আজ ভোর ছয়টায় মেলবোর্নের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রী ছিল, এখন সকাল নয়টায় দুই ডিগ্রী। জীবনে এই প্রথম শূন্য ডিগ্রীর মুখোমুখি হ’লাম। শূন্য ডিগ্রীর তাপমাত্রাটা কেমন হয়, তা অনুভবের প্রবল ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্য একটু বাড়ির সামনের এবং পেছনের প্রাঙ্গণে মিনিট দুই/তিন হাঁটাহাটি করলাম। নাহ, তেমন সাংঘাতিক কিছু তো মনে হলো না। এরকম ঠাণ্ডা তো আমি মাঝে মাঝে আদিতমারীতেও পেয়েছি। তবে ঘাসের মাথার শিশিরবিন্দু গুলোকে দেখতে আজ অতি মাত্রায় বড় আর সাদা মনে হলো। এগুলোকে এখন আর শিশিরকণা বা শিশিরবিন্দু বলে মনে হলো না, শিশির ফোঁটাই (বড় ফোঁটা) মনে হলো। ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ করে ল্যাপটপের ডালি খুলে বসলাম। এদিকে দখিন জানালার পাশে এক গাছের ডালে বসে যেন কোন এক উদাসী ঘুঘু নিরন্তর ডেকেই চলেছে। বাংলার শ্যামলিমার কথা মনে পড়লো। কোকিল, ঘুঘু, চড়ুই, শালিক, বুলবুলির কথা মনে পড়লো। দেশে থাকতে ঘুঘুর ডাক সাধারণতঃ গ্রীষ্মের নিদাঘ দুপুরেই শুনেছি, এমন শীতের সকালে শুনেছি বলে মনে পড়ে না। হতে পারে, ব্যস্ততার কোলাহলে সকাল সকাল ঘুঘুর ডাক শোনার অবকাশ হয় নাই। ব্যস্ত জীবন আর অবসর জীবনের মাঝে পার্থক্য তো অনেক! একটাতে চোখ থাকে ঘড়িতে, অপরটাতে ঘড়ি থাকে চোখে, অর্থাৎ চোখ যা বলবে, সেটাই সময়।
ঢাকার তাপমাত্রা দেখলাম এখন ২৮ ডিগ্রী, দুপুরে সেটা বেড়ে ৩২ এ দাঁড়াবে। এখানে আমরা শীতে কাঁপছি, ওখানে সবাই গরমে ঘামছে। তার উপর চলছে রুটিন করে দেয়া এবং রুটিনের বাইরের লোডশেডিং- কি যে একটা দুর্দশা! লোডশেডিং এর অবসান হোক, অন্যান্য সরকারী ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা সাধন করে এদিকটাতে নজর দেয়া হোক, এতটুকুই সাধারণ মানুষের কাম্য। লোডশেডিং হলেও, একটানা যেন সেটা কিছুতেই ৩০ মিনিটের বেশি না হয়, এত এত উন্নয়ন করার দেশের জনগণ এটুকু চাইতেই পারে।
এদিকে ‘The Herald Sun’ শিরোনাম করেছে দেখলাম, Melbourne shivers through the coldest morning in four years। তবে ভিডিও চিত্রে দেখালো, এই কনকনে শীতের মাঝেও সৈকতে কিছু নরনারী সাঁতারের পোষাক পরে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘coldest morning’ কে celebrate করছে। এক বুড়োকে দেখলাম, নিজে হাফ প্যান্ট পরে তার কুকুরের গায়ে একটি কোট চড়িয়ে তাকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। সাক্ষাৎকারে সে কুকুরটাকে নিয়েই তার যত দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করলো। সিডনীতে বেড়াতে আসা বন্ধু ইসহাকের সাথে কথা হলো। সেখানে তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী, কিন্তু সাথে প্রবল বৃষ্টি থাকার কারণে সেই তাপমাত্রাকে দুই ডিগ্রীর চেয়ে আরও অনেক নীচে বলে মনে হয়। আমাদের এখানে বাইরে এখন সূর্যের উজ্জ্বল হাসি দেখা যাচ্ছে, রোদের আলোয় পাতাহীন গাছের ডালে, ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকা শিশিরের ফোঁটাগুলো ঝিকমিক করছে। । একটু পরে আমিও বের হবো একটু হেঁটে আসার জন্য। আবহাওয়ার কারণে জীবন এখানে স্থবির হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না, সামান্য শ্লথ হবারও উপায় নেই। চলার নাম জীবন, থামার নাম মরণ!
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
২১ জুলাই ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ৪০৩
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২২ ভোর ৬:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




