somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামোজী ফিল্ম সিটি এক মজার ভ্রমন( তৃতীয় পর্ব)

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফুল গাছ দিয়ে বানানো অপুর্ব সেই আমব্রেলা গার্ডেন
রামোজীর হলিউড ছেড়ে গাইড তখন আমাদের নিয়ে এসেছে বিস্ময়কর এক বাগানে।নাম আমব্রেলা গার্ডেন,যা আমাদের অন্য জায়গায় যাবার পথে বাসের জানালা দিয়ে চোখে পড়েছিল।আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন ছবিতে মানুষের হাতে ফুলগাছ দিয়ে তৈরী সেই অপরূপ নৈসর্গিক সৃষ্টি।

উঠতে ইচ্ছে করছিল না কিন্ত গাইডের সেই হুমকির কথা মনে করে ফিরে আসলাম। সেই যে প্রথমেই বলে দিয়েছিল সময়মত না আসলে বাস ছেড়ে দেবে। তাই তার বাঁধা সময় ১৫ মিনিটের মধ্যে এসে উঠে বসলাম বাসে যার যার নির্ধারিত সিটে। ঘড়ির কাটা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের বাস ভ্রমনও চলছে।
মোড় ঘুরতেই চার রাস্তার ঠিক মাঝখানে এক দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারায় চোখ আটকে গেল। যদিও পানি পড়ছিল না তবুও বাসের জানালা দিয়ে তার একটি ছবি না তুলে পারলাম না ।


অভিনব আকৃতির এই ফোয়ারা যা কিনা দেখতে একটি পানির জগের মত
গাইড জানালো এবারে আমাদের গন্তব্য একটি সেট, সেটা হলো ভারতীয় চ্যানেলের বিখ্যাত এপিক এবং মেগা সিরিয়াল মহাভারতের। সাধারনত এই ধরনের অস্থায়ী সেটগুলো ভেংগে ফেলারই নিয়ম । কিন্ত এই অপুরূপ সেটটা তারা প্রদর্শনীর জন্য রেখে দিয়েছে। তাহলে ভেবে দেখুন কেমন সেই সেট ।সেখানে ভেতরে ঢোকার জন্য বিশাল লম্বা লাইন।লাইন ধরে একটু একটু করে এগুতে এগুতে প্রবেশ করলাম এক করিডোরে ।


মহাভারতের সেটে প্রবেশ আমার।

একটা করিডোর ধরে এগিয়ে যাচ্ছি, দেয়ালে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি যাদের আমি চিনতে পারি নি। তেমনি একজনের ছবির সামনে দাড়ালাম।


ব্লগার সিদ্ধার্থ জানালো ইনি হলেন দেবতা শ্রীকৃষ্ণ

সেই সেটের জাঁকজমক আর ঠাট ঠমক দেখে আমিতো দিশেহারা।কি যে রংগীন ঝকমকে সুক্ষ কারুকাজ আর জৌলুশে ভরা মহাভারতের সেই ভারত রাজ্যের রাজধানী হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদ।সাধে কি আর কৌরব আর পান্ডব দুই কাজিন ভাইরা বছরের পর বছর ধরে সেই সিংহাসনের জন্য যুদ্ধ করেছিল।বর্তমানে সেই সভাগৃহে বিভিন্ন চরিত্রের মানুষগুলোর মুর্তি বানানো । প্রথমেই ছিল কৌরবদের সভাগৃহ যেখানে দুর্যোধন ও তার সিন্ডিকেটরা বসা। দুর্যোধন সহ মোট একশ জন পুত্রের পিতা অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্র সেখানে বসা ছিল কিনা বুঝলাম না।


কৌরবদের সেই জাঁকজমক পুর্ন সভা কক্ষে বসে আছে দুর্যোধন তার কয়েকজন ভাই এবং কুটবুদ্ধি সম্পন্ন মামা শকুনি।

