্তরটা সহজ, ইকারাস.. তার একান্ত বাধ্যগত সহকারী!
খুব ভোরবেলায় কারো ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যেতেই চোখ মেললো ইকারাস.. নাহ্! কোন সুন্দরীর মায়াবী চেহারা নয়, ডক্টর ডেভিলের বিকৃত চেহারার ত্রিমাত্রিক অবয়ব দেখে সকালটা শুরু হলো তার! ইকারাস একদমই চায়নি এরকম ভয়াবহ লোকের সহকারী হতে। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না তার। ডেভিলের সহকারী হিসেবে চোখ বুজে দুই বছর কাটিয়ে দিতে পারলেই হলো.. তারপর থেকে শুরু হবে একজন স্বতন্ত্র বিজ্ঞানী হিসেবে তার নতুন জীবন। মনে মনে গালি দিলেও মধুর হেসে ডক্টরকে শুভ সকাল বলতে হলো তার! ইকারাসের কথার প্রত্যুত্তরে ডক্টর ডি খেকিয়ে উঠে বললেন, কথা কম বলে যা বলছি শোনো.. তুমি তো জানো আমার গবেষণা এখন শেষ পর্যায়ে, মাত্র নয়শো জন মানুষ পেলেই কাজটা সফল হতো। যেহেতু সরকার আমাকে এতে সাহায্য করবে না.. তাই তোমাকেই কাজটা করতে হবে। এর জন্য যেখানে যত টাকা ঢালতে হবে তা তুমি পাবে.. প্রয়োজনে দুহাতে টাকা উড়াও! তবে তিন দিনের মধ্যে যেখান থেকে পারো আমাকে মানুষগুলো এনে দেবে তুমি.. বুঝলে? ইকারাসের মাথা কাজ করছিলো না। অফুরন্ত টাকা পেলেই কি, তিন দিনে নয়শো মানুষ সংগ্রহ কি মুখের কথা! আর তাছাড়া এই মানুষদের নিয়ে ডক্টর ঠিক কি করতে চাইছেন? প্রশ্নটা তার মাথায় আসতেই যেন তা বুঝে ফেললেন ডক্টর ডি। বিকৃত হেসে বললেন, এতো ভাবছো কি নিয়ে ইকারাস.. কারো তো কোন ক্ষতিই হচ্ছে না, আমি শুধু ওদের নিচুমানের বুদ্ধিমত্তা একত্রিত করে ব্যবহার করবো। আর ইতস্তত না করে কাজে লেগে পড়ো। ডক্টর ডি চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যেতেই বিছানা থেকে নেমে পড়লো ইকারাস। আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো, গ্রীক দেবতার মত সুদর্শন এক যুবক.. শুধু একজোড়া ডানা নেই তার। ডানার কথা মনে হতেই আনমনে হাসলো ও.. ছোটবেলায় মা তাকে বলতো, ইকারাসের একজোড়া অদৃশ্য ডানা থাকে.. তারও আছে। যেদিন ও সত্যিকারের কোন ভালো কাজ করবে, সেদিন ঠিকই তার সেই একজোড়া ডানা দেখা যাবে! তবে এখন আর তা সম্ভব না, ডক্টর ডেভিলের সাথে কাজ করতে করতে হয়তোবা তার মাথায় শয়তানী শিং গজিয়ে যাবে একদিন! বেরিয়ে পড়লো সে। কেন জানি মনটা খুব অস্থির লাগছে তার।
বিশাল হলঘরে নয়শো জন সাধারন মানুষ.. কিছু বোঝার আগেই মুহূর্তে তাদের অচেতন করা হয়েছে। বাইরে তখন ইকারাস তর্কাতর্কি করছে ডক্টরের সাথে.. তিনি তো বলেছিলেন এদের কোন ক্ষতি হবে না। তাহলে তাদের অচেতন করার কারনটা কি? ডক্টর ডি অসম্ভব ব্যস্ত.. ছুটোছুটি করে সব যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করছেন। রেগে গেলেন ওর কথায়, আমি কি করতে চলেছি তা তুমি বুঝেও কেন বুঝতে চাইছো না ইকারাস? এতো বড় একটা প্রজেক্ট.. এই সামান্য কয়জন মানুষের বিসর্জন সেখানে কিছুই না। ওরা ওদের বুদ্ধির এক কানাকড়িও কাজে লাগাতে পারতো না, আমি কাজে লাগাচ্ছি এটাতো ওদের জন্য গৌরবের বিষয়! আর তাছাড়া ওদের অস্তিত্ব তো থাকবেই, দেহটা শুধু বাতিল হয়ে যাবে। ওরা অনন্তকাল বেঁচে থাকবে নেটওয়ার্কে। তাই আর ব্যাপারটা নিয়ে ভেবো না। তুমি বরং হলরুমে যেয়ে বাকি কাজ সেরে ফেলো। ইকারাস কোন কথা না বলে হলঘরে চলে গেলো। নয়শো জন অচেতন তরুন তরুনী.. নয়শো জীবন, নয়শো স্বপ্ন। বুকের ভেতরে হাহাকার করে উঠলো ইকারাসের। চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তার, এটা সে কিছুতেই হতে দিতে পারে না। এই প্রোজেক্ট ডক্টর ডেভিলের এত বছরের শ্রমের ফসল, তিনি কিছুতেই এটা বাতিল করবেন না। তাহলে সে কি করে বাঁচাবে এই নয়শো মানুষকে? আচমকা একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা মনে পড়ে গেলো তার, ডক্টর ডি এর আই কিউ এক হাজার সাধারন মানুষ
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