somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোহ সি চাং এক রাজকীয় দ্বীপ ( ছবি ব্লগ)

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



থাইল্যান্ডের থাই উপসাগরের পুর্ব তীর ঘেষে প্রাচীন এবং অভিজাত এক প্রদেশ ছনবুড়ি।থাই ভাষায় বুড়ি অর্থ প্রদেশ যা আমি আগের একটি পোষ্টে উল্লেখ করেছিলাম ।ব্যাংককের খুব কাছে আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য নানারকম বিনোদনে পরিপুর্ন ছনবুড়ি দেশী বিদেশী পর্যটকদের কাছে স্বর্গরাজ্য। এখানে বিখ্যাত পাতায়া সহ আরো অনেক বীচ ও ছোট ছোট দ্বীপ মালা রয়েছে যা সত্যি দেখা আর উপভোগ করার মত।

পাতায়া আমি বেশ কয়েক বছর আগে গিয়েছিলাম। ভালোই লেগেছিল।
সেখানে ছিল প্যরাস্যুট ডাইভ, স্কুবা ডাইভিং, ওয়াটার স্কি, স্পীড বোট ও মটর সাইকেল চালানো শুরু থেকে যতরকম পানির খেলা ধুলা আর কি।যার কোনটাতেই আমি অংশগ্রহন করতে পারিনি শুধু স্পীড বোট চড়া আর সমুদ্রের হাটুজলে পা ভেজানো ছাড়া ।


দ্বীপের এক নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য

তাই এবার সেই ছনবুড়িরই আরেকটি জেলা শহর সি রাচার অদুরে কোহ সি চাং ছিল আমাদের গন্তব্য।থাই ভাষায় কোহ অর্থ দ্বীপ। সি রাচা থেকে ফেরিতে করে ৪৫ মিনিট লাগে সি চাং দ্বীপে যেতে ।

মুষ্টিমেয় জনগনের বসতি এই দ্বীপে অধিকাংশই জেলে সম্প্রদায়ের বসবাস। এ দ্বীপটি একসময় থাই রাজাদের বিশেষ করে রাজা পন্চম রামার অত্যন্ত প্রিয় বিশ্রামস্থল ছিল এবং রাজাদের জন্য ছিল সম্পুর্ন সংরক্ষিত।তবে বর্তমানে এটা সাধারন পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।সি চাং উল্লেখ্য এখন যে রাজা ভুমিবল উনি হলেন থাইল্যান্ডের রাজা নবম রামা।

ব্যাংকক থেকে দু থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগলো সি রাচা পৌছাতে। উল্লেখ্য যে পালি/ সাংস্কৃতিক ভাষায় সি রাচার অর্থ হলো শ্রী রাজা। থাইল্যান্ডের ৯০% শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও তাদের সংস্কৃতিতে হিন্দু পৌরানিক গল্প ও নামের প্রবল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।


কি অপরূপ রূপে তোমায় হেরিনু আমি

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত আরামদায়ক বাস ব্যাংকক থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় ছেড়ে যায় ছনবুড়ি সি রাচার উদ্দেশ্যে। আমরা রাংসিতের ফিউচার পার্ক থেকে ভ্যানে করে রওনা দিলাম ছনবুরির সি রাচার উদ্দেশ্যে।
ভ্যান মাথাপিছু নিল ১৬০ বাথ। সেখান থেকে বোটে করে সি চাং দ্বীপের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।বোট ভাড়া মাথাপিছু ৫০ বাথ।


সি চাং দ্বীপে যাবার ফেরি বোট

তার আগে জেটির অদুরে দেড় কি.মি দুরত্বে এক দ্বীপ যা পরে রাস্তা বাঁধিয়ে যুক্ত করা হয়েছে মেইন ল্যান্ডের সাথে । সেখানে রয়েছে অপুর্ব ব্যাতিক্রমী দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের এক বৌদ্ধ মন্দির নাম ওয়াট কো লাই দেখতে গেলাম।বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র সেই মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের পদচিন্হ সহ বৌদ্ধ ও চাইনিজ কিছু ধর্মীয় নিদর্শন রয়েছে। উল্লেখ্য থাই ভাষায় ওয়াট মানে মন্দির।


ওয়াট কো লাই মন্দির

যাই হোক ফেরীতে ৪৫ মিনিট পাড়ি দিয়ে পৌছালাম সেই অপুর্ব সুন্দর দ্বীপটিতে যেখানে যানবাহন বলতে আমাদের দেশের মতন দেখতে চান্দের গাড়ি। সেই ড্রাইভার কাম গাইড সকাল দশটা থেকে পাঁচটা আমাদের সাথে থাকবে সব দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখাবে তার জন্য ৫০০ বাথ দিতে হবে।
শুরু হলো আমাদের ঘোরাঘুরি।
এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন তা হলো গাইড ছাড়া এই দ্বীপে ঘোরাঘুরি করা খুব মুশকিল। কারন সেখানকার অধিবাসীরা থাই ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষাই জানে না। এটা খোদ ব্যাংককেও দেখা যায়।