এর পরেই রয়েছে পান্ডবদের সভাকক্ষ যেখানে কৌরবদের চির শত্রু পান্ডব রাজ যুধিষ্ঠির তার ভাইদের নিয়ে বসে আছে। নিরীহ গোবেচারা রাজা যুধিষ্ঠির কৌরবদের সাথে পাশা খেলায় হেরে যায় ।খেলার শর্তানুযায়ী রাজ্যহারা হয়ে যুধিষ্ঠির ১২ বছর ধরে স্ত্রী দ্রৌপদী আর চার ভাই অর্জুন, ভীম,নকুল আর সহদেবকে নিয়ে বনবাসে ছিলেন।


এটা হলো কৌরবদের প্রতিপক্ষ পান্ডবদের সভাকক্ষ, যেখানে সরলমতি যুধিষ্ঠির তার ভাইদের নিয়ে বসে আছে।মনে হয় বনবাসে যাবার আগের দৃশ্য
আমি মনে মনে ভাবছিলাম কত কোটি টাকাই না জানি খরচ হয়েছিল এই সেটটা বানাতে। সেদিন পেপারে পড়লাম পৃথিবীর সমস্ত দেশের মধ্যে ভারতই হলো একমাত্র দেশ যার এক তৃতীয়াংশ লোকই নাকি গরীব। আর সেখানে টাকার কি অপচয়।যাক এসব কথা ভাবলে আমাদের এত টাকা খরচ করে রামোজী দেখতে আসা বৃথা যাবে। তাছাড়া আমরা বিদেশী পর্যটক ভেবে আর কি করবো যেখানে শত শত ভারতীয় পর্যটকরাই দারুনভাবে উপভোগ করছে সেই ট্যুর।
আমরা প্যাসেজ দিয়ে হেটে হেটে দেখছি দুপাশে তৈরী সেট।অবশ্য তার ভেতরে ঢোকার রাস্তা আটকানো।
যদিও আমি সিরিয়ালটি দেখিনি তবে যতদুর মনে পড়ে কলকাতার অভিনেত্রী রূপা গাংগুলী পান্ডবদের পন্চ ভ্রাতার এক মাত্র স্ত্রী দ্রৌপদীর চরিত্রে অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছিল দারুন।


মহাভারত সিরিয়ালের করিডোরে আমি

সেই ঝকমকে রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে নেমে আসলাম মাটির পৃথিবীতে।
১২টা ৪৫ বাজে, শুরু হয়ে গেছে স্পিরিট অফ রামোজী শো। রামোজীতে নেমেই যেই চত্বরটার সামনে হেল্প ডেস্কে গিয়েছিলাম তার পাশেই ইউরেকা কমপ্লেক্স। ধীরে ধীরে হাজির হোলাম সেই বিশাল ইউরেকা কমপ্লেক্সে।সিড়ি বেয়ে উঠে হাতের বা দিকে সেই হল ঘর যেখানে শুরু হবে স্পিরিট অফ রামোজী শো।


ইউরেকা কমপ্লেক্স
প্রায় এক হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন বিশাল এক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলে শুরু হলো স্পিরিট অফ রামোজী শো।একদিকে স্টেজ তার উল্টোদিকে গ্যালারীর মত থাকে থাকে উচু হয়ে ওঠা বসার জায়গা।তিল ধারনের জায়গা না থাকা সেই শোতে আমাদের ঢুকতে একটু দেরী হয়েছিল।অনেক কষ্টে বসার জায়গা পেলাম।নাহলে অনেক দর্শকের মত আমাদেরও এক ঘন্টা ব্যাপী এই অনুষ্ঠান দাড়িয়ে দেখতে হতো। সেই লাইভ শোতে বিভিন্ন পারফর্মাররা একে একে বিভিন্ন সিনেমার জনপ্রিয় নাচ গান করে দেখালো। এ ছাড়াও ভারত বিখ্যাত এ্যক্রোবেট শিল্পীর অসাধারন নৈপুন্যে ভরা এ্যক্রোবেট দেখে সত্যি মুগ্ধ হোলাম। সবশেষে ভারতের জাতীয় সংগীত বন্দে মাতরম গানের সাথে দলীয় নাচ দিয়ে শেষ হলো সেই অসাধারন অনুষ্ঠান।


স্পিরিট অফ রামোজী অনুষ্ঠানের শেষ দৃশ্য

চলবে ...।
ছবিগুলো আমাদের তোলা ....

Click This Link
দ্বীতিয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭
৬৭টি মন্তব্য ৬৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×