somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসম আসাম (২য় পর্ব)

১২ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যায় জলাভুমি থেকে উড়ে যাওয়া বুনো হাঁসের ঝাঁক

অন্ধকার হয়ে এসেছে চারিদিক, রাস্তায় নেমে হাটছি, কিন্ত কোথায় হোটেল? সকাল থেকে শিলং এর পাহাড়ী উচু নীচু পথ বেয়ে ঘোরাঘুরি শুরু, তিনটা থেকে বাস জার্নি, ক্লান্ত দেহ একটু বিশ্রামের জন্য আকুল।

এইতো সামনেই একটা সুন্দর হোটেল! ভেতরে ঢুকলাম কাচের দরজা ঠেলে,ভারী ভালো লাগছে, বেশ সাজানো লবি,কত রকম অর্কিড ফুলদানীতে, এসি চলছে।

আমি সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছি, ভীষন ঘুম পাচ্ছে,আমার স্বামী কাউন্টারে, এখনি রুমের চাবি নিয়ে আসবে।

'উঠো' তার ডাকে আমি চমকে তাকালাম, হাত খালি,
'চাবি' জানতে চাইলাম
জানালো বিদেশী নাগরিকদের জন্য যে ফর্ম সেটা এখানে শেষ হয়ে গেছে।

উঠে আরেক হোটেলের সন্ধানে হাটতে লাগলাম। একটার পর একটা হোটেল, পাসপোর্ট দেখেই একই ধরনের কথা বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
ভীষন অবাক লাগছে! কি ঘটনা বুঝতে পারছিনা!

অন্যান্য দেশের ট্যুরিস্টরা আমাদের নাকের ডগা দিয়ে চাবি নিয়ে যাচ্ছে! আমরা প্রায় গোটা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়িয়েছি এমন পরিস্হিতিতে কখনও পরিনি।
শেষ পর্যন্ত একটা মুসলমান মালিকানাধীন হোটেল কোনোরকমে রাজী হোলো তবে তাদের নাকি চাদর লন্ড্রী থেকে আসেনি! এত বড় হোটেল তাদের চাদরের অভাব!
এর মধ্যে থানা থেকে ফর্ম আনলো সেটা পূরণ করা হোলো আবার থানায় জমা দিতে গেল হোটেলের লোক।আর আসেনা।
ক্লান্তিতে, ঘুমে পড়ে যাচ্ছি, বল্লাম 'রুম টা দেন আমরা একটু রেস্ট নেই'।অনেক বার অনুরোধের পর রুমে নিয়ে গেল।

চাদর ছাড়া বিছানা, গা ঘিন ঘিন করছে তার মধ্যে বসে আছি। বাপ ছেলে সোফায় বসা।আমার স্বামীতো পারলে তখনই ফিরে আসে, খালি রাতের বেলা ফেরার যানবাহন নেই। হোটেল খোজার ফাকেই একটা রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়েছিলাম তবে কি খেয়েছিলাম মনে পড়ছেনা।
মনের মধ্যে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কেন হোলো এমন!!

আস্তে আস্তে তখন মনে পড়লো আসামের বিদ্রোহীদের কথা যারা ১৯৮৫ সাল থেকে গেরিলা যুদ্ধ করছে স্বাধীনতার জন্য এবং এরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে প্রশাসনের ধারনা। মনে হয় সেই জন্যই বাংলাদেশী নাগরিকদের উপর এত কড়াকড়ি।

এত সময় লাগলো আমাদের ফিলাপ করা ফর্মগুলো থানা থেকে সই করে আনতে, মনে হোলো আমাদের সম্পর্কে তারা ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স আনালো!
রাত এগারোটায় চাদর নিয়ে আসলো।

মনটা ভীষন খারাপ লাগছে, বেড়ানোর সকল আনন্দটাই যেন মাটি হয়ে গেল। আসামের বিখ্যাত মশা কামড়ালেই ম্যালেরিয়া।
সেটা নিয়েও ভাবছিনা।
চাদর বিছিয়ে দিল শুয়ে পড়লাম কিন্ত ঘুম আর আসেনা।

ঘুমানোর আগে আরেকবার তার ঘোষনা 'শোনো সকালে উঠেই শিলং রওনা হবো সুতরাং ব্যাগ ট্যাগ খোলার দরকার নেই।'
আমার স্বামী এমনিতে খুবই ভালোমানুষ, যা বলি কখনও না করেনা,কিন্ত একবার জেদ ধরলে তা আর নড়চড়ের কোনো উপায় নেই।


কাজীরাঙা অভয়ারন্যে বিখ্যাত এক শিং ওয়ালা গন্ডার।

আস্তে আস্তে মন থেকে ফিকে হয়ে আসছে ৭৮,৫২৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত আসাম যা কিনা অপরূপ ফুল ফলে শোভিত, কাজীরাঙা অভয়ারন্য যা কিনা বৈচিত্রময় প্রানী সম্পদে পরিপুর্ন, যেখানে আছে এক শিং ওয়ালা বিরল প্রজাতির গন্ডার, ডাকিনী যোগীনিদের কামাখ্যার মন্দির।চোখের সামনে থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে সেই ভয়ংকর ব্রহ্মপূত্র নদ যা দেখতে আসা।


বিখ্যাত ব্রহ্মপূত্র নদ

আসামের ভৌগলিক ইতিহাস টা ভাবছি....।
ভারতের উত্তর পুর্ব দিকে হিমালয়ের পদতলে আর মেঘালয়ের মাঝখানে অবস্হিত প্রাচীন প্রাগজ্যোতিষ বা কামরূপ বর্তমানে যা আসাম নামে পরিচিত যেখানে অনেক রাজবংশই শাসন করেছে। এর মধ্যে বিখ্যাত ছিল বর্মন রাজবংশ।কামরূপ ছিল তার রাজধানী।বর্তমানে যা ডিব্রুগড়ে স্হানন্তরিত।গৌহাটি আসামের বানিজ্যিক এবং যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।

ভারতীয় রাজ্য ছাড়াও ভুটান আর বাংলাদেশের সীমান্তবেস্টিত আসাম কৃষিজাত পন্যের বিশেষ করে চা, পাট, তুলা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রকারের অর্কিড ও অন্যান্য ফুলের চাষ হয় বানিজ্যিক ভাবে।


অর্কিড

মিশ্র জাতিগোস্ঠি অধ্যুষিত আসাম এর অধিবাসীদের মধ্যে এক বিশাল সংখ্যক জনগোস্ঠি এসেছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে। এখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টান সবাই একসাথে মিলেমিশেই আছে।

শুধু ভাবছি এতদুর আসলাম কিছু না দেখেই চলে যাবো!
ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারিনা।
চলবে..............
অসম আসাম (শেষ পর্ব)

ছবিগুলো নেটের সৌজন্যে..।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৭
৪৬টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×