somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কবিতার নায়িকা

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি ও ছবির মাঝে কস্মিনকালেও চর্মচক্ষে দেখা সাক্ষাৎ হয় নাই। তা না হলে কি হবে, আজকাল সর্বপ্রসারী অন্তর্জালের কল্যাণে তারা একে অপরের বেশ সুপরিচিত, যেন অনেক দিনের চেনা বন্ধু। উভয়ে লিখতে পড়তে ভালবাসেন, তবে কবির ভালবাসার বিষয়ের পরিধিটা ক্ষুদ্র হলেও ছবির ক্ষেত্রে ভালবাসার আর পারঙ্গমতার আরো অনেক বিষয় রয়েছে। একটা ভাল জব করার পাশাপাশি তিনি রাঁধতে ও খাওয়াতেও ভালবাসেন, যদিও নিজে খেতে তেমন পছন্দ করেন না। তিনি সঙ্গীত প্রেমী, কথাশিল্পী, কবিতাও ভালবাসেন-অবশ্য লিখেন খুব কমই। হালে তিনি পিয়ানো বাজানো শিখেছেন, আলাদা একটি কক্ষে রাখা আছে সেটা, সেখানেও তিনি টুং টাং নিয়মিত চর্চা করে যান। ছাত্রাবস্থায় তিনি একজন ভাল তার্কিক ছিলেন। এজন্য তার লেখায়ও যুক্তির প্রাবল্য।

কবি ও ছবি দুজনে দুই ভুবনের বাসিন্দা। কবি নিভৃতচারী হলেও সুখী, ছবি বন্ধু বৎসল হলেও দুঃখী। কৈশোর উত্তীর্ণ বয়সে প্রেমের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে ছবি পছন্দের মানুষটিকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। এতে প্রথমে মায়ের কিছুটা অমত থাকলেও দরদী বাবার সায় থাকায় পরে সবাই তা মেনে নেয়। প্রথম ভাল লাগাটাও শুরু হয়েছিল দারুণ একটা বাংলা সিনেমাটিক ফর্মে। একই বিল্ডিং এ থাকতেন তারা। উভয়ে পড়তেন ঢাকা ভার্সিটিতে। একদিন ছেলেটির বাসায় কারো একটা জন্মদিনের উৎসব চলছিল। বাসায় অনেক লোকের আনাগোনা। ছবি ভার্সিটি থেকে ফিরে নিজের এপার্টমেন্টে ঢুকতে যাবেন, এমন সময় সিঁড়ির পাশে কমন স্পেসে ছেলেটির সাথে লাগলো এক ধাক্কা। ছবির হাত থেকে নোটবুক, একটা ছোট্ট ওয়ালেট আর একটা বই নীচে পড়ে গেল। ছেলেটা দুঃখ প্রকাশ করে সেগুলো তুলে নিয়ে ছবির হাতে দিল। এর পর থেকে শুধুই প্রেমের অগ্রযাত্রা, অবশেষে শুভ পরিণয়। তারপর একদিন ছেলেটি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে উড়াল দিল। বছর দু’য়েক পর ছবিও তার পিছু নিলেন।

বিদেশে এসে ছবি তার সুখের নীড় বাঁধলেন, তিলে তিলে সংসার গড়ে তুলতে থাকলেন। সে নীড়ে একদিন একটা শাবকও এলো। সুখ স্বপ্নে বিভোর ছবির বছরগুলো কিভাবে একে একে পার হচ্ছিল, তার কিছুই তিনি টের পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ একদিন এক দমকা হাওয়ায় সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেল। তার স্বামীর দেহে মরণ ব্যাধির বীজ সনাক্ত হলো। বিদেশ বিভূঁই এ ছবি খুব অসহায় বোধ করতে থাকলেন, কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে গেলেন। মানুষ দুঃখকে মেনে নিতে পারলে আর অসহায় বোধ করেনা। ছবিও শক্ত হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, বিদেশে থেকেই স্বামীর শ্রেষ্ঠ চিকিৎসার জন্য যাকিছু সম্ভব, তিনি সবই করবেন। প্রবাসী বাঙালীদের মাঝে কেউ কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসলেন, কিন্তু কতদিন আর তারা সাহায্য করতে পারেন, সবাই যার যার জীবন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। শত চেষ্টার পরও ছবি তার স্বামীকে বেশীদিন ধরে রাখতে পারলেন না। একদিন তার স্বামী তার সেবা যত্নের জন্য তাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরপারে চলে গেলেন। শুরু হলো এক পক্ষীশাবককে নিয়ে পক্ষীমাতার জীবন যুদ্ধ।

