অনেক অনেক বছর আগে থেকেই নাম শুনেছি ইজিপ্টের বিখ্যাত বাজার এই খান ই খালিলি।
হাজার হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার লীলাভুমি মিশরের পুরোনো কায়রোর বিখ্যাত বাজার খান ই খালিলি নিয়ে আমার এই ছবি ব্লগ।
৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত মিশরের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আল আযহার । এর উল্টো দিকেই রয়েছে আর একটি মসজিদ তার নাম
আল হোসাইন। আর এই মসজিদকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বিখ্যাত বাজার খান ই খালিলি ।
ব্লগার সহচরের আবেদনে একটি ইজিপশিয়ান মেয়ের ছবি যোগ করে দিলাম
মিশর গিয়েছে আর খান ই খালিলি বাজারে যায়নি এমন পর্যটকের সংখ্যা আছে কিনা জানা নেই। আমি যে গিয়েছি সে ব্যাপারে নিশ্চিত।সেখানে ঘুর ঘুর করার জন্য আমরা শেষ দিনটি হাতে রেখেছিলাম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিলাম, মাঝখানে অবশ্য আল আযহার মসজিদ দেখেছি ঘুরে ঘুরে।
সকালবেলা দোকান সাজাতে ব্যাস্ত এক দোকানী
আমরা দেখেছি প্রচুর পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছে আকাশ নামে সামীয়ানার নীচে কায়রোর সবচেয়ে বড় খোলা বাজার খান ই খালিলি তে। যাকে আরবী ভাষায় বলা হয়ে থাকে souk।
মার্কেটের একটি গলিপথ
আমার মনে হয় এখান থেকেই এই উপমহাদেশে চক কথাটি এসেছে। যেমন ঢাকার চক বাজার, দিল্লীর চাদনী চক ইত্যাদি।অটোমান আমলে এটা টার্কিশ বাজার নামে পরিচিত ছিল।
১৮৩২ সালে আমীর Djaharks el-Khalili কায়রো শহরের মাঝখানে এ বাজারটি প্রতিস্ঠিত করেন।
বাজারের গলির পাশে স্যুভেনীরের দোকান
বর্তমানে এটা কায়রোর পাঁচটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের একটি। রঙ্গীন মনোহরী এ বাজারে রয়েছে প্রচুর স্যুভেনীরের দোকান থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র।এখানে এ্যান্টিক বলে যে সব পন্য তারা বিক্রী করছে তার বেশীরভাগই অবশ্য নকল।
বিভিন্ন রকম মশল্লার পশরা নিয়ে বসেছে অস্থায়ী দোকান মালিকরা
এখানে রয়েছে কাপড় চোপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাতব জিনিসে তৈরী প্রাচীন ইজিপশিয়ান যত রকম দেব দেবীর মুর্তি, প্যাপিরাসে আঁকা ছবি, এলাবাস্টারের উপর আঁকা প্রাচীন আমলের বিভিন্ন ছবি, কাচের তৈরী শিসা বা হুক্কা, বিভিন্ন রকম মশল্লা, বিখ্যাত ইজিপশিয়ান কার্পেট, মেয়েদের সাজসজ্জার বিভিধ উপকরণ, গহনার দোকান আরও অনেক অনেক কিছু।
একটি সুবিশাল স্যুভেনীরের দোকান
তবে আপনাকে অনেক দরদাম করতে হবে প্রতিটি জিনিস কেনা নিয়ে। ব্যাতিক্রম শুধু স্বর্নের দোকান গুলোয়, সেখানে সব এক দামে বিক্রী হচ্ছে। তবে সব কিছু সর্বোচ্চ ২১ ক্যারেট, সারা বাজার খুজে ২২ ক্যারেটে তৈরী কোনো গহনা পাইনি।বেশীরভাগ গহনাই দুবাই থেকে আনা।
স্যুভেনীরের দোকান
