প্রিয় হাবিব স্যার, আসসালামু আলাইকুম!
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এ আমার যে দুটো কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে একটি আপনি কিনেছেন এবং পড়েছেন। শুধু পড়েনই নাই, বইটি নিয়ে স্বল্প পরিসরে হলেও এ ব্লগে আপনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। আপনার এ আলোচনা আমাকে ভেতরে ভেতরে আন্দোলিত করেছে, কারণ এবারে এই প্রথম কোন একজন পাঠক আমার কোন বই পড়ে ব্লগে আলোচনা করেছেন। আগের দু’বছর অবশ্য ২/১ জন আমাকে শুধু জানিয়েছিলেন যে বইটি তাদের ভাল লেগেছে। কেন ভাল লেগেছে, কী ভাল লেগেছে, সে ব্যাপারে বিশদভাবে কিছু বলেন নাই। যাহোক, সাগরের ঢেউ যেমন অনেকগুলো ঢেউকে সাথে করে নিয়ে এসে তীরে আছড়ে পড়ে, আপনার কথাগুলোও তেমনি আরো অনেক না বলা কথাকে সাথে নিয়ে আমার হৃদয়-তীরে আছড়ে পড়েছে। প্রতিটি লেখক তার কোন লেখা প্রকাশ করে অপেক্ষা করে থাকেন, সহৃদয় কোন বোদ্ধা পাঠকদের কাছ থেকে কিছু ফীডব্যাক পেতে। পাঠকের মন্তব্যে লেখক তার ভুল ভ্রান্তিগুলো কিংবা মিস করে যাওয়া কোন বিষয় খুঁজে পেতে পারেন। কোন পাঠক যখন লেখকের কোন লেখা থেকে তার ভাল লাগা কিছু কথা আলোচনায় উদ্ধৃত করেন, লেখকের মন তখন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। আমার বইটি নিয়ে আপনি যেটুকু আলোচনা করেছেন, তাতে এ কাজটি আপনি আকছার করেছেন, আমিও নিজ চোখে আপনার লেখায় আমার নিজস্ব কবিতার লাইন উদ্ধৃত হতে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। আবার বইটিকে কাঠগড়ায় তুলে বইটি সম্পর্কে যে সব ত্রুটি বিচ্যূতির কথা উল্লেখ করেছেন, লেখক হিসেবে তার একটা কৈফিয়ৎ দেবারও আবশ্যকতা বোধ করছি।
কাঠগড়ায় জবানবন্দীঃ
১। আমার সকল অনলাইন লেখালেখি “অভ্র”তে টাইপ করা। কিন্তু প্রকাশকেরা “বিজয় বায়ান্ন” তে সেটা টাইপ করে বই আকারে ছাপেন। অভ্র থেকে বিজয় বায়ান্নে রূপান্তরের সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে, যুক্তাক্ষরগুলো ভেঙে যায়, উ কার, এ কার, ঋ কার ইত্যাদি সঠিক জায়গামত না বসে সামান্য এদিকে ওদিকে বসে। আমার এ বইটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আপনার পাকা চোখে সেসব ত্রুটি ঠিকমতই ধরা পড়েছে।
২। ৭৯ নং পৃষ্ঠায় ৭০ নম্বর কবিতাটিতে শিরোনামের এই ভুল অমার্জনীয়। কবিতার শিরোনামটা হবার কথা ছিল “দুটোতেই কবিতা”। হয়ে গেছে আপনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন, সেটাই। প্রকাশককে আমি তিন তিনবার ই-মেইল করে পান্ডুলিপির ভুল ধরিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তিনি একবার এটা ঠিক করলে নতুন আরেকটা কোথাও ভুল করে ফেলেন। এরকম কিম্ভূতকিমাকার একটি শব্দ শিরোনামে কিভাবে স্থান করে নিল, সেটা আমারও বিস্ময়। চূড়ান্ত পান্ডুলিপিতে সঠিক বানানই ছিল। যাহোক, সব ভুলের দায় লেখকেরই, প্রকাশক তো একজন অচেনা লেখকের লেখার প্রতি খুব বেশী সময়ও দিতে পারেন না। এ রকম একটি বড় ভুলের জন্য সত্যি আমি লজ্জিত ও দুঃখিত।
৩। ২ নম্বর ভুলের তুলনায় বিলুপ্তি চিহ্ন ব্যবহার না করার বিষয়টি একেবারেই গৌণ। আশাকরি, ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন/দেখেছেন।
৪। আপনার পোস্টে এস এম মামুন অর রশীদ এর ১০ নং মন্তব্য থেকে নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে জেনে গেছেন যে ‘আনন’ মানে “বদন, মুখমণ্ডল, মুখ”। সেই হিসেবে আমার কবিতার লাইনটি ঠিকই আছে- ‘আনত আননে’ মানে ‘নতমুখে’।
এত কিছুর পরেও আপনি বইটি নিয়ে আপনার আলচনার ইতি টেনেছেন এই বলেঃ “ সব মিলে সত্যিই কিছু অসাধারণ কবিতার সমাবেশে এই বইটি সমৃদ্ধ” – সব শেষে আপনার এই উদার উপসংহরে আমি সত্যিই আনন্দিত, অনুপ্রাণিত। প্রকাশ্য আলোচনায় আপনার এ প্রশংসাটুকু পেয়ে বোধ হচ্ছে, আপনি আমায় ঋণী করে গেলেন!