যাই হোক সেখানে নেমেই মনে হলো দ্বীপটি এখনো পর্যটকদের পদভারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েনি। সেখানকার জনগন এখনও তাদের শান্ত নিরিবিলি গ্রামটিকে পর্যটন নামক বানিজ্যের পুঁজি করে তোলেনি। তাই ভীষন ভালোলাগলো সেখানে সারাদিন আমাদের।

এবার দেখুন থাই রাজাদের কোহ সি চাং আমাদের মতন সাধারন পর্যটকদের চোখে।


পাখির চোখে সি চাং জেটি


সি চাং দ্বীপের তীরে সুন্দর মোহনীয় বাতিঘর


পথের পাশে

পরের গন্তব্য বৌদ্ধ মন্দির। হলদে রঙ্গে রাঙ্গানো বুদ্ধের সারি, দাড়ানো, বসে থাকা আর শয়নরত ভঙ্গিমায়।


বৌদ্ধ মন্দির সি চাং দ্বীপ


সি চাং দ্বীপের একমাত্র বীচ

সেখান থেকে আসতেই দেখলাম এক বার, যেখানে কোমল এবং হার্ড সব ধরনের পানীয়ই বিক্রি হয়।প্রচন্ড আদ্র আবহাওয়ার কারনে দারুন পিপাসার্ত আমরা সবাই ফলের জুস অথবা পানির বোতলে চুমুক দিচ্ছি ঘন ঘন।


পানীয়র দোকানে আমন্ত্রনরত পুতুল বালিকা

কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে বের হয়েই দেখি পাশে ফলের দোকান , আমি খেলাম ড্রাগন ফ্রুট।


বিভিন্ন থাই ফল যা এখন আমাদের দেশের সুপার মল গুলোতে আকাশচুম্বী দামে বিক্রি করছে

সেখানে দেখি রাস্তার পাশে এক মহিলা ভ্যান গাড়ী করে নানা রকম সামুদ্রিক মাছ আগুনে ঝলসিয়ে বিক্রি করছে।


ঝলসানো সামুদ্রিক প্রানী

আমার স্বামী ছেলে খেলো এই সব, আস্তাগফেরুল্লাহ্‌ !


স্কুইডের বার বি কিউ

পেটের ক্ষুধা মিটলো এখন চোখের ক্ষুধা ! পিচ্চি শহরটা দেখতে বের হোলাম চান্দের গাড়িতে।


শহরে ছোট ছোট দোকান আর রেস্তোরা


রাস্তার ধারে সুন্দরী মাছ বিক্রেতা


সসেজ আর সস/ মেয়োনেজ দিয়ে রোল বানাতে ব্যাস্ত গম্ভীর দোকানী


নির্জন কোলাহল মুক্ত এক অপুর্ব জনপদ

দুপুরের খাবার সময় হলো। গাইড নিয়ে আসলো এক পথের পাশের এক পরিচ্ছন্ন খোলামেলা রেস্তোরায় । সেখানে থাই আর সি ফুড ছাড়া আর কিছু নেই। আমার কষ্ট হলো কিন্ত বাকি দুজনের কোন বিকার নেই তারা খুশী।


ভাবে সেদ্ধ মাছ , বাপ বেটার ভাষায় অপুর্ব নাকি স্বাদ !!

ছেলে বল্লো 'তুমি এটা খেতে না পারলে টমিয়াম স্যুপ দিতে বলো' দিলাম অর্ডার আসলো স্যুপ, হাসবো না কাঁদবো বুঝলাম না :(


চিংরি, স্কুইড আর ঝিনুক দিয়ে রাঁধা টমিয়াম স্যুপ

যাক আমি ফল টল খেয়ে বের হয়ে আসলাম। বাপ ছেলের ভাষায় খাওয়া নিয়ে এত নখরা করলে আমাকে নিয়ে নাকি আর কোথাও ঘোরা সম্ভব নয়।

এরপর সি চাং এর সেই সমুদ্রতীর যার প্রেমে পড়েছিলেন রাজা পন্চম রামা, বানিয়েছিলেন শুধু তাদের জন্যই সংরক্ষিত বিনোদনকেন্দ্র । পাথরের উপর বসে আমারও মনে হচ্ছিল থেকে যেতে পারতাম যদি এখানে সারা জন্মের মত , কি ভালোই না হতো আহা। বাস্তববাদী ছেলে আর স্বামীর ডাকে ফিরে আসলাম বাস্তব জগতে । ফিরে চল্লাম দিনরাত জেগে থাকা কোলাহলমুখর ব্যাংককের উদ্দেশ্যে।


সেই অপরূপ সমুদ্রতীরে


ছবিগুলো সব আমার ছেলের তোলা আমাদের নিজস্ব ক্যামেরায় যার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫৬
১০০টি মন্তব্য ১০০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×