somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের কাশ্মীর ভ্রমণঃ অনিশ্চয়তার দোলাচলে যে যাত্রার শুরু -১

১০ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাওয়া আসা মিলে কাশ্মীরে মাত্র পাঁচ দিনের একটি ছোট্ট সফর শেষ করে মাত্র চারদিন আগে (০৭ মে ২০১৯) কাশ্মীর থেকে বাড়ী ফিরে এলাম। সাথে ছিল স্ত্রী ও ছোট ছেলে। ফেরার সময় পথেই প্রথম রোযা শুরু হয়ে গিয়েছিল, তবে বাসায় প্রথম ইফতার। সফর শেষে রোযার রুটিনের সাথে ধাতস্থ হতে এ ক’টা দিন লেগে গেল। আজ একটু হাতে সময় আছে, তাই ভাবছি কাশ্মীর সফর নিয়ে কিছু লিখি।

সব মিলে ভারত সফর করেছি দশ দিন ধরে। ভারত বলতে দিল্লী ও কাশ্মীর। প্রথমে কাশ্মীর যাওয়া নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। সেটা নির্ভর করছিল দিল্লীর ডাক্তারের মতামতের উপর, কেননা আমরা পারিবারিক প্রয়োজনে মূলতঃ দিল্লীর একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের আগের চিকিৎসা সংক্রান্ত পর্যালোচনা ও পরামর্শের জন্যই দিল্লী যাচ্ছিলাম। রোগীর চিকিৎসা কোন পর্যায়ে মোড় নেবে, কিংবা শেষ হতে কতদিন সময় লাগতে পারে, এ বিষয়ে আগে থেকে সুনিশ্চিত ধারণা করা সম্ভব ছিল না। তাই আমরা কোন রিটার্ণ টিকেট ছাড়াই ঢাকা-কোলকাতা-দিল্লী একমুখী টিকেট সম্বল করে রওনা হই। ঢাকা থেকে রওনা হবার আগে অনুজ প্রতিম এক্স-এমসিসি ক্যাডেট সাঈদ হাসানের দ্বারস্থ হ’লাম। ওর কাছ থেকেই আমি সব সময় সফর সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ এবং সফর সহায়তা (যেমন এয়ার টিকেট, ভিসা পদ্ধতি/দর্শনীয় স্থান, ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য) গ্রহণ করে থাকি, কেননা ও দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় নিয়োজিত আছে। সাঈদ আমাকে মানযুর কুন্দ্রু নামে একজন কাশ্মীরি ট্রাভেল এজেন্টের সাথে হোয়াটস এ্যাপে আলাপ করিয়ে দিল। আমি তাকে কাশ্মীরে আমাদের তিনজনের জন্য পাঁচ দিনের একটি ট্রাভেল প্ল্যান দিতে বললাম, সাথে এটাও জানিয়ে রাখলাম যে আমাদের কাশ্মীর যাওয়াটা নির্ভর করবে দিল্লীর ডাক্তারের উপর। তাই যাবার এক দিন আগে ছাড়া এ সফর নিশ্চিত করা যাবেনা। মানযুর বললো, তথাস্তু!

