somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপিঃ যাত্রা হলো শুরু.... কানাডার পথে- ১

০৯ ই মে, ২০২৩ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অনেক বাল্যবন্ধু এখন সপরিবারে কানাডার নাগরিক। ওরা যখন মাঝে মাঝে দেশে বেড়াতে আসে তখন ওদের সাথে দেখা হয় এবং দেখা হলেই ওরা আমাকে কানাডা ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে যায়। আমিও বলি, দেখা যাক, একদিন যাবো ইন শা আল্লাহ। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। ভিসা পেতে হলে অনুন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে যে দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং হাজার রকমের কাগজপত্র জমা দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে কথা ভেবে ভিসার জন্য আবেদনের খুব একটা ইচ্ছা মনে কখনো জাগেনি। তবে কানাডা সফরের ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে ভাবা শুরু করলাম, যখন ২০১৭ সালে আমাদের বড় নাতনি আনায়া ওর বাবা মায়ের সাথে স্থায়ী অধিবাসী হিসেবে কানাডা চলে গেল। আনায়ার জন্মের মুহূর্ত থেকে কানাডা চলে যাবার পূর্ব পর্যন্ত আমি ওর সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলাম। জন্মের সময় হাসপাতালে কয়েকদিন ওর মাসহ অবস্থা্নের পর ও যেদিন আমাদের ঘরে এলো, সেদিন ঘরে খুশির বন্যা বয়ে গিয়েছিল, কারণ ও ছিল আমাদের প্রথম গ্র্যান্ডচাইল্ড। তখন থেকেই ওকে আমি অনেক নাড়াচাড়া করেছি। আমি আর ওর দিদা মিলে ওকে গোসল করাতাম, আমি কোলে নিয়ে গান আর ছড়া গেয়ে ঘুম পাড়াতাম, এমনকি আমিই প্রথম ওর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছিলাম। তাই ও কানাডা চলে যাবার পর আমি ওকে খুবই মিস করতাম। কয়েক বছর পর্যন্ত আমি ওর ছোট্ট বালিশ আর কোল-বালিশদুটোকে আমাদের বিছানায় রেখে ঘুমাতাম। আমