বহু শতাব্দী ধরে গ্রাম বাঙলায় চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে "চৈত্র সংক্রান্তি মেলা" অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণতঃ কোন খোলা জায়গায়, বৃ্দ্ধ বিটপীর ছায়াতলে কিংবা খেলার মাঠে এসব মেলা বসে থাকে। এই মুরুব্বী গত ১৩ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে, চৈত্র সংক্রান্তির দিনে তার বানানো হাতপাখার সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত "চৈত্র সংক্রান্তি" মেলায়। অতি সামান্য পুঁজি-নির্ভর তার ব্যবসা। তালপাতা দিয়ে হাতপাখা বানান তিনি। কিছু রেখেছেন স্রেফ তালপাতা আর বাঁশের কঞ্চির বুনটে বাঁধানো হাতপাখা হিসেবেই, এর ক্রেতা নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা, যারা আসন্ন গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে বাঁচতে এ পাখাগুলোকেই হাতে তুলে নেবেন, রাতে বিছানায় শিওরের পাশে রাখবেন।
আর কিছু পাখা তিনি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রঙিন ঝালর লাগিয়ে অনুপম সাজে সাজিয়েছেন, বোধকরি আরেকটু অবস্থাপন্ন গেরস্তদের জন্য, আর পাখার ঠিক মাঝখানে একটি অত্যন্ত সুন্দর কথা লিখে দিয়েছেন- "মনের মানুষ"। জানিনা, সৌন্দর্য বর্ধনের এ কাজটি তিনি নিজে করেছেন, নাকি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছেন। বোধকরি, এমন নান্দনিক কাজটি হয়তো কোন পুরুষের করা নয়, এ কাজে হয়তো তিনি তার স্ত্রী, কন্যা পুত্রবধু বা অন্য কোন মহিলার সাহায্য নিয়েছেন। তাপদগ্ধ দেহে এবং মনে যখন এ রঙিন ঝালর লাগানো পাখাটি শীতলতার পরশ বুলিয়ে যাবে, তখন হয়তো এর ব্যবহারকারী মনে মনে তার “মনের মানুষ” এর কথাই ভাববেন, তাকে নিয়ে পাখার রঙের মত অনেক রঙিন স্বপ্ন বুনে যাবেন!
ঝালর লাগানো তালপাখা, বালিশের কভার, রুমাল ইত্যাদিতে সূচকার্যে লিখা কিছু কথা, নক্সীকাঁথা, আগেকার দিনের মা/খালা/নানী/দাদীদের হাতে বোনা উলের সুয়্যেটার, মাফলার, হাতমোজা ইত্যাদিতে অনেক মায়া মমতা ও ভালবাসা জড়িয়ে থাকে।
ছবিটি ময়মনসিংহ নিবাসী মনোয়ার হোসেন এর সৌজন্যে পাওয়া। তার অনুমতিক্রমে ছবিটি আমি আমার এই পোস্টে একটু ক্রপ করে সংযোজন করলাম। ছবিটি শেয়ার করার অনুমতি দেয়ার জন্য তাকে অশেষ ধন্যবাদ।
ঢাকা
০২ বৈশাখ ১৪২৬/১৫ এপ্রিল ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:২২