কবির সাথে ছবির পরিচয় হয়েছিল এক সাহিত্য আড্ডায়, যেখানে প্রবাস থেকে ছবি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে অংশ নিয়েছিলেন। কবি সেখানে একটা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। ছবির পছন্দ হয়েছিল কবিতা নয়, কবিকে নয়, কবির আবৃত্তি। এর পর তিনি বহুদিন কবিকে অনুরোধ করেছিলেন স্বকন্ঠে কবিতাবৃত্তি পোস্ট করতে। কিন্তু কবি এ ব্যাপারটাতে খুবই নিরুৎসাহী ছিলেন। তবে টুকটাক আকাশ মেলের মাধ্যমে তাদের মধ্যে জিজ্ঞাসু চিরকুট বিনিময় হতো। কবি একেকদিন একেকটা কবিতা লেখেন আর ভাবেন, জগতের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি তিনি এই বুঝি লিখে ফেললেন। বাহ্যতঃ কবি প্রচারবিমুখ হলেও অন্তরে খুব চাইতেন, সবাই তার কবিতা পড়ুক, পছন্দ করুক এবং প্রশংসা করুক। মাঝে মাঝে খুবই উৎসাহী হয়ে তিনি ছবিকে তার লেখা নতুন কবিতা পাঠাতেন, কখনো কখনো পুরনো কবিতার ঝাঁপি খুলে যেগুলোকে তিনে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন, তার মধ্য থেকে বাছাই করে দু’ একটি পাঠাতেন। মনে মনে খুব চাইতেন, ছবি সেগুলো পড়ে প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিক। কিন্তু ছবি নিছক সৌজন্যের খাতিরে যেটুকু বলার, সেটুকুই বলতেন। কবি যা বোঝার তা বুঝে নিতেন- তার কোন কবিতাই কবিতা হয়নি।

তবে কবি একটা ব্যাপারে খুবই কৃতজ্ঞ বোধ করতেন। ছবি তার কোন কবিতারই তেমন প্রশংসা না করলেও, কবিকে তিনি খুবই আন্তরিকতার সাথে ‘কবি’ বলে সম্বোধন করতেন। কবিকে মাঝে মাঝে তার বন্ধুবান্ধবরাও কবি বলে ডেকে থাকেন। কবি এতে খুশী হন বটে, কিন্তু তাদের এই সম্বোধন কবির মনে রেখাপাত করেনা। কিন্তু ছবি যখন ভার্চুয়ালী সে সম্বোধন করেন, কবি তখন চোখের সামনে ছবির ছবি দেখতে পান। আর কারো ডাকে তিনি এতটা বিগলিত হন না। সেদিন কবি তার নিজস্ব কিছু কবিতা পড়তে পড়তে একটা কবিতা পড়ে নতুন করে ছবিকে স্মরণ করলেন। এটা যখন তিনি লিখেছিলেন, তখন কবিতা ও সাহিত্য নিয়ে মাঝে মাঝেই ছবির সাথে আলাপ হতো। এখন আর হয় না, কারণ ছবি দীর্ঘদিন ধরে বিপুল বিক্রমে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে জয়ী হয়েছেন। পক্ষী শাবক এতদিনে নিজ পাখায় যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করে আকাশের বুকে নিজের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে। তাই ছবিও শান্তি ও সুখের অন্বেষণে আরেকটা নতুন নীড় গড়েছেন। কবি তার জীবনের এ নতুন অধ্যায়ে অনধিকার চর্চা করতে চান নি। এ কবিতাটা ছবিকে নিয়ে লেখা হলেও কবি কিছুতেই স্মরণ করতে পারছিলেন না যে তিনি তাকে নিয়ে লেখা “কোন এক মৌন শোকার্তের প্রতি” কবিতাটি তাকে সে সময় পাঠিয়েছিলেন কিনা। দ্বিধা সংশয়ের মাঝে কবি তার সে অনবদ্য (তার ভাবনায়) কবিতাটির লিঙ্ক দিয়ে ছবির কাছে একটা ছোট্ট চিরকুট (আকাশ মে’লে) পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, কবিতাটি তিনি তাকে আগে পাঠিয়েছিলেন কিনা। কবি ভেবেছিলেন, আগে না পাঠিয়ে থাকলে এবারে এ কবিতাটা পড়ে ছবি উচ্ছ্বসিত হবেন। কিন্তু ছবি অনেকদিন নিশ্চুপ থেকে কবিতা সম্পর্কে কিছুই না বলে একদিন জানালেন, কবিতার নায়িকা হতে পেরে তিনি নিজেকে খুবই সম্মানিত বোধ করেন। অসুস্থ থাকার জন্য উত্তর দিতে বিলম্ব হওয়াতে তিনি দুঃখও প্রকাশ করলেন।

কবির মনে অনেক কথা খেলা করতে শুরু করলো। মানসপটে ছবির ছবিটা বের করে কবি শুধালেন, তুমি কি শুধুই “কবিতার নায়িকা”?


ঢাকা
১৭ মার্চ ২০১৭
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×