somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোখের ভাষা কিছু বলে দেয়

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুখে ব্রাশ দিয়েই বাইরে এসে দাঁড়ালাম। ভাবখানা যেন আমি সব কাজের ব্যাপারে খুব মনোযোগী। ভাল করে দাত ব্রাশ করতে এখানে এসে দাড়িয়েছি। মুখে ব্রাশ লাগিয়ে দাতের সাথে ঘসতে থাকলাম।

কিছুক্ষন পরে সাদিয়া আসতেই মুখ থেকে ব্রাশ বের করে, আবার মুখে লাগিয়ে আবার মুখে দিলাম। মেয়েটা পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও আমার দিকে একবার তাকাল না!! মনেহয় কোচিং এ যাওয়ার সময় আশেপাশে তাকানো বারন আছে!!

আমি দাত ব্রাশ করতে করতে রুমে চলে এলাম। বাইরে দাত ব্রাশ করার কারন শেষ হয়েছে। বাইরে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন ধরে দাত ব্রাশ করার অভ্যাস আমার কোনদিন ছিল না। কিন্তু এই বাসায় এসে নিয়মটা তৈরি হয়েছে।

হাতমুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা সেরে খেতে পড়তে বসলাম। আমার পড়ার টেবিলটা জানালার সামনে। এখানে বসলে এই বাসায় কে আসল না আসল সব দেখা যায়। তাই খুঁজে খুঁজে আমি এই জায়গাই নিয়েছি।

কিছুক্ষণ পরে সাদিয়াকে আসতে দেখেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে জানালার কাছে তাকিয়ে থাকলাম। প্রেমে পরলে নাকি ছেলেরা বোকা হয়ে যায়। আর আমি হ্যবলার মত সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি।

ভার্সিটি যাওয়ার জন্য জামা প্যান্ট পরেও বসে আছি। কখন সাদিয়া আসবে এটা দেখার জন্য বসে থাকি। সাদিয়া গেলে তারদিকে তাকিয়ে থাকি। এছাড়া কিছু বলা বা করার মত সাহস হয়ে উঠেনি।

কিছুক্ষণ পরে সাদিয়াকে বের হতে দেখে আমিও বের হলাম। তার পিছু পিছু যাব নাকি সেটা ভাবি। সবশেষে আর যাওয়া হয়না। না জানি কি ভেবে বসে।

★★

রুম থেকে বেড়িয়ে সাদিয়াকে দেখলাম বাইরে যাচ্ছে। এই দুপুরে হয়ত কোচিং এ যাচ্ছে। আমিও বাইরে যাওয়ার জন্য বের হলাম।

-আরে মামা কি খবর?
পাশে তাকিয়ে দেখি বাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। সাদিয়া বাড়িওয়ালার ভাগ্নে। আগে বাড়িওয়ালাকে চাচা বলতাম। কিন্তু যেদিন জেনেছি তার এমন সুন্দরি ভাগ্নে আছে। সেদিন থেকে মামা ডাকি। মামা ডাক জাতিয় ডাক হলেও বাড়িওয়ালা খুশি হয়ে আমাকেও মামা ডাকে।

আমি বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে বললাম
-মামা, কেমন আছেন?
-এইত ভাল আছি । তো তোমাদের সবকিছু কেমন চলছে?
-এইত খুব ভালই চলছে।
-বাইরে যাচ্ছিলে নাকি?
-এইত সামনেই যাচ্ছি।
-আচ্ছা যাও।

বাড়িওয়ালার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই সামনে হাটতে থাকলাম। আমরা কয়েকজন মিলে নিচের তলা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমরা সবাই ছাত্র। তাই একে মেস'ও বলা যেতে পারে। আমাদের ভাড়া দিয়ে বাড়িওয়ার কোন আপত্তি নেই।

★★

বিকেলে রুমে বসে ভাবছি ছাদে যাব নাকি! একটু আগে সাদিয়াকে ছাদে যেতে দেখেছি। কিন্তু ছাদে যাব কিভাবে!! আমাদের তো কাজ ছাড়া ছাদে যাওয়ার অনুমতি নেই।

রুম থেকে বেড়িয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে এলাম। তেমন কোন কাজ নেই। তবুও কোন না কোন ছুতো বের করবই।

ছাদে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। সাদিয়া মনেহয় আমাকে দেখেনি। আর দেখলেও কিছু বলছেনা। অবস্থা ভাল মনেহয়। আজ সব বলে দিব নাকি ভাবছি।

সাদিয়ার দিকে ঘুরে পা বাড়াতেই আমার বলে উঠল
-আপনি ছাদে কি করছেন!!
আমি সাদিয়ার কথা শুনেই চুপ করে গেলাম। ঢোক গিলে বললাম
-না মানে...
-আপনাদের তো কাজ ছাড়া ছাদে আসা বারন।
-আমি কাজেই এসেছি।
সাদিয়া চোখ বড় বড় করে বলল
-কাজে!! তো কি কাজে এসেছেন?
-আমাদের পানি সাপ্লাই বন্ধ হয়ে আছে। তাই দেখতে এলাম এখান থেকে কেউ বন্ধ করে দিয়েছে নাকি!!
-আপনাদের পানি কি এখান থেকে বন্ধ করে!! আপনাদের উপর তলার সিড়ির ওখানেই তো পানির সাপ্লাই এর কন্ট্রোলার লাগানো।
আমি আস্তে করে বললাম
-ও জানতাম নাতো।

