somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিতু মেয়েটি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আসলাম সাহেব আমার ডেস্কের সামনে দাড়িয়ে বলল
-কি ব্যাপার। আজকে দুপুরের খাবার খাবেন না?
-না।
-কেন? শরির খারাপ নাকি?
-না ভাই। বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছি।
-আপনি খাবার নিয়ে এসেছেন!! আজকে হঠাত কি মনে করে খাবার নিয়ে এলেন?
-চাপে পরে।
-ভাবির চাপে নাকি?
-হ্যা ভাই। তার ধারনা বাইরের খাবার সাস্থের জন্য ভাল না।
-যাক। এবারে যদি কাজ হয়। আচ্ছা আমি বাইরে যাচ্ছি। আপনি খেয়ে নিন।
-আচ্ছা।

প্রতিদিন দুপুরের কাজ সেরে বাইরে যাই। দুপুরের খাবার খাওয়ার সাথে সাথে একটু ঘুরে আসাও হয়। কিন্তু আজ আর হল না।

খাবার বের করে টেবিলের উপর রাখলাম। আমার প্রিয় খাবার এর মধ্যে একটা খাবার এখানে আছে। খাবারটা রান্না করা বেশ ঝামেলা হলেও, আমার জন্য জেরিন রান্না করে পাঠিয়েছে।

খাবার খাওয়ার সময় প্রাইমারি স্কুলের কথা মনে পরে গেল। প্রাইমারি স্কুলে থাকতে এইরকম দুপুরের টিফিন খেতাম। বাড়িতে এসেই দুপুরের খাবার খাওয়া যেত। তবুও শখ করে টিফিন নিয়ে স্কুলে খেতাম। সেদিন হয়ত শখ করে আর এখন চাপে পরে।

জেরিনের ফোন পেয়ে খাওয়া বন্ধ করে বাম হাত দিয়ে ফোন রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম। জেরিন বলল
-কি করছ?
-খেতে বসেছি।
-এখন!! এত দেরিতে কেন? এত দেরিতে খেলে শরির অসুস্থ হব তো....

জেরিন বলেই যাচ্ছিল, আর আমি শুনে যাচ্ছিলাম। মেয়ে মানুষ এত জ্ঞানী হতে চায় কেন কে জানে। জেরিনের কথা শুনলে মনেহয় সে খুব জ্ঞ্যানী হয়েছে। তাই আমাকে বাচ্চা ছেলে ভেবে তার জ্ঞ্যান দিতে থাকে।

জেরিনের বলা শেষ হলে আমি বললাম
-হুম। বুঝলাম।
-বুঝতে পারলেই ভাল। এখন রাখি।

জেরিনের ফোন হঠাত করেই চলে আসে। কখনও আমাকে চমকে দেয় কখনও আবার রাগের কারন হয়। আমি শুধু মাঝেমাঝে তার কথা শুনে যাই, কিছু বলি না।

খাওয়াদাওয়া করে ফাইলগুলো খুলে দেখছিলাম। তেমন কাজ নেই আবার কাজ আছেও। বেসরকারি কাজগুলোতে এই এক সমস্যা। কাজ না থাকলেও কাজ তৈরি হতে সময় লাগে না।

★★

-আসতে পারি?
-হ্যা আসুন।
মাথা তুলে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম। আমার সামনে আমার বস দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে বসতে বললাম।

আমার বস কেমন যেন। এই মানুষটা একটু রসিক টাইপের। বস হলেও আমাদের সাথে বন্ধুর মত মিশে যায়। মাঝেমাঝে এইরকম চমকে দেয়। আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম
-আচ্ছা আপনি আমার রুমে ঢুকতেও অনুমতি নেন কেন?
সে এক গাল হেসে বলেছিল
-আরেহ বস হয়েছি তো কি হয়েছে কারো রুমে ঢুকতে অনুমতি নেওয়া উচিৎ।
আমি আর কথা বাড়াইনি।

আমি বসের দিকে তাকিয়ে বললাম
-স্যার কোন জরুরি ব্যাপার নাকি?
-তেমন জরুরি না। তুমি কি এখন ফ্রি আছ?
-হ্যা। এখন ফ্রি আছি।
-এই ফাইলটা নাও। একবার দেখে নেওয়ার পরে আমাদের উত্তরা সেক্টরে দেখিয়ে এন।
-আজকেই করতে হবে?
-কালকে হলেও সমস্যা নাই।
-আচ্ছা।
-আচ্ছা। তাহলে আমি উঠি।

বস চলে যেতেই ফাইলটা হাতে নিলাম। কাজ না থাকার কারনে ফাইলটা দেখে নিলাম একবার। রিল্যক্স থাকা অবস্থায় এটাও এক ধরনের রিল্যক্স।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি বিকেল পাঁচটা বত্রিশ মিনিট বাজে। মনেহল একবার উত্তরা অফিসটাতে গিয়ে ঘুরেই আসি।