এবারে আসি ভিন্ন প্রসঙ্গেঃ
২০১৬ সালে আমার লেখা প্রথম একটি কবিতার বই “গোধূলির স্বপ্নছায়া” এবং একটি আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা “জীবনের জার্নাল” অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আত্মপ্রকাশ করে। তখন আমার সে কি অস্থিরতা! খুব বেশীদিন যে মেলায় গিয়েছিলাম, তা নয়। পুরো মাসটাতে ৭/৮ দিন হবে হয়তো। তবে যেদিন যেতাম, সেদিন খুব নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করতাম, শালীনতার সাথে পাঠকদের কাছে আমার বই এর কথা বলতে। বলতে মোটেই দ্বিধা নেই, পাঠকের কাছে নিজের বই এর কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই কিছুটা লজ্জাভাব আনুষঙ্গিকভাবে চলেই আসতো। সেবারে মোটের উপর খারাপ বিকোয়নি আমার বই দুটো। তারপর ২০১৭ সালের বইমেলায় আত্মপ্রকাশ করলো আমার তৃ্তীয় বই (কবিতার দ্বিতীয়) “প্রেমের একটি ফুল ফুটুক, শুষ্ক হৃদয়েই”। সেবারে আমার বইটা স্টলে আসতে আসতে মাসের অর্ধেকটা পার হয়ে গিয়েছিল। দোষটা প্রকাশকের নয়, দোষটা ছিল আমারই, কারণ পান্ডুলিপি জমা দিতে অনেক দেরী করে ফেলেছিলাম। সেবারেও পুরো মাসে ৭/৮ দিনই বইমেলায় গিয়েছিলাম। প্রথম দুটোর মত না হলেও, এই বইটার বিক্রী নিয়েও আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম না। বইটির কাগজ, ছাপার মান এবং বাঁধাই খুব উন্নত মানের ছিল, তবে হয়তো বইটির অভ্যন্তরস্থ আধেয় ততটা উন্নত মানের ছিল না, নইলে বইটি যা বিক্রী হয়েছে, তার চেয়ে আরো বেশী বিক্রী হবার কথা ছিল। অথবা আমার বিপনণ কৌশল সঠিক ছিল না।
২০১৮ সালে আমার পান্ডুলিপি তৈরী থাকা সত্ত্বেও জানুয়ারীর শেষের দিকে হঠাৎ কিছু অভাবনীয় দুর্যোগ আমার উপর নেমে আসে, ফলে সেবারে আমার কোন বই প্রকাশিত হয়নি, আমিও পুরো মাস জুড়ে বইমেলামুখো হতে পারিনি। এবারে আমার “বহতা নদীর মত সতত বহমান” স্টলে এসেছিল ০৫ ফেব্রুয়ারীতে, আর "Wandering Thoughts" এসেছিল ০৯ ফেব্রুয়ারীতে। কিন্তু এবারে আগের মত ভেতর থেকে বইমেলায় যাবার তাগিদ অনুভব করছি না। এ পর্যন্ত মাত্র দু’দিন গিয়েছি, আজ হয়তো আবারো যাব। শুনেছি, গতকাল বৃষ্টির কারণে অনেক স্টলের বইপত্র নাকি ভিজে গেছে। বইমেলা চলাকালে প্রায়ই এরকম দুই এক দিন ঝর-বৃষ্টি হয়। তবুও প্রকাশকগণ কেন যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেন না, তা বুঝি না। বইমেলা উপলক্ষে ব্লগারদের মাঝে সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটছে, মত বিনিময় ঘটছে, এটা দেখেও খুব ভাল লাগছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে যারা সময় করে বইমেলায় এসে ব্লগারদের বই কিনে তাদেরকে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি অশেষ প্রীতি ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার এ লেখাটা শেষ করছি।
ঢাকা
১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০২