সাদিয়ার কাছে ধরা খেয়েই দৌড়ে পালিয়ে এলাম। সে বুঝতে পেরেছে আমি কোন কাজের জন্য ছাদে যাইনি। তাই কথা না বাড়িয়ে না নেমে আসাই ভাল।

★★

রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি। দুপুরের এই সময়ে এদিকে রিক্সা কম পাওয়া যায়। হঠাৎ সাদিয়াকে দেখে থমকে দাড়ালাম। আজ সকালে সাদিয়াকে দেখিনি। ভেবেছিলাম হয়ত ওদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। কিন্তু এখন বুঝলাম যায়নি।

একটা রিক্সা ডাক দেখেই ডাক দিলাম। সাদিয়া আমার ডাকের জন্য মনেহয় প্রস্তুত ছিল না। রিক্সাটা সে নিজেই ডাক দিতে চেয়েছিল।

রিক্সা কাছে এসে দাঁড়াতেই সাদিয়া এসে বলল
-যাবেন?
রিক্সাওয়ালা রাজি হল। আমার দিকে একবার তাকিয়ে রিক্সায় উঠে বসল। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সাদিয়া হঠাৎ বলল
-আপনিও উঠুন।
আমি কিছু না ভেবেই উঠে বসলাম। কারন আমি এমন কিছুর আশা করছিলাম।

রিক্সায় উঠে একটু ভাবের উপর আছি। এই প্রথম এত কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়েছি। সাদিয়া চুপচাপ বসে আছে।

-আপনি আমার পিছনে ঘুরঘুর করেন কেন!! আমার দিকে এভাবে তাকান কেন!!
সাদিয়া কথাগুলো গম্ভীরভাবেই বলল। আমি চুপচাপ বসে আছি। কেন ঘুরি সেটাতো ভালভাবে জানার কথা। তারপরেও এইরকম জিজ্ঞেস করার মানে কি!!

বাকি রাস্তায় আমি চুপচাপ বসে এলাম। এভাবে কথা বলার পরে আর ভাব নিয়ে বসার কোন মানে হয়না।

রিক্সা থেকে নেমে সাদিয়া তার ভাড়া দিয়ে নেমে গেল। আমিও আমার ভাড়া দিচ্ছি। সাদিয়া পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল
-পরশু আমার জন্মদিন। রাতে আমাদের বাসায় আসবেন কিন্তু।

আমি ভাড়া দিয়ে রুমে এসে ভাবছি। সাদিয়া আমাকে জন্মদিনের দাওয়াত দিল কেন!! কারন বুঝতে পারছিনা। সবার সামনে তাহলে কি বলে দিবে আমার কথা! বাড়িওয়ালা মামা এবং মামি দুজন আমাকে ভাল জানে। কিন্তু যদি বলে দেয়, তাহলে!!

★★

আজকে সাদিয়ার জন্মদিন। ভাবছি যাব কি যাব না। সবশেষে মনেহল যাব। যা হবার হবে। জামা প্যান্ট পরেই বেড়িয়ে পরলাম।

বাসায় ঢুকে আমি প্রথমে অবাক। জন্মদিনের পার্টিতে যেমন লোক থাকার কথা তেমন নেই। তবে কি আমাকে বোকা বানানোর জন্য ডেকেছে!! নাকি ফিরে যাব।

-দাঁড়িয়ে আছেন কেন!! আসুন।
সাদিয়া পিছন থেকে ডেকে আমাকে খাবার টেবিলে নিয়ে এল। আমাকে দেখে বাড়িওয়ালা বলল
-আরে ভাগ্নে। আসতে এত দেরি করলে কেন!
-না মানে কাজ ছিল।
-তোমাদের যে কি কাজ কে জানে। সাদিয়া, ওকে খেতে দে।

আমি সব কাজকর্ম দেখে বোকা হয়ে গিয়েছি। ভেবেছিলাম জন্মদিনের পার্টিতে অনেক লোক থাকবে। অনেক লোকের মাঝে একটা ছেলের সাথে সাদিয়ার আংটি বদল হবে। যে ছেলে সাদিয়ার পরিবারের ঠিক করা। আর তখন আমাকে বুঝিয়ে দিবে, আমি তার পিছনে ঘুরে ভুল করেছি।

কিন্তু কোথায় পার্টি! কোথায় সেসব লোক! তবে ওইরকম নাহয়ে ভালই হয়েছে। আমি ভেবে চুপচাপ খাবার টেবিলে বসে আছি।

-আপনি খাচ্ছেন না কেন! খান।
সাদিয়ার কথায় আমি খেতে শুরু করলাম। আমি চোখ তুলে তাকাচ্ছিনা। সাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝতে পারছি।

খাওয়া শেষ হলে হাত ধুয়ে এলাম। সাদিয়া একটা তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বলল
-এই নিন।
-ধন্যবাদ। আমি আসি।
-এখন'ই চলে যাবেন!
-হ্যা।
-চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।

সাদিয়া দরজা আমার সাথে দরজা পর্যন্ত এল। বের হওয়ার আগে সাদিয়ার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললাম
-তোমাএ জন্য।
সাদিয়া চুপ করে প্যাকেট হাতে নিল। আমিও পিছন ঘুরে নামতে থাকলাম।

সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে সাদিয়ার ডাকে দাঁড়িয়ে গেলাম। সাদিয়া ডেকে বলল
-কালকে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে?
আমি মুচকি হেসে নামতে থাকলাম। সেদিনের সেই গম্ভীর গলায় কথা বলা মেয়েটি এখন নরম সুরে কথা বলছে। চোখের ভাষাই এসবের কারন বলে দিচ্ছে। আর কিছু না বলেই আমি রুমে চলে এলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×