যেই ভাবা সেই কাজ। ছোটবেলা থেকেই আমার এই বদঅভ্যাস আছে। মাথার ভেতর কিছু ঘুরপাক খেলে সেটা নিয়েই মাতামাতি শুরু করে দেই।

উত্তরা অফিসে আসতে আসতে সন্ধ্যা লেগে গিয়েছে। আমি তাই ওসব না ভেবে অফিসের মধ্যে ঢুকে গেলাম।

কাজ করছিলাম এমন সময় জেরিনের ফোন। আমি ফোন ধরে বললাম
-কি হয়েছে?
-তুমি বাসায় আসবে কখন?
-আসতে একটু দেরি হবে।
-আমার খুব ভয় লাগছে তুমি তারাতারি আস। প্লিজ।
-কাজ শেষ হলেই চলে আসব। এখন ফোন রাখ।
-ফোন রাখব না। ফোনে তোমার কথা শুনলে আমার ভয় লাগবে না।
-আমিত কাজে ব্যাস্ত।
-সমস্যা নেই। তুমি তোমার পাশে ফোনটা রেখে দাও। তবে লাইন কেট না প্লিজ।
-আচ্ছা।

ফোন রেখে সিয়াম ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। সিয়াম ভাই বলল
-রাব্বি ভাই।কোন সমস্যা?
-না।
-ফোন না কেটেই রেখে দিলেন যে।
-আপনার ভাবির নাকি খুব ভয় লাগছে। তাই....
-আচ্ছা আপনি বাসায় চলে যান। আমিও বাসায় চলে যাই। নাহলে আপনার ভাবি চিন্তা করবে।

আমি মুচকি হাসি দিয়ে সিয়াম ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। সিয়াম ভাই একটু বউ পাগলা টাইপের
তাই তারাতারি চলে গেল।

★★

বাসায় এসে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই একটু চমকে গেলাম। সোফায় জেরিন গুটিসুটি মেরে বসে আছে। কাছে এগিয়ে গেলাম আমি।

সোফায় বসে জেরিনের মাথায় হাত রেখে বললাম
-কি হয়েছে?
জেরিন আমার দিকে তাকিয়ে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে কান্না শুরু করে দিল। আমি বললাম
-কি ব্যাপার? কাঁদছ কেন?
-আমি খুব ভয় পেয়েছি।
-আরে পাগলি ভয় পাও কেন? আমি আছিত।
-তুমি তারাতারি আসলে না কেন?
-আজকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল।
-এরপরে দেরি হলে আমার কাছে ফোন দিবে। ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলতে হবে। তুমি জানই তো এইসময় আমি ভয় পাই।

জেরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম খুব ভয় পেয়েছে। আমি তাই কিছু না বলে ওদিকে তাকিয়ে থাকলাম।

জেরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে এখনও মন খারাপ করেই আছে। আমি বললাম
-ঘুরতে যাবে?
জেরিন পুলকিত হয়ে বলল
-যাব।
-আচ্ছা কালকে যাব তাহলে।
-এখনই যেতে হবে। চল যাই।
-এখন না গেলে হয় না?
-এখন বলেছি এখন।

জেরিন খুশিমনে আমার সাথে বেড়িয়ে পরল। একটা রিক্সায় উঠে বসল আমার সাথে। রিক্সাওয়ালা বলল
-কোথায় যাবেন?
-সামনে যেতে থাকেন।

জেরিন এতক্ষন ভয় পেলেও এখন কিছুটা খুশি মনে হচ্ছে। তার মধ্যে ভয়ের রেশমাত্র নেই। আমার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে।

আমি জেরিনের দিকে সরে বসলাম। জেরিনকে হাতের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বললাম
-এই ভিতু। এখন ভয় লাগছে না?
-নাহ। এখন ভয় নেই। তুমি থাকলে ভয় দুরে চলে যায়।

আমি বুঝতে পারছি জেরিন কিছুটা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আমাকে বুঝতে দিতে চায় না সেটা। আমার সাথে ঘুরতে চাওয়ার এই পরিবেশ সে মিস করতে চায় না।

কেউ গহনা পেয়ে খুশি। কেউ শপিং করে খুশি। আর জেরিন আমার সাথে ঘুরতে পারলেই খুশি। আমাকে পাশে পেলেই খুশি।

আমি জেরিনের হাতের আঙ্গুলের মধ্যে আমার আঙ্গুলগুলো দিয়ে দিলাম। রাতের আলোতে ঘুরতে ভালই লাগছে। আমার যে এই ভিতু মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরতে ভাল লাগে সেটা কখনও বুঝানো হয় নি। কারন তখন মাথায় উঠে বসবে।

একটা গান আজ মনে পরছে "এই নিল জোসনায়, হারাব আজ দুজনায়। যেখানে অনেক সুখ পাওয়া যায়।"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×