somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাক্তি নিরাপত্তা ও আমরা কি করবো।

২৯ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকাল আমাদের সবার জীবনে ব্যাক্তি নিরাপত্তা ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়ে পরিনত হয়েছে । কেননা আমরা আজকাল আমাদের বাসস্থান, কাজের ক্ষেত্র, চলাফেরা এবং সামগ্রিক জীবন যাপনও আগের তুলনায় অনেক জটিল করে ফেলেছি। অনেকে অবশ্য এর বিপরীতটিই ভাবে, তাদের মতে জীবন এখন আগের চেয়ে অনেক সোজা ও স্বাচ্ছ্যন্দময়। এটা যেমন সত্য, তবে তেমনি অনেক নিরাপত্তার ঝুকিও আমরা সেই সাথে টেনে এনেছি।
আমরা যখন ছোটো ছিলাম তখন যারা বড় ছিলেন তারাই আমাদের ব্যক্তি নিরাপত্তার বিষয়ে উপদেশ আদেশ দিতেন।একটি উদাহরণ হচ্ছে যেমন মাগরেবের আযানের সাথে সাথে ঘরে ফেরা। তখনকার প্রেক্ষাপটে আমার মনে হয় তা যথেস্টই ছিল।এলাকার প্রত্যেকে প্রত্যেককে চিনতো। কে কেমন তা সবার নখদর্পনে ছিল । আজ কিন্ত সেমনটি নেই, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষকেই চিনি না। কারণ এখন রাস্ট্র, প্রশাসন এবং অন্যান্যরা এই নিরাপত্তার অনেকখানি দায়িত্বই নিয়ে নিয়েছে। আমরাও এতে অনেকটা উদাসীন হয়ে পড়েছি। ফলে ব্যাক্তি নিরাপত্তায় পরিবারের ভুমিকা সংকুচিত হয়ে এসেছে।
উদাহরন যেমন গভীর রাতে গার্মেন্টস এবং শিক্ষা প্রতিস্ঠান থেকে ছেলেমেয়েরা বাসায় ফিরছে । এটাই এখন বাস্তবতা।
উন্নত বিশ্ব এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার এবং এই বিষয়ে জ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি করেছে।
আমার মনে হয় আমাদেরও এ বিষয়ে এখন যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে। নিরাপত্তা বিষয়ক কারিকুলাম প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।
আজ আমার এই ভুমিকা দেয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে পাঠকদের সাথে ব্যাক্তি নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের পাচঁটি মুল মন্ত্র শেয়ার করা যা এই ঈদের সময় কাজে লাগবে বলে আশা রাখি ।



সবসময় সতর্ক থাকা

কথাটা খুবই সহজ মনে হবে। অনেকে হয়তো বলবেন এটাতো সবাই জানে কি এমন নতুন কথা! একটু ভেবে দেখুনতো আমরা সবসময় কি মনের এই অবস্থানে ( মাইন্ড সেট) থাকতে পারি? কখন যেন বেখেয়াল হয়ে যাই আর তখনি সব বিপদ চলে আসে।ধরুন আপনি একটি নির্মানাধীন বাড়ীর নীচ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, যদি আপনি এই মুল মন্ত্রটি প্রয়োগে অভ্যস্থ হন তাহলে আপনি অবশ্যই উপরের দিকে তাকাবেন এবং নিরাপদ দুরত্ব দিয়ে হেটে যাওয়ার সিদ্ধানত নিবেন। সবসময় সতর্ক থাকার অভ্যাস আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।

২।
নিয়ম নির্দেশ মেনে চলা

অনেকেই দেশলাই কাঠি বা জলন্ত সিগারেট কোথায় ছুড়ে ফেল্লেন তার পরওয়া করেনা। বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় গরম আয়রন টা সুইচ অফ না করেই বের হয়ে গেলেন। গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রেখে যাওয়া এমন হাজারটা উদাহরন দেয়া যায় । সচেতন পাঠক একবার ভেবে দেখুন এর পরিণতি কি হতে পারে ! সুতরাং নিজের নিরাপদ থাকার নিয়মগুলো নিজেই বানিয়ে নিয়ে বাড়ীর সবাই পালন করুন এবং তা অভ্যাসে পরিনত করুন।

৩।
লো প্রোফাইল মেইন্টেন করা এবং চলাফেরায় রুটিন মাফিক না চলা।

শান শওকত জৌলুস প্রদর্শন অনেক সময়ই আক্রমনকারীকে আকৃস্ট করে।
আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন একই পথে একই সময় স্কুলে না নিয়ে বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করুন।এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। এতে আপনি যদি ঝুকির মুখে থাকেন তবে আক্রমনকারীর আপনার অবস্থান প্রেডিক্ট করা কঠিন হবে। এছাড়াও আমরা বাইরের মানুষ যেমন ধরুন ব্যাক্তিগত ড্রাইভার বা গৃহ কর্মীর সামনেই অনেক কথা বলি বা অসতর্ক থাকি।



