somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেমন্তের এই প্রথম বিকেলে...

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে শুরু হয়েছে হেমন্তকাল। হেমন্ত, যে ঋতুর পুরোপুরি সঠিক কোন ইংরেজী প্রতিশব্দ নেই। এখন থেকে শুরু হবে এই হ্রস্ব বিকেলটাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি। ভাতঘুম হবে, না লেখালেখি, নাকি দুটোই? (প্রশ্নটা শুধুই আমার মত বিশ্রামে থাকা কর্মহীন অবসরপ্রাপ্তদের জন্য, কর্মরত কোন নিষ্ঠাবান কাজপাগল মানুষের জন্য নয়।) এ প্রশ্নের উত্তর- যেকোন একটি হতে পারে, দুটো কিছুতেই নয়। এখন থেকে লাঞ্চের পর আর বেশী কিছু করার সময় পাওয়া যাবে না। আগে লাঞ্চের আগে বা পরে একটা লম্বা ঘুম দেয়ার পরেও অনায়াসে ঘন্টা দুয়েক বা তারও বেশী কিছু নিটোল সময় লেখালেখির জন্য পাওয়া যেত। এখন যে কোন একটা বিসর্জন দিতে হয়- হয় ভাতঘুম, নয়তো লেখালেখি। লাঞ্চের পর কিছু লিখতে বসলে শেষ করার অনেক আগেই আসরের আযান দিয়ে দেয়। আসরের নামাযের পর না থাকে ঘুমোবার সময়, না থাকে লেখালেখির। এরই মধ্যে আসে মাগরিবের ডাক। লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সন্ধ্যার পরের সময়গুলোও দ্রুত পার হয়ে যায়। রাত জাগার অনুমতি নেই, তাই লেখালেখির জন্য অপেক্ষা করতে হয় পরের প্রত্যুষের জন্য। প্রত্যুষ পরবর্তী এবং মধ্যাহ্ন পরবর্তী সময়টুকুই আমার লেখালেখির জন্য বরাদ্দ।

এ সময়টাতে গ্রামীণ জীবনে নবান্নের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, ক্ষেতে ক্ষেতে পাকা ধান দেখে কৃষকদের মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হেমন্তে কাটা হয় বলে কোন এলাকায় এই ধানকে “হেমতি ধান”ও বলা হয়ে থাকে। গ্রামের গেরস্তদেরকে দেখেছি, হেমন্তের বিকেলগুলোতে চিরপরিশ্রমী এই মানুষগুলোও যেন কিছুটা আলস্যের প্রশ্রয় খোঁজে। তবুও তাদের বিশ্রাম ফেলে রেখে হাটে যেতে হয়, গবাদি পশুদের গোয়ালে ডেকে আনার আগেই ধূলি ধূসরিত কুয়াশা আর বিচালি পোড়ার ধোঁয়াশা মিলে আঁধারটাকে যেন একটু আগে ভাগেই ডেকে আনে। বধূবালারা দীঘির জলে ডুবসাঁতার দেয়ার বেশীক্ষণ সময় পায়না। স্নানশেষে ক্ষুন্নিবৃত্তির পর তারা উন্মুক্ত উঠোনটাতে চুল ছেড়ে দিয়ে গা এলিয়ে বসে ক্ষণিক সময় গল্পগুজবে মেতে ওঠে ঠিকই, কিন্তু চুল শুকোবার আগেই রবিমামার অন্তর্ধানের ফলে তাদের ভেজা চুলেই বেণী কিংবা খোপা বাঁধতে হয়। কেউ কেউ গোধূলি বেলায়ও স্নান সেরে কাঁখে জলভরা কলসি নিয়ে হয়তো ঘরে ফেরে। তাদের দেখে হয়তো বাংলা গানের চেয়ে হিন্দী গান শুনতে অভ্যস্ত আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মনে পড়ে যায় “কাঁহি দূর যব দিন ঢল্ যায়ে সাঁঝ কি দূলহন্ বদন চুরায়ে চুপকে সে আয়ে” গানটির কথা।

কাঁহি দূর যব দিন ঢল্ যায়ে

দ্রুত অপসৃয়মান হলেও, এই নাতিদীর্ঘ মধ্যাহ্ন পরবর্তী সময়টার প্রতি আমার ভীষণ মায়া। আমার খুব ভাল লাগা একটি সময়- কিছু লেখার, কিছু গান শোনার, নয়তো দৈবচয়নের ভিত্তিতে কোন বই কিংবা প্রিয় লেখকের কোন ইলেক্ট্রনিক লেখালেখি পড়া- এসব করেই কাটে এসব হ্রস্ব বিকেলগুলো। জানালাটার পর্দা সরানো থাকলে মেঘের আনাগোনা কিংবা পাখির ওড়াউড়ি দেখতেও ভাল লাগে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখি, এক চিলতে সোনালী রোদটুকু খুব দ্রুতই ম্লান হয়ে যাচ্ছে, কিসের যেন তার তাড়া! দেখতে দেখতে দীপ্যমান সূর্যটা কমলা রঙ ধারণ করে ঝুপ করে ওপারে ডুব দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেয়। আমার ভাললাগা ভাবনাগুলোতেও অকস্মাৎ ঘটে যবনিকাপাত।

ঢাকা
০১ কার্ত্তিক, ১৪২৫
১৬ অক্টোবর ২০১৮
বিকেল চারটা পঁয়ত্রিশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭
২৫টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×