দুদিন আগে বাসার কাছেই এক ঝকঝকে তকতকে শপিং মলে ঢুকতেই শুনি কুক্কুরুককুউউ অর্থাৎ উচ্চস্বরে এক মোরগের ডাক। চমকে গেলাম এই ভেবে যে এমন আবদ্ধ পরিবেশে তার উপর এই ঝলমলে আলোয় জীবন্ত মোরগ ডাকছে দেখি! তা বাবাজী এলো কোথা থেকে! মনে পরলো রুশ উপকথার সেই হলদে ঝুটি মোরগ বইটির ছড়াটি :-
"হলদে ঝুটি হলদে ঝুটি,
মাথায় মুকুট, সোনার টুপি,
তেল চুক চুক তোমার গা,
রেশমী তোমার দাড়িটা,
জানালা দিয়ে মুখ বাড়াও
মটরশুঁটি নিয়ে নাও"
মটরশুঁটির লোভে মোরগটা যেই মুখ বাড়িয়েছে অমনি ধূর্ত শেয়াল খপ করে তাকে ধরে সোজা তার ডেড়ায়। বাচার জন্য মোরগতো সমানে তার বন্ধুদের ডাকছে। কিন্ত এখানে কেমন করে সেই হলদে ঝুটি, রেশমি দাড়িওয়ালা মোরগ এলো! একটু এগিয়ে যেতেই দেখি সাদা ধবধবে এক অদ্ভুত আকৃতির পিচ্চি মোরগ হেটে বেড়াচ্ছে আর তার চারিদিকে বুড়ো গুড়ো নির্বাক দর্শনার্থী, যারা নি:শব্দে ছবি তুলছে! আর তারই মাঝে তিনি কিনা খানিক বাদেই বাদেই গলার স্বর সপ্তমে তুলে তীব্র স্বরে ডেকে চলেছে কোকোর কো---কোকর কো--।
এই পিচ্চির গলা দিয়ে এত জোরে আওয়াজ শুনে সবাই যে অবাক তা আমি নিশ্চিত, কারণ আমিও অবাক হয়েছি।
ওখানে ছোট একটা সাইনবোর্ডে লেখা আমেরিকান সিল্কি চিকেন। সাদা ধবধবে এই মুরগী/মোরগ দেখে বিস্মিত আমি রুমে এসে নেটে দেখলাম আমেরিকান লেখা এর আদি বাস হলো চীন। বহু বছর আগে বিখ্যাত ইতালীয় ব্যাবসায়ী এবং পরিব্রাজক মার্কোপোলো ইতালি থেকে চীনে এসে এই অদ্ভুত আকৃতির মোরগের দর্শন লাভ করেন। তারপর একদিন ইতালি ফিরে যাবার সময় এই মুরগির কয়েক পিস নমুনা হিসেব নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে অদ্ভুত আকৃতির এই মুরগী সিল্কি চিকেন। কিন্তু নাম হয় আমেরিকার। তাদের ঝুটির আকারে অনেকেই বিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগা, বা জিমি হেনড্রিক্সের সাথে খুজে পান

দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ছোট আকারের এই মুরগির গায়ের লোম দুধ সাদা আর হাত বোলালে অনুভূতি হবে নরম সিল্কের কাপড়ে হাত বোলানোর মত। এর একটি জাতে দাড়ি আছে, আরেকটি দাড়ি ছাড়া। এছাড়াও নেটে পড়লাম অত্যন্ত শান্তশিষ্ট স্বভাবের এই মুরগীগুলো নাকি বাড়ির পেছনের আংগিনার বাগানের শোভা বর্ধন ছাড়াও বাচ্চাদের খেলার সাথীও হয়ে থাকে।
সিল্কি চিকেন দুধ সাদা রঙের হলেও তাদের মাংস ও হাড় কয়লার মত কালো কুচকুচে। এই মাংস নাকি খনিজ পদার্থে ভরপুর এবং অনেক দামী। খাবার টেবিলে বিভিন্ন রকম স্যুপ হিসেবে পরিবেশিত হলেও ফ্রাই বা স্টেক হয় না শুধু কালো রঙের কারনে।
ওরা কি আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী কালা ভুনার নাম শুনে নাই

পাশেই বক্সে এই ব্যাতিক্রমী মুরগীগুলো দেখলাম
ভিন্ন ধরনের আরেকটি মুরগীর মুখের ক্লোজআপ।
লেখাটি রিপোস্ট করলাম, কারন আমি জানতাম না সামুর সাম্প্রতিক অবস্থার কথা

সেখানে আমি সাজিদের একটি মন্তব্য আছে আর প্লাস চিনহ, কিন্ত সেটা পড়া যাচ্ছিল না। আমি তাদের আবার অনুরোধ করবো লেখাটিতে কিছু বলে যেতে।