somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সুখী মানুষের কথা (অনুবাদ কবিতা)

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হে পথিক, রেখাঙ্কিত এ সমাধিগুলো দেখে,
কখনো আমার প্রতি করুণা কাতর হয়োনা।
আমাকে সমাহিতদের মাঝে দেখতে পেয়ে
পরিতাপ করে কিছু বোলনা।

যাদেরকে আমি ফেলে গেলাম, আমার স্ত্রী
আর সন্তানেরা, এবং তাদের সন্তানেরাও,
সদয় ছিল আমার প্রতি। তাদের সাথে থেকে
আমি সারাটা জীবন খুব সুখীই ছিলেম।

তিন তিনটে ছে্লেকে আমি বিয়ে দিয়েছিলেম,
তাদের ছেলেদেরকে রাতে দোল-নিদ্রা দিতেম।
মৃত্যুচিন্তা কিংবা কোন সন্তাপ বিষাদের কথা
আমার মনে কখনো কোন মনস্তাপ আনেনি।

এখন, আর কোন অশ্রুপাতের প্রয়োজন নেই।
এখানে তারা আমাকে রেখে গেছে, এই নীরব
শ্রান্তিধামে বছরের পর বছর ধরে থাকার জন্য,
সেসব পুণ্যাত্মাদের নৈকট্যে, যারা আশীর্বাদধন্য!


মূলঃ Edwin Arlington Robinson

অনুবাদঃ খায়রুল আহসান

কবি সম্পর্কে পাদটীকাঃ আমেরিকান এই কবি ১৮৬৯ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে Head Tide, Lincoln County, Maine এ জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের পর তার পরিবার ১৮৭০ সালে Gardiner, Maine, এ বসতি স্থাপন করে। শৈশবে তিনি মোটেই সুখী ছিলেন না। এ সময়টিকে তিনি পরে 'stark and unhappy' বলে অভিহিত করেছিলেন। তার পিতামাতা মনে প্রাণে একটি মেয়ে চেয়েছিলেন, কিন্তু ছেলে হওয়াতে তারা ছয় বছর পর্যন্ত তার কোন নাম রাখেন নি। তার ছয় বছর বয়সের সময় তারা তাকে নিয়ে একটি অবকাশ শিবিরে বেড়াতে যান। সেখানে অবকাশযাপনকারী অন্যান্য সবাই মিলে ঠিক করেন যে তার একটি নাম রাখা দরকার। তারা নামের একটি লটারী করেন। একটি হ্যাটের মধ্যে কিছু নাম লিখা কাগজের টুকরা রেখে Arlington, Massachusetts এর একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে দিয়ে ড্র করান।

অসুখী শৈশব তার অনেক কবিতাকেই নৈরাশ্যের আঁধারে আচ্ছাদিত করে রাখে। তার এক ভাই অত্যধিক মাদকাসক্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। অপর এক ভাই, Herman, যিনি খুব 'handsome and charismatic' ছিলেন, তারই প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন। তিনিও ব্যবসায়ে মার খেয়ে মদ্যপ জীবন যাপন করতে শুরু করেন এবং স্ত্রী-পুত্র-পরিবার পরিত্যাগ করে চরম দারিদ্র্যে থেকে একটি দাতব্য হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর Edwin তার বিধবা ভাবী ও প্রাক্তন প্রণয়ী Emma Robinson এর প্রতি পুনরায় প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন। এমা তার প্রণয়ে সাড়া দিলেও তার বিয়ের প্রস্তাব দুই দুইবার ফিরিয়ে দেন। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি চিরতরে Gardiner ছেড়ে New Yorkএ চলে আসেন। সেখানে তিনি একজন দরিদ্র কবির ভাবমূর্তি নিয়ে সেখানকার কবি, লেখক, চিত্রশিল্পী, সমালোচক, উঠতি আঁতেল ও অন্যান্য সংস্কৃতিমনাদের সাথে উঠাবসা শুরু করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'The Torrent and the Night Before' প্রকাশ করেন। এটি তিনি তার মাকে একটি 'surprise gift' হিসেবে উপহার দেয়ার জন্য মনস্থ করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বইটি তার মায়ের হাতে পৌঁছার মাত্র দিনকয়েক পূর্বে তার মা Mary Palmer Robinson ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'The Children of the Night' বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর গুণমুগ্ধ পাঠকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট Theodore Roosevelt, যিনি তার বন্ধু Kermit এর পিতাও ছিলেন বটে। তার আর্থিক অনটনের কথা জানতে পেরে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তাকে New York Customs Officeএ একটি চাকুরী দিয়েছিলেন। যতদিন রুজভেল্ট কর্তব্যরত ছিলেন, ততদিন তিনি সেই চাকুরীতে ছিলেন, পরে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ধীরে ধীরে তার কাব্যসাফল্য বৃ্দ্ধি পেতে থাকে। তার জীবনের শেষ কুড়িটি বছরে তিনি New Hampshire এর MacDowell Colonyতে regular summer resident হিসেবে যেতেন। সেখানে বেশ কয়েকজন বিদগ্ধ রমণীকূল তার একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি তাদের প্রশ্রয় না দিয়ে একাকীত্বই বেছে নেন এবং বিয়ে করা থেকে বিরত থাকেন। ১৯৩৫ সালের ০৬ এপ্রিল তারিখে তিনি ক্যান্সারে ভুগে New York Hospital (বর্তমানে New York Cornell Hospital) এ মৃত্যুবরণ করেন।

