
কোকুইহাল্লা হাইওয়ে
ঢাকা ফিরবো কিন্ত আমার ছেলে যেই শহরে থাকে সেখানে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নেই। চার ঘন্টা ড্রাইভ করে যেতে হবে ভ্যাংকুভার। সকালে উঠে রেডি হয়ে বের হবো তার আগেই আমার ছেলের বেড়ালটা পায়ের ফাক দিয়ে ফুরুত করে বাইরে বেরিয়ে গেল। ইনডোর ক্যাট ঘরেই সারাদিন থাকে সে কি না বাইরে সিড়ি দিয়ে উঠে সোজা রাস্তায়। আমার ছেলে গাড়ির ভেতর আমার স্যুটকেস রাখছিল সেগুলো ফেলে দিয়ে সে হানু হানু করে চিৎকার। তাড়াতাড়ি তার স্ন্যাক্স এর কৌটা ঝাকাতেই সে দৌড়ে আসলো ঘরে। সাথে সাথে তাকে বেডরুমে রেখে দরজা বন্ধ করে হাপাতে হাপাতে মা ছেলে গাড়িতে উঠলাম।

যাই হোক আল্লাহর নাম নিয়ে রওনা দিলাম, আমি একা আসবো পরদিন রাতে ফ্লাইট। ছেলে বল্লো "চলো একদিন আগে যাই তোমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিতে, পথে অনেক সুন্দর দেখার যায়গা আছে ওগুলোও দেখা যাবে"। বিশাল চওড়া চার লেনের হাইওয়ে আর তার দু পাশে পাইন আর ফারের ঘন বন আর পাহাড় যার সৌন্দর্য আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। আমি এর আগের বার টরোন্টো গিয়েছি, আমার ভালো লাগেনি। কিন্ত বৃটিশ কলম্বিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আমি বিস্মিত। চওড়া এই পথের নাম কোকুইহাল্লা হাইওয়ে ৫। হোপ নামে এক শহরে খাবার জন্য এক জাপানি রেস্তোরাঁয় গেলাম, ছেলে বল্লো এখানে সিলভেস্টার স্ট্যালোনের র্যাম্বো সিরিজের ফাস্ট ব্লাডের স্যুটিং হয়েছে। এছাড়াও এখানে প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে কিন্ত অচেনা পথ আর কতক্ষণ সময় লাগবে সেই ভাবনায় আর বেশি কিছু দেখা হলো না। কিন্ত এখানকার বিখ্যাত ন্যাশনাল পার্ক নাম কোকুইহাল্লা ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কটা অবশ্যই দেখতে হবে, কারন এখানেই আছে সেই বিখ্যাত ওথেলো টানেল ।

কোকুইহাল্লা ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা পার্কের কাছে চলে আসলাম, পার্কিং এ গাড়ি রেখে আমরা গাছের ছায়া ঘেরা এক রাস্তা ধরে এগুতে লাগলাম। হাটতে হাটতে একটা টানেলের সামনে আসলাম। এটাই হোলো বিখ্যাত ওথেলো টানেল যা এক সময় কেটেল ড্রাইভ রেলওয়ের রেলপথ ছিল। এখন আর এই পথে রেল চলাচল করে না, আসে পর্যটকরা। এর কয়েকদিন আগে আমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম। সেই পা নিয়ে খোড়াতে খোড়াতে আমি যখন একটু পর পর মোট সাড়ে তিন কিমি অন্ধকার পাচটা টানেল অতিক্রম করছি তখন দেখলাম সদ্য কৈশোর পেরোনো এক যুবক তার হাটু থেকে পুরো পা টাই ভানংগা, লোহা দিয়ে আটকে রেখেছে, ক্রাচ হাতে সেও তার আত্নীয় স্বজন এর সাথে সেই বিখ্যাত টানেল দেখতে এসেছে।

ওথেলো টানেলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে খারা গিরিখাতের মধ্যে তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে এক শীর্নকায়া ঝর্না, সেগুলোই শীতের শেষে বরফ গলে হয়ে পরে দুরন্ত নদী নাম তার কোকুইহাল্লা।


কোকুইহাল্লার টানেলগুলো ওথেলো টানেল নামে পরিচিত, শেক্সপীয়ার প্রেমিক ইঞ্জিনিয়ার এই নামকরণ করেছিলেন



ভ্যানকুভারের পথে

এয়ারপোর্টে বিদায় নেয়ার সময় আমার ছেলে শুধু বল্লো "তুমি আর কখনো রাতের ফ্লাইটে কোথাও যেওনা"। আসলেও প্রচন্ড কষ্ট হয়েছে তিন রাত না ঘুমিয়ে।
বার বার কোকুইহাল্লা শব্দটি ব্যবহার করছি এটি একটি স্থানীয় আদিবাসী শব্দ।
পাসওয়ার্ডটা মনে আছে কিনা তার জন্য এই রচনা। এর ভেতর কোন গভীর অন্তর্নিহিত কিছু খুজতে যাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