৪।সবসময় প্ল্যান করে কাজ করা
যে কোনো পরিস্থিতিতে কি কি করতে হবে তার একটা পরিকল্পনা সব সময় মাথায় রাখা। কোথায় কোন জিনিস আছে তা মনে রাখা, জরুরী টেলিফোন নং , রক্তের গ্রুপ,সবসময় আপনার অবস্থান নিকট কোনো ব্যক্তিকে জানিয়ে রাখা, এবং কোথাও যাবার আগে নিরাপত্তা ঝুকিগুলো চিন্হিত করে তার বন্দোবস্থ করা। যেমন দামী গহনা, টাকা পয়সা খালি বাসায় না রেখে নিরাপদ জায়গায় রেখে যাওয়া। প্রত্যেকটি জরুরী কাগজ পত্রের ফটোকপি সংরক্ষন করা। ঘরের এক সেট চাবি বাড়ীর কাছেই কোনো নিরাপদ জায়গায় রাখা।

এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় করার লোভ সামলাতে পারছিনা। একবার আমাদের নতুন ফ্ল্যাটে গ্রীল বসানোর সময় মিস্ত্রীদের ভুলে নীচের মেইন সুইচ বোর্ড সহ পুরো সিড়ি ঘরে ভয়ংকর আগুন লেগে গেল। আমার শ্বশুর বাড়ীর সবাই উপরে। কান্নাকাটি হৈ চৈ। আমরা নীচে নামতেও পারছিনা,বাড়ী থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তাই ছিলনা। প্রচন্ড আগুনে চারতলা বাড়ীর মেঝে, দেয়ালগুলো পর্যন্ত গরম হয়ে গিয়েছিল । ইলেকট্রিক লাইন দিয়ে আগুন উঠে যাচ্ছে উপরে।

চারিদিকে লোকজন জমে গেছে। আমার স্বামী যিনি সবসময় এই জিনিসগুলো মেনে চলে সে খুব ঠান্ডা মাথায় নীচে সেই আগুনের সামনে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চিন্তা করলো চুপচাপ। তারপর ছোটো ভাইকে নিয়ে ঠিক জায়গামত রাখা প্লায়ার্সটা নিয়ে ছাদে গিয়ে চার ফেইজের যেই কারেন্টের কানেকশনটা ছিল তা একটু ছোটো বড় করে কেটে সেই ভয়ংকর বিপদ থেকে বাঁচালো। প্রচন্ড ধীর স্থির লোকটা সেদিন আমি ও আমার ছেলে তার বাবা মা ভাই বোন মিস্ত্রী সহ প্রায় ৩৫ জন লোককে বাঁচালো। বাইরে থেকে আমরা তার ভেতরে কোনো টেনশন দেখতে পাইনি। যেখানে আমরা ভয়ে থরথর করে কাপছিলাম আর কাঁদছিলাম। সেদিন আমাদের বাঁচার সম্ভাবনা খুব কমই ছিল।
৫।
কমন সেন্সের প্রয়োগ

আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক হন তাহলে কোন পরিস্থিতিতে কি করবেন তা নিজে থেকেই মাথায় আসার কথা।আপনার প্রতিটি ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে চলাফেরা করলে কিছু দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।এমনকি পশুপাখীরাও এই কমন সেন্সটা প্রয়োগ করে। কিন্ত মানুষ মোবাইল কানে রাস্তা পার হচ্ছে, ফুট ওভার ব্রীজ ব্যাবহার করার কথা চিন্তাও করে না। আরো এমন শত শত উদাহরন যা আর দিতে চাই না ।
উপরে যে চারটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে তার সবগুলো কিন্তুই কমন সেন্সের আওতায়ই পরে।

তবে এছাড়াও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে ভুল সময় ভুল জায়গায় উপস্থিতির কারনে। যদিও এটা অনেক সময় এড়ানো সম্ভব নয় তবুও যেখানে বা যে সময় অঘটন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে সেটা পরিহার করাই ভালো।
আমরা এই পাঁচটি মামুলী বিষয়গুলোই যদি অভ্যস্থ করে নিতে পারি তাহলে আমাদের ব্যাক্তি নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করতে পারি। আর না করলে এর ফলাফল তো প্রতিদিনই পত্রিকায় দেখা যায়।

সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা ।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৭
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×