somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদা আর কালো মরুভুমি শেষ পর্ব

২০ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুরগী আর ব্যাঙের ছাতার পেছনে সুর্য ।

আলোছায়ার মাঝে বসে বসে দেখছি কি দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছে হামাদরা। প্রথমেই গাড়ীগুলোকে এমন ভাবে রাখলো যাতে সেগুলোর সাথে আটকে ছাদখোলা তিন দিক ঘেরা একটা তাবুর মত টাঙানো যায়। দুজন সে কাজে ব্যাস্ত। আরেকজন যে কাঠগুলো সাথে করে আনা হয়ে ছিল তা দিয়ে ক্যাম্প ফায়ার জ্বালাচ্ছে।পুড়ে কয়লা হলে চিকেন বারবি কিউ করা হবে।

জাপানী যে দম্পতি আমাদের ভ্রমন সঙ্গী ছিল ওরা ইংরাজী বলতে পারেনা বল্লেই চলে, শুধু হাসি ছিল তাদের সম্বল। ওরা আমাদের কাছ থেকে একটু দুরেই ফোম বিছিয়ে দুজন বসে বসে ধুমপান করছে আর চোখে চোখ পড়লেই একটা মিস্টি হাসি উপহার দিচ্ছে ।
বাকীরা সবাই আগুনের চারপাশে গোল হয়ে শুয়ে বসে আছে।


অদুরে জাপানী দম্পতি

কখন ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছে বলতে পারবোনা। হঠাৎ কে যেন ডেকে বল্লো খাবার রেডী। কিছুতেই চোখ মেলতে পারছিনা, চোখ বন্ধ অবস্থায় সেই শ্বেত শুভ্র বালির উপর দিয়ে টলতে টলতে ছাদহীন তাবুতে গেলাম।দেখি সতরন্জি বিছানো তার উপর ছোটো ছোটো পায়াওয়ালা তিনটা টেবল্, তার উপরে খাবার সাজানো, সবার জন্য আলাদা করে বেড়ে দেয়া।

সবাই দুদিকে লাইন করে সতরন্জির উপর বসলাম। চাল ডাল মিশিয়ে খিচুরীর মত একটা জিনিস।আলু আর টমেটো দিয়ে একটা ঝোল ঝোল তরকারী আর চিকেন বারবি কিউ। সাথে ছিল ডেজার্ট হিসেবে আঙুর, শেষে চা আর কফি। তক্ষুনি রান্না করা গরম খিচুরী আর আলু টমেটোর তরকারীটা অপুর্ব লাগলো, একটু দেশী খাবারের স্বাদ। মুরগীগুলোর একটা দিক পুরোই পুরে কয়লা, তার পরও খারাপ লাগলোনা।সবাই চেটেপুটে শেষ করলো প্লেট, আমি অবশ্য যথারীতি রাখলাম কিছু প্লেটে।


খানাপিনা

আবার এসে শুয়ে পড়লাম। একটু ঠান্ডা হয়ে এসেছে চারিদিক।হঠাৎ এক বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। চেয়ে দেখি চাঁদের আলোয় আগুনের পাশে একটা ফোমের উপর আহামাদ আর হামাদ কি অপুর্ব ভঙ্গীমায় নেচে যাচ্ছে তাম্বুরার তালে তালে ওখানকার স্হানীয় কোনো নৃত্য, আর সবাই গোল হয়ে বসে কফি খাচ্ছে আর তালি দিয়ে উৎসাহিত করছে। কিন্ত ক্যামেরা কই খুজে পেলামনা। আমার স্বামী পাশে আরেকটা ফোম এনে গভীর ঘুমে মগ্ন। আমি আর চোখ টেনে মেলতে পারছিনা কিছুতেই, আবার ঘুম।

আমাদের সফরের সাথীরা

একটু পরে শুনি সবাই খুব জোরে হাত তালি দিচ্ছে। আধোঘুম আর আধো জাগরনের মধ্যে উঠে বসলাম,কি ব্যাপার দেখি একজন চৈনিক চেহারার তরুনী আর একটা পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা মেয়ে নাচছে সেখানে এবার।বাচ্চা মেয়েটি তরুনীর কোমর জড়িয়ে ধরে দ্রুত তালে নেচে যাচ্ছে ।

কারা এরা! আমাদের সাথে তো আসেনি। এত রাত করে এই গহীন মরুতে! কি ভাবে আসলো একা একা! স্বপ্ন দেখছি নাতো! মাথায় কিছু ঢুকছেনা, চিন্তাগুলো কেমন যেন হাওয়াই মিঠাইর মতন হাল্কা হয়ে মস্তিকের খোলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।
সকালে শুনলাম তারা আরেকটা ক্যাম্প থেকে বেড়াতে এসেছিল রাতে। প্রচন্ড ঘুমের জন্য আমি এই অপুর্ব দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধরতে পারিনি খুব আফসোস লাগছে এখোনো।