কবি Edwin Arlington Robinson ১৯২০ এর দশকে তিন তিনটি পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯২২ সালে তার প্রথম Collected Poems এর জন্য, ১৯২৫ সালে 'The Man Who Died Twice' এর জন্য এবং ১৯২৮ সালে 'Tristram' এর জন্য।

(তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট/উইকিপিডিয়া)

মূল ইংরেজী কবিতাটি নীচে উদ্ধৃত হলোঃ


A Happy Man

When these graven lines you see,
Traveller, do not pity me;
Though I be among the dead,
Let no mournful word be said.

Children that I leave behind,
And their children, all were kind;
Near to them and to my wife,
I was happy all my life.

My three sons I married right,
And their sons I rocked at night;
Death nor sorrow never brought
Cause for one unhappy thought.

Now, and with no need of tears,
Here they leave me, full of years,
-- Leave me to my quiet rest
In the region of the blest.

ঢাকা
১২ জানুয়ারী ২০১৪
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
(ইতোপূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত)

কবি Edwin Arlington Robinson এর "When these graven lines you see, Traveller, do not pity me;" ("হে পথিক, রেখাঙ্কিত এ সমাধিগুলো দেখে কখনো আমার প্রতি করুণা কাতর হয়োনা") এই পংক্তি দুটো পড়ার সাথে সাথে আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে । এই কবিতাটি অনুবাদ করার ৭/৮ মাস আগে আমি আমেরিকার টাম্পা বে'র নিকটস্থ একটি কবরস্থানে গিয়েছিলাম আমার বন্ধুর এক প্রয়াত মিশরীয় বন্ধুর দাফন কার্যে অংশ নেয়ার জন্য। সেখানে মুসলমানদের জন্য আলাদা কোন কবরস্থান নেই। খৃষ্টান সিমেট্রীর পাশেই আলাদা একটা জায়গায় মুসলমানদেরকে সমাহিত করা হয়। সেখানে কোন এক মুসলিম নারী নাজমা বেগমের কবর দেখে আমি এই ব্লগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম এখানেঃ অজানা অদেখা কোন এক নাজমা বেগমের সমাধিতে
কবিতার এই পংক্তিদুটো পড়ে আমার মনে খালি সেখানে দেখা সিমেট্রী/গোরস্থানের ছবি ভাসতে থাকে। পাঠকদের সাথে আমার সে স্মৃতি এবং বর্তমান অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আজ সকাল থেকে ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি করে কিছু ছবি বের করলাম। এই ছবিগুলোর সাথে কবির সমাধির বা কবিতার কোন বাস্তবিক সম্পর্ক নেই। তবে কবিতার ভাবের সম্পর্ক আছে। ছবি, কবিতা ও তার অনুবাদ যদি একজন পাঠককেও আলোড়িত করে, তবে শ্রম সার্থক জ্ঞান করবো।











সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৩৬
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×