somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল, একজন পিতা, একজন শাসকের মৃত্যু উপলক্ষে

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একরাশ স্বপ্ন নিয়ে সুদুরের পানে চেয়ে থাকা থাই রাজা ভুমিবল
থাইল্যান্ডবাসীর পিতা এবং তাদের হৃদয় বলে উল্লেখিত রাজা ভুমিবল লাখো দেশবাসীকে কাঁদিয়ে আজ বিকেলে না ফেরার দেশে চলে গেলেন । সারা পৃথিবীতে সর্বাপেক্ষা দীর্ঘদিন সিংহাসনে আরোহনকারী রাজা বলে স্বীকৃত ভুমিবল পরিনত বয়সেই মারা গেছেন। সন্তানহীন চাচার সিংহাসনের অধিকারী হয়েছিলেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে। সত্তর বছর শাসনকালে দেশের বহু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় ঐক্যের প্রতীক ছিলেন রাজা। তার প্রতি দেশের প্রতিটি জনগনের অকুণ্ঠ ভালোবাসা নিখাদ এবং সন্দেহাতীত।


রাজা ভুমিবল আদুলেয়াদজে

নানা রকম শারিরীক অসুস্থতার কারনে অনেকদিন ধরেই তিনি হাসপাতালে ছিলেন, অনেক দিন ধরেই তিনি তার প্রিয় প্রজাদের সামনে আসতে পারেন নি। গত কয়েকদিন ধরে রাজকীয় প্রাসাদ সুত্র এবং হাসপাতাল সুত্র থেকে তার চরম অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে কানাচে। আমরাও এ ব্যপারে ছিলাম উদবিগ্ন, খোজ নিচ্ছিলাম বিভিন্ন তথ্য সুত্র থেকে। হাজারও থাইবাসী রাজতন্ত্রের প্রতীক হলুদ রঙ আর সুস্থতার জন্য গোলাপী রঙ এর পোশাক পড়ে সিরিরাজ হাসপাতালের সামনে দিনরাত ক্রমাগত প্রার্থনা করে যাচ্ছিল।


সিরিরাজ হাসপাতালের সামনে কান্নারত থাই জনগন
থাইল্যান্ডে বেশিরভাগ জনগন জন্মে এই রাজাকেই দেখেছেন সিংহাসনে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এক আশাহীন জাতিকে টেনে এনেছেন উন্নতির শিখরের দিকে। দিকভ্রান্ত জাতিকে নাবিকের মতন আলোর পথ দেখিয়ে তীরে তুলে এনেছেন একান্ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়।
চক্রী রাজবংশের নবম রামা রাজা ভুমিবলের মাঝে ছিলনা কোন নিষ্ঠুরতা, ক্রুরতা,প্রতিহিংসা/ প্রতিশোধপরায়নতা। ছিলেন নির্লোভ এক অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব। আর দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ছিল অসীম দরদ। যার জন্যই তিনি দেশের আপামর জনগনের হৃদয়ের গভীরে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সন্মানিত, ছিলেন ভালোবাসার আর আস্থার এক স্থান । এই ভালোবাসা চির অটুট থাকবে তাদের হৃদয়ে এই বিশ্বাস প্রতিটি থাইবাসী মনেপ্রানে লালন করে ।
সেই পথনির্দেশক , আধুনিক থাইল্যন্ডের সব ধরণের উন্নয়নের রূপকার রাজা ভুমিবলের জন্য বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অনেক অনেক আবেগীয় লেখা হয়েছে। তার থেকে বেছে একটা শেয়ার করলাম সবার সাথে যা পোষ্ট করা হয়েছিল রাজার মৃত্যুর খানিক আগে।


আকাশপানে চেয়ে ক্রন্দনরতা

"থাইল্যান্ডের বাইরে আমার বন্ধুরা।

তোমরা হয়তো অবাক হচ্ছো তোমাদের সব থাই বন্ধুর প্রোফাইল ছবিতে আমাদের রাজার ছবি দেখছো। ভাবছো কি হলো?
কারন হলো আমাদের প্রিয় রাজা যে ভালো নেই, আমরা সবাই তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।
তোমরা হয়তো আরো অবাক হচ্ছো কেন থাই জনগন তাদের রাজাকে এত ভালোবাসে?
আমাকে গর্বের সাথে বলতে দাও।
আমাদের রাজা ভুমিবল তার দীর্ঘ সত্তর বছরের রাজত্বকালে কখনো অন্য রাজার মত বিলাসী জীবন যাপন করেন নি। আমি যতদুর মনে করতে পারি তিনি দিন রাত জনগনের সেবায়, তাদের উন্নতির জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন।
তিনি তার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছেন তার প্রজাদের অবস্থা দেখতে। যেখানে আমরা যেতেও সাহস করি না। তার হাতে থাকতো মানচিত্র আর পেন্সিল। নির্মান করেছিলেন রাজার অধীনে হাজারের ও উপরে বিভিন্ন প্রজেক্ট, যেমন পানি, কৃষি, ডেইরী, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।


কর্মঠ রাজা ভুমিবল
তার রাজপ্রাসাদ অন্য রাজাদের প্রাসাদের মত ছিল না। সেই প্রাসাদ ছিল তার নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার গবেষণাগার যা পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োগ করা হয়েছিল সাফল্যের সাথে।
শুধু আমাদের দেশের রাজা বলেই যে আমরা তাকে ভালোবাসি তা নয়। তাকে ভালোবাসি কারন তিনি সারা জীবন সাধারন মানুষের সাথে সাধারন মানুষের মত কাজ করে গেছেন। কিন্ত তার বদলে উনি কখনো আমাদের কাছে কিছু চান নি।
এই জন্য থাই জনগনের কাছে আমাদের রাজা ভালোবাসা আর ভালোমানুষের প্রতীক।
তোমাদের ধর্ম যাই হোকনা কেন অনুরোধ রইলো আমাদের প্রিয় রাজার সুস্থতার জন্য একটুখানি প্রার্থনা "
লেখক :
Tatrawee harikul
কিন্ত না লাখো মানুষের কোন প্রার্থনাই অবিসংবাদিত রাজা ভুমিবল আদুলেয়াদজে কে সুস্থ করতে পারে নি। আজ বিকেল তিনটা বায়ান্ন মিনিটে সমগ্র দেশবাসীকে কাদিয়ে ৮৮ বছর বয়স্ক রাজা বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন রোগের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে হার মানলেন। নির্বান লাভ করলেন জীবনের জন্য। সন্ধ্যা সাতটায় আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে মৃত ঘোষনা করা হলো। তার একমাত্র ছেলে এখন থাইল্যান্ডের রাজা বলে ঘোষিত হলো।


হাসপাতাল থেকে পরদিন রাজার মরদেহ রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার পথে পিনক্লাও ব্রীজের উপর শোকের কালো পোশাকে লাখো থাইবাসী, গাড়ি বহরকে একটিবার নিজ চোখে দেখার আশায়


কালো পোশাকে লাখো থাইবাসী রাজপ্রাসাদের সামনে সানাম লুয়াং চত্বরে
লেখাটির মাধ্যমে এক অসাধারন দেশপ্রেমিক রাজা, এক পিতার মত শাসকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।

সব ছবি নেট থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৬
৫১টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×