এ সমস্ত দোকান গুলো ছাড়াও রয়েছে ছোটো ছোটো ঐতিহ্যবাহী কফি হাউস আর তারা কফি ছাড়া চা ও বিক্রী করছে।দেখলাম সবাই পাতলা লিকারে বিভিন্ন ভেষজ গাছ যেমন পুদিনা বা তুলশী হবে একটা ঠিক বুঝলাম না ওটা দিয়ে খাচ্ছে। আমরা যেহেতু অভ্যস্থ নই তাই ওগুলো ফেলেই খেয়েছি। সেই সাথে ওখানে আছে সিসা বা হুক্কা খাবার বন্দোবস্থ। রাস্তার পাশে টুল টেবিল পেতেই দোকান খুলে বসেছে দোকানীরা।
রাস্তার পাশে ফুটপাথ দখল করে বসেছে চা এর দোকান।
এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর রেস্টুরেন্ট ।আর ফুটপাথের খাবারের দোকানতো আছেই বিভিন্ন রকমারী স্থানীয় খাবারের পশরা সাজিয়ে।খাবারের অধিকাংশ জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন রকম মাংসের কাবাব, বিভিন্ন ধরনের রুটি, শর্মা, সালাদ এসব।
সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ইজিপশিয়ান খাবার
সত্যি কথা বলতে আমি যত দেশে গিয়েছি বাংলাদেশী খাবারের মত স্বাদ কোনো কিছুতেই পাইনি। আর কোনো দেশের নতুন খাবারের স্বাদ বিশেষ করে তার গন্ধের ব্যাপারে আমি ভীষন খুতখুতে ।মালয়েশিয়ায় বৃটিশ আমলের বিখ্যাত চকলেট তৈরীর দোকানে দুরিয়ানের চকলেট খেয়ে সারাদিন আমার কুলি কুলি করতে করতে কেটে গিয়েছে।
রাস্তার অপর পাশেই মিশরের বিখ্যাত আল আযহার মসজিদ।
আল আযহার মসজিদের ভেতরের প্রাঙ্গন
এখানে মেয়েদের নামাজ পড়ার আলাদা ঘর রয়েছে। অনেক মহিলাকে দেখলাম নফল ইবাদত করতে। আমি ও সেখানে জোহোরের নামাজ পড়লাম।
অজস্র গলিপথ নিয়ে গড়া এই খান ই খলিলি বাজারের একটি গলি কে ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে বিখ্যাত ইজিপশিয়ান লেখক নাগিব মাহফুজের বিখ্যাত বই Midaq Alley.
সংগ্রহে রাখার জন্য ছোট্ট হাতী খোজায় ব্যাস্ত আমার স্বামী।
আমার শখের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই, যেটা সুন্দর লাগে সেটাই সংগ্রহ করি।আমার স্বামীর মত শুধু হাতির পেছনে লেগে থাকা নয়। অনেক স্যুভেনিরের সাথে মিশরের বিখ্যাত ফারাওদের মুখের প্রতিকৃতি লাগানো এই চারটে ছোট্ট গ্লাসও সংগ্রহে রাখলাম।
দুটো কাচ আর দুটো কপারের ছোটো গ্লাসে নেফেরতিতি, ক্লিওপেট্রা,হাসেপসুটস আর র্যামেসিসের মুখ
বিখ্যাত এই বাজারটিতে কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যাতে স্থানীয় লোকজনের সাথে অনেক বিদেশী পর্যটক ও মারা যায় । শেষ বার ঘটেছে ২০০৯ সনের ফেব্রুয়ারীতে । এতে একটি ১৭ বছরের ফরাসী মেয়ের মৃত্যু ঘটে আর আহত হয় ২২ জন।
একটি তৈরী পোশাকের দোকানে
আমরা সারাদিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম কত যে কিছু বিক্রী হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক খান ই খলিলি বাজারে। কিনলাম ও অনেক কিছু হাবিজাবি কারণ সেদিনই ছিল আমাদের ইজিপ্ট ভ্রমনের শেষ দিন।
সকাল বেলা কাস্টমারের অপেক্ষায়
ছবিগুলো আমাদের ক্যামেরায় তোলা