আমাদের ক্যাম্প

মাঝরাত শীতের চোটে কুকুর কুন্ডুলী হয়ে শুয়ে আছি ,শুনলাম কে যেন পাশে এসে ডাকছে ! চোখ খুলে দেখি আহামাদ একটা কম্বল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি তাকানোর সাথে সাথে পরম মমতায় সে আমাদের গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে দিল। শুয়ে শুয়ে দেখলাম সে আরেকটা কম্বল বালিতে ঝেড়ে ঝেড়ে বালির ওপর দিয়ে টেনে টেনে এনে ঐ জাপানীদের গায়ে দিয়ে আসল। এভাবে সবাইকে একে একে ঢেকে দিল পরম আদরে। কি যে ভালোলাগলো সেই ঠান্ডায় বালি কিচকিচে কম্বলের উষ্ঞতা, বোঝাতে পারবোনা।

ভোর চারটায় ঘুম ভেঙে দেখি সবাই উঠে গেছে দু একজন ছাড়া । আমার স্বামী বসে আছে ধ্যানী বুদ্ধের মত প্রকৃতির তৈরী চুনাপাথরের এক অপরূপ ভাস্কর্যের পাশে বসে আছে।

আমার স্বামী ধ্যানমগ্ন

সুর্য তখনো উঠেনি, নাস্তা রেডী, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বল্লো। সুর্য উঠে গেলে ছবি ভালো হবেনা জানালো। নাস্তায় ছিল ওখানকার খুবই প্রচলিত সুজির মত মোটা দানার লালচে রংয়ের চাপাতি, পনির, ডিম সেদ্ধ, জেলী, আপেল আর চা/কফি।
নাস্তা শেষ ওরা প্রথমেই আমাদের নিয়ে গেল মাশরুম এন্ড দ্য চিকেনের কাছে।

গাইডের মুখে শুনলাম প্রায়শ:ই সেখান দিয়ে বয়ে যাওয়া মরু ঝড় চুনা পাথরের স্তুপের গা থেকে খসিয়ে নিয়ে গেছে তার শরীরের নরম অংশটুকু, আর সৃস্টি করে রেখে গেছে বিশাল এই শ্বেত মরুভুমির বুকে অপুর্ব আর বিস্ময়কর সব ভাস্কর্যের।

ক্যামেরার ব্যাটারির চার্জ কমে যাওয়ায় মাথা কুটে মরতে ইচ্ছে করছিল।কিন্ত নিরুপায়।


মাশরুম এন্ড দ্য চিকেন যার শীর্ষে পরেছে ভোরের প্রথম সুর্যের আলো
সে সময় আহ্‌মাদ আর হামাদরা চারজন সব কিছু গুটিয়ে গাড়ীতে উঠালো। পুরো জায়গাটি পরিস্কার করে ময়লাগুলো পর্যন্ত মোটা পলিথিনে ভরে গাড়ীতে রাখলো । শেষে কম্বল দিয়ে বালুর উপর টেনে টেনে আমাদের সমস্ত পদচিন্হ মুছে দিয়ে যেমন ছিল তেমনই আগের মত করে রেখে আমাদের কাছে গাড়ী নিয়ে আসলো। সুর্য উঠলো সাথে সাথে ঠান্ডাটাও কেমন যেন মিলিয়ে যেতে লাগলো ।
আমরা ঘুরে ঘুরে অবাক বিস্ময় নিয়ে দেখছিলাম প্রকৃতির নিজস্ব খেয়ালে সৃস্ট অসাধারন এক একটি শিল্পকর্ম ।


মরু ভাস্কর্য



ফেনিল শুভ্র ঢেউয়ের মাঝে আমরা দাড়িয়ে



কোনো মেরুতে না কি মরুতে !

গাড়ীতে উঠার জন্য ডাক আসলো। আবার শুরু হলো পথ চলা। ধীরে ধীরে গাড়ী চালাচ্ছে, আমাদের ছবি তোলার সুবিধার জন্য।


গাড়ীতে বসে তোলা ছবি...নামটা শোনা হয়নি


গাড়ীর জানালা দিয়ে তোলা সুর্যের আলোয় পুরো জায়গাটা এমন সাদা হয়েছিল ।



ছোটো ছোটো পাথরের টুকরো দিয়ে পথ নির্দেশ।



বিদায় সাদা মরু আবার পীচ ঢালা রাস্তায়


সারা জীবনের জন্য স্মৃতির মনিকোঠায় সন্চিত করে রাখার মতন অদ্ভুত সুন্দর এক সময় কাটিয়ে ফিরে চলছি বাহারিয়ার দিকে...সেখান থেকে কায়রো.....

আমার সাথে থাকার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
http://www.somewhereinblog.net/blog/June/29255409#c5405532
প্রথমপর্ব
http://www.somewhereinblog.net/blog/June/29256235
দ্বিতীয় পর্ব
http://www.somewhereinblog.net/blog/June/29257373
তৃতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৪
৬২টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×