গতবছর আমরা ভারত সফর শুরু করেছিলাম এই এপ্রিল মাসেরই ৩০ তারিখে, ফিরেছিলাম ১০ই মে’তে। এবার তিনদিন আগে অর্থাৎ ২৭শে এপ্রিল রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটযোগে রওনা হ’লাম। রাতটা কোলকাতায় থেকে পরেরদিন ভোরের ফ্লাইটে দিল্লী যাবো। ২৯ তারিখের বিকেলে আমার রোগীর ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা ছিল। কিন্তু অত্যন্ত ব্যস্ত সে বিশেষজ্ঞের স্টাফরা তালগোল পাকিয়ে ফেলার কারণে নির্ধারিত তারিখে ডাক্তার রোগীকে দেখতে পারেন নি। অবশেষে ০১ মে ১৯ তারিখে রাত ৮ টার পরে ডাক্তারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেল যে রোগীর অবস্থা ভাল এবং তিনি ট্রাভেলের জন্য ফিট। হাসপাতালে বসেই একজন রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করলাম, ধারে কাছে কোথাও কোন ট্রাভেল এজেন্টের অফিস আছে কিনা। সে দুটো ফোন নম্বর দিল, কিন্তু তাদের সাথে আলাপে তাদেরকে তেমনটা আগ্রহী মনে হলো না। আমি আর আমার ছেলে মিলে নিজেরাই খোঁজাখুঁজি করে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে একটি ট্রাভেল এজেন্টের সন্ধান পেলাম, তাই দেরী না করে রাতেই ছুটলাম সেখানে। যাত্রার মাত্র দশ বার ঘন্টা আগে টিকেটের অন্বেষণ, তাই আকাশচুম্বী দাম হবারই কথা। তবুও বলা যায়, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মূল্যে পরেরদিন সকালের তিনটে টিকিটও পেয়ে গেলাম। টিকেট ক্রয়ের আদেশ দিলাম, কিন্তু কম্পিউটার স্পীড স্লো হবার কারণে সে আদেশ পাঠাতে পাঠাতেই ধাই ধাই করে টিকেটের মূল্য বেড়ে যাচ্ছিল। পুনর্বার চেষ্টা করার সময়েও কম্পিউটার সময় নিচ্ছিল প্রচুর। এই করতে করতে এক পর্যায়ে টিকেটের মূল্য অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে চলে গেল! অগত্যা প্ল্যান পাল্টালাম। কাশ্মীরের পরিবর্তে কোলকাতায় চার পাঁচটা দিন বেড়ানো মনস্থ করলাম। কিন্তু ততক্ষণে রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল বলে ট্রাভেল এজেন্ট তার অফিস বন্ধ করার তোড়জোড় শুরু করে দিল। কোলকাতার টিকেটের জন্য পরের দিন সকাল আটটায় আসতে বললো।

রাতে মানযুর ফোন করে জিজ্ঞেস করলো সফর হবে কিনা। সে একটু টেনশনেই ছিল, কেননা সে হোটেলে বুকিং দিয়ে রেখেছিল। তাকে বললাম, ইচ্ছে ছিল শতভাগ, কিন্তু এত রাতে টিকেট পেলাম না। সে আমার হয়ে চেষ্টা করে দেখবে কিনা, অনুমতি চাইলো। আমি সানন্দে অনুমতি দিলাম। আধা ঘন্টা পরে সে আবার ফোন করে টিকেটের মূল্য এবং ফ্লাইটের সময়সূচি জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে এ টিকেট করবে কিনা, কারণ মূল্যটা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশ বেশী। আমি তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে গেলাম। সে নিজের টাকায় টিকেট করে টিকেটের বিশদ বিবরণ ইমেইলে পাঠিয়ে দিয়ে বললো, টিকেটের মূল্য তাকে কাশ্মীরে পৌঁছে দিলেই চলবে। মনে হলো, এ কয়দিনে টেলিফোনে আলাপে আলাপে আমার উপর তার একটা বিশ্বাস জন্মেছিল, যেমন তার উপরেও আমার। স্রেফ সেই বিশ্বাসের উপর ভর করেই সে একটা ঝুঁকি নিয়েছিল বটে!

রাত এগারটার দিকে কাশ্মীর সফর নিশ্চিত হলো; রওনা হতে হবে পরেরদিন সকাল আটটা সোয়া আটটার মধ্যে। সবাই মিলে ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম এবং পরের দিন সকাল আটটায় চেক আউটের কথা রিসেপশন কে জানিয়ে রাখলাম। আমাদের ফ্লাইট ছিল সকাল ১১টা ২০ এ। ডমেস্টিক ফ্লাইটের জন্য দু’ঘন্টা আগে চেক ইন কাউন্টারে পৌঁছানো একটা স্বাভাবিক নিয়ম, তবে এর কিছুটা পরে পৌঁছালেও তেমন অসুবিধে হয় না। অর্থাৎ ৯টা ২০ এ পৌঁছালেই আমাদের সব কাজ আরামসে সম্পন্ন করা যাবে। তবে সর্বশেষ সময় ছিল ঐ ফ্লাইটের জন্য ১০টা ৩৫, অর্থাৎ ফ্লাইট শুরুর ৪৫ মিনিট আগে। রিসেপশন ডেস্ক থেকে জানতে চাইলাম, এয়ারপোর্ট যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে। ওরা বললো আধা ঘন্টা। আসার দিনে পঞ্চাশ মিনিটের মত সময় লেগেছিল। তাই আমি আধা ঘন্টার পরিবর্তে এক ঘন্টা সময় ধরে ৮টা ২০ এর মধ্যে রওনা দিব বলে মনস্থ করলাম। সব বিল আগের রাতেই পরিশোধ করে রেখেছিলাম। তবুও যাবার সময় একে ওকে টিপস দিতে দিতে এবং উবার ডাকাডাকি করতে করতে ১০ মিনিট সময় বেশী লেগে গেল। আমরা সকাল সাড়ে আটটার সময় উবারে দিল্লী বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। ড্রাইভার ছিল একজন মুসলমান, নাম সিকান্দর। আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তা সে আমাদের নিজেদের মধ্যে কথোপকথন শুনে বুঝতে পেরেছিল। আমরা মুসলমান, এ কথা সে নিজে থেকে আন্দাজ করে নিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে তার নামটা বলেছিল।

রওনা হবার দশ মিনিটের মধ্যে মানযুরের ফোন পেলাম। সে নিশ্চিত হতে চায়, আমরা রওনা হয়েছি কিনা; তাই আমাদের লোকেশন জানতে চাইলো। উবার ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে তাকে আমাদের লোকেশন জানালাম, সে খুশী হলো। একটু পরেই এসএমএস এ সে সেলফোন নম্বরসহ একটি নাম পাঠালো- মোহাম্মদ শাফি। এসএমএস মেসেজ পাঠানোর পর মুহূর্তেই ফোন করে জানালো যে মোহাম্মদ শাফি হবে আগামী ৫ দিনের জন্য কাশ্মীরে আমাদের গাড়ীচালক। সে শ্রীনগর বিমান বন্দরে গাড়ী নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। আমি যেন তখনই তাকে একটা ফোন দিয়ে পরিচিত হয়ে নেই এবং বিমানে বসেই তাকে এবং শাফিকে ফোন দিয়ে পুনর্বার নিশ্চিত করি।

রওনা হবার আধাঘন্টার মধ্যেই এয়ারপোর্টের একেবারে কাছাকাছি চলে এলাম। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, কোন টার্মিনালে যাব। বললাম, ডমেস্টিক। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, কত নম্বর টার্মিনালে। সাধারণতঃ টার্মিনাল নম্বরটা টিকেটে উল্লেখ থাকে। তাড়াতাড়ি সেলফোন বের করে টিকেট চেক করে দেখি, সেখানে টার্মিনাল নম্বরের কোন উল্লেখ নেই। মানযুরকে ফোন করলাম, সেও থতমত করতে করতে বললো- হুঁ, টার্মিনাল নম্বরটা তো টিকেটে দেখছিনা, আপনি এয়ারপোর্টে পৌঁছে কাউকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েন। ইতোমধ্যে উবার ড্রাইভার তার এক সতীর্থকে ফোন করে জানলো, সেটা খুব সম্ভবতঃ ২ নম্বর টার্মিনালে হবে। সে আমার কাছে অনুমতি চাইলো, সে ২ নম্বর টার্মিনালে যাবে কিনা। ইতোমধ্যে বিমান বন্দরের সন্নিকটস্থ রাস্তায় গুরগাঁওগামী অফিসযাত্রীদের কারণে জ্যাম শুরু হয়ে গেছে। আমি যেহেতু নিজেই নিশ্চিত হতে পারলাম না যে কত নম্বর ডমেস্টিক টার্মিনালে যেতে হবে, তাই অগত্যা একটু মাথা নেড়ে বললাম- ‘হুঁ, চালিয়ে, লেকিন থোরাসা জালদি যাইয়ে!’

চলবে....

ঢাকা
১১ মে ২০১৯


আমি যেখানেই যাই না কেন, পথের পাশের টি-স্টলে থেমে একটু চা পান করা আমার পুরনো অভ্যেস


এই সেই হাসপাতাল!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:২৩
৩০টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×