somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকাল মন আমার এত সামান্যতেই ভেঙে পড়ে!

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ দুপুরে আমার এক জ্যেষ্ঠ সহকর্মী (সিনিয়র কলীগ) হঠাৎ করেই ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার নাম লেঃ কর্নেল নকীবুর রহমান (অবঃ)। ওনার সাথে আমি কখনো এক স্টেশনে অবস্থান করিনি, চাক্ষুষ দেখাও হয়নি কখনো। তবে ওনার সুনাম শুনেছি। তিনি সুস্থ ছিলেন, হয়তো দুপুরের আহারও নিজ গৃহে নিয়মমাফিক গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তখন কে জানতো, সেটাই হবে তার ইহজীবনের শেষ রিযিক! দুপুর দুইটার দিকে তিনি মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে দ্রুত বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের পথ ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে তিনি পরপারে চলে গেছেন। বিকেল চারটার সময় WhatsApp গ্রুপে তার মৃত্যুর বার্তা পেলাম। স্থানীয় মাসজিদে বাদ ঈশা তার জানাযার নামায পড়ে ঘরে ফিরলাম। দুপুর দুইটার সময় যে মানুষটি জীবিত ছিলেন, রাত সাড়ে সাতটার আগেই তার জানাযা হয়ে গেল! এটা আমার দেখা one of the quickest disposal.

জানাযার নামাযের প্রাক্কালে মরহুমের কনিষ্ঠ পুত্র প্রথা অনুযায়ী পিতার মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে তার জন্য উপস্থিত মুসল্লীদের কাছ থেকে দোয়া চাইলো। বাসার ঠিকানা জানিয়ে, মরহুমের কাছে কারও কোন দেনা পাওনা থেকে থাকলে তার সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানালো, সে মিটিয়ে দেবে। সে আরও জানালো যে তার মা জননীও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এবং শয্যাশায়ী। তার মায়ের জন্যেও দোয়া চাইলো। তার বড়ভাই আমেরিকা প্রবাসী, তাই সে এ আকস্মিক মৃত্যুতে পিতার জানাযায় উপস্থিত থাকতে পারছে না। ভাই এর জন্যেও সে দোয়া চাইলো। সবশেষে সে নিজের এবং নিজের সন্তানের জন্যও দোয়া চাইলো। একে একে দোয়া চাওয়ার পর্যায়ে শেষের দিকে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল এবং নিজের ও নিজ সন্তানের জন্য দোয়া চাওয়ার সময় সে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা ছেলেটার কথা শুনতে শুনতে আমার নিজের গলায়ও পাকানো দলার মত একটা কিছু অনুভব করছিলাম। চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে আসছিল। যদিও ছেলেটার বয়স মধ্য ত্রিশে হবে, আমার কাছে তো সে বাচ্চাই!

গত ২৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে সকাল দশটার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষটা, লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মালদিভস সফরকালে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ওনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম। ওনারা দু'জনই ছিলেন পিএএফ পাবলিক স্কুল, সারগোদার এক্স-ক্যাডেট। কর্নেল আনোয়ার এর সাথে পুকুরপাড়ে হাঁটাহাঁটির সময় আমার দেখা হতো, দেখা হলেই কথাবার্তাও হতো। উনি সদালাপী ছিলেন, কথাবার্তায় ওনার হিউমার বেশ উপভোগ্য ছিল। তার মৃত্যুর বার্তা পেয়ে আমার সাথে সাথে মনে হয়েছিল, হায়রে! কতইনা ক্ষণিক মানুষের এ নশ্বর জীবন! উনি যখন সফরের জন্য ওনার ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন, তখনও কি ঘূর্ণাক্ষরে জানতেন যে ওটাই হবে তার অগস্ত্য যাত্রা! ওনার জানাযায়ও আমি শরীক হয়েছিলাম, এবং ভারাক্রান্ত হয়েছিলাম।

আমাদের স্থানীয় মাসজিদে কারও জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হবে, এমন খবর যদি আমি সময় মত পাই, তবে সে ব্যক্তি চেনা হোক বা অচেনা হোক, পারতপক্ষে আমি তা মিস করি না। জানাযার সময় প্রথা অনুযায়ী কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষে যদি তার পুত্র মা’ফ চাওয়ার জন্য দাঁড়ায়, সে মুখ খোলার আগেই আমি তার পিতাকে মা’ফ করে দেই এবং তার জন্য দোয়া করতে থাকি। এ সময়টাতে আমার হৃদয়টা দুমরে মুচড়ে যেন ভাঙতে থাকে। আমার মাসুম বাচ্চাদের মুখ চোখের সামনে ভাসতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে সেই পুত্রটি আমার পুত্র হয়ে যায়! আমি ঘরে ফেরা পর্যন্ত নিরন্তর তাদের জন্য দোয়া করতে থাকি।

দোয়া চাওয়াটা শুধুই কোন আনুষ্ঠানিকতা নয়। বক্তার চাওয়ার মধ্যে আকুতি থাকলে তা শ্রোতার অন্তর স্পর্শ করে যায়। আর অন্তরে দোলা লাগলে প্রার্থনা এমনিতেই ওষ্ঠে এসে পড়ে। তাই ছেলেটার প্রতিটি আবেদনের সাথে সাথে আমার কণ্ঠে অনুচ্চারিত থাকলেও অন্তরে উচ্চারিত হয়েছে প্রতিটি পতিব্রতা বিধবা নারীর জন্য, প্রতিটি পিতৃহারা সন্তানের জন্য, প্রতিটি সন্তানহারা পিতামাতার জন্য, পিতামাতার প্রতি অনুগত সকল সন্তানের জন্য আমার আকুল, অকৃত্রিম দোয়া এবং শুভকামনা।

ঢাকা
০৩ জানুয়ারী ২০২২
শব্দ সংখ্যাঃ ৫৪২
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৪
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×