somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‍্যান্ডম থটস...

১২ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উচ্চারণ বিভ্রাট-একঃ “রাঁদেভ্যু”

১৯৭২-৭৩ সালের দিকে এমসিসিতে একসাথে ২/৩ জন ইংরেজী শিক্ষক যোগদান করলেন, কারণ দেশ স্বাধীন হবার পর আগের ইংরেজী শিক্ষকদের মধ্যে কেউই আর কলেজে ফিরে এলেন না। নতুন যোগ দেয়া শিক্ষকদের মধ্যে একজন তরুণ শিক্ষক সবদিক থেকেই ব্যতিক্রমী ছিলেন। শ্যামবর্ণ, লম্বা ছিপছিপে একহারা গড়ন, একটু দার্শনিক গোছের কথাবার্তা। তাঁকেই একমাত্র দেখেছি, কলেজ ফাংশনগুলোতে সব সময় কয়েক মাসের একটা বাচ্চাকে বুকে চেপে সস্ত্রীক যোগদান করতে। কিভাবে কিভাবে যেন জানতে পেরেছিলাম, উনি প্রেমিকাকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে দূরে কোথাও বিয়ে করেছিলেন এবং তার অন্য বন্ধুদের তুলনায় অনেক আগেই ঘর সংসারী হয়েছিলেন, বাবাও হয়েছিলেন। উইলিয়াম সমারসেট মম এর “দ্য লাঞ্চন” গল্পটিতে লেখক ও গল্পের নায়িকার অভিসারে মিলিত হবার একটি জায়গা বোঝাতে ইংরেজী rendezvous (মূল ফরাসী) শব্দটিকে তিনি “রাঁদেভ্যু” উচ্চারণ করে আমাদের সবাইকে চমকে দিলেন। বারবার তার মুখে এই অদ্ভুত উচ্চারণ শুনে আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে শুরু করেছিলাম। পরে শুনেছি, ওটাই নাকি শব্দটার সঠিক উচ্চারণ। (আরো পরে, অর্থাৎ আজই, সহব্লগার "মানবী" এর মন্তব্য থেকে অবশ্য জেনেছি, সেটাও ভুল। সঠিক ফরাসী উচ্চারণ "গঁনদেভ্যুঁ" বা "গ্যঁদেভ্যুঁ"- ফরাসীরা এখানে "r" কে ‘গ’ এর মতো উচ্চারণ করে।) প্রথম দেখাতে এবং শোনাতেই তাঁকে আমার একজন ভাল মানুষ বলে মনে হয়েছিল। ছাত্রদের পড়ানোর প্রতি আন্তরিক, পরিবারের প্রতি বিশ্বস্ত একজন সৎ ব্যক্তি বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের জন্য স্যার কলেজে বেশীদিন টিকতে পারেন নাই, তাকে অচিরেই বিদায় নিতে হয়েছিল। খুব দুঃখ হচ্ছে, আমার স্মৃতি থেকে তাঁর নামটি হারিয়ে গেছে বলে।

উচ্চারণ বিভ্রাট-দুইঃ “ফিলিপিন্স”

১৯৬৭ সালে এমসিসিতে গিয়ে বাংলা শিক্ষক হিসেবে আমরা পেলাম আব্দুল্লাহ আল আমীন স্যারকে। যেদিন স্যারের মুড ভাল থাকতো, সেদিন তার ক্লাসের কোন তুলনাই হতোনা। অনর্গল বক্তৃতা আর অন্তহীন উপমা আর রেফারেন্স টেনে টেনে তিনি খুব চমৎকারভাবে আমাদের বাংলা সাহিত্যের ক্লাসগুলো নিতেন। তবে স্যার পরিস্থিতি বুঝে ফাঁকিও দিতেন প্রচুর, অর্থাৎ আমাদেরকে সেল্ফ স্টাডি দিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখতেন। কিংবা ক্লাস ওয়ার্ক হিসেবে বোর্ডে একটা প্রশ্ন লিখে আমাদেরকে সেটার উত্তর লিখতে দিয়ে নিজে পায়চারী করে বেড়াতেন। এ ছাড়া হাউসমাস্টার হিসেবে তিনি ঠিকই খবর রাখতেন ক্যাডেটরা অবসর সময়ে কী কী বিষয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করতো। অনেক সময় ক্লাসেও তিনি ঠিক ঐ সব বিষয়গুলোর অবতারণা করতেন এবং আমরাও তাঁর সাথে গল্পে মজে যেতাম। আমরা শুনেছিলাম, আমাদের আরেকজন বাংলা শিক্ষক আছেন, তিনি কয়েকমাসের জন্য একটা প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ গিয়েছেন।


কয়েকমাস পর একদিন বাংলা ক্লাসে একজন আগন্তুক আঙুলে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে এবং মুখে শিস দিয়ে একটা গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ক্লাসে প্রবেশ করলেন। নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করলেন। আমরা জানলাম তিনি আমাদের অপর বাংলা শিক্ষক র,ম,ম ইয়াকুব স্যার। তাঁর সম্বন্ধে আমরা আগেই কিছুটা জেনেছিলাম, তাই সীমাহীন উৎসাহ নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “স্যার, এতদিন কোথায় ছিলেন”? তিনি মুখে কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখলেন, PHILLIPINES. তারপর একজনকে সেটা পড়তে বললেন। আমার মনে আছে, তখন পর্যন্ত আমরা PHILLIPINES কে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে “ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ” নামেই পড়ে এসেছি। তাই জিজ্ঞাসিত ক্যাডেটও নির্দ্বিধায় বললো, “ফিলিপাইন”। স্যার সাথে সাথে “Oh, no!” বলে ঘুরে দাঁড়ালেন এবং শব্দটির সঠিক উচ্চারণ ‘ফিলিপিনস’ বলে কয়েকবার প্র্যাকটিস করালেন। সেদিন সারাটা ক্লাসেই তিনি ফিলিপিন্সে তার অভিজ্ঞতার কথা আমাদের শুনিয়েছিলেন এবং তিনি যে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক হিসেবে অন্যদের চেয়ে একটু উচ্চতর সমীহের দাবীদার, সেটাও বুঝিয়েছিলেন।

বেলা শেষের গানঃ

দিনপঞ্জীর হিসেব অনুযায়ী বসন্ত ঋতুর অবসান হয়েছে প্রায় মাসখানেক হলো। তবুও এখনো মাঝে মাঝে একটা কোকিলের ডাক শুনি। আজ সকাল থেকেই সেই কোকিলটা ডেকে যাচ্ছে। তবে বসন্তকালে যেমন একনাগাড়ে ডেকে যায়, তেমনভাবে নয়। মাঝে মাঝে থেমে থেমে, একটু একটু করে। বোঝাই যাচ্ছে, এটা বেলা শেষের গান। প্রতিবছরই কোকিলটা বা কোকিলরা আমাকে তাদের গান শুনিয়ে যায়। আবার আশাকরি শোনাতে শুরু করবে আগামী জানুয়ারীর মাঝামাঝিতে। ততদিনে হয়তো কোকিল কন্ঠ শোনার প্রত্যাশী এ এলাকার অনেক কানই বধির হয়ে যাবে চিরতরে, কারো কারো দেহ মাটির সাথে মিশে গিয়ে বুকে দুর্বা ঘাস ধারণ করবে। তবু নিয়ম করে কোকিল আসবে যাবে, গান শোনাবে, নতুন শ্রোতার জন্ম হবে, নতুন কোন কান অধীর হয়ে থাকবে সে গান শোনার জন্য।

ঢাকা
১২ মে ২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৮
২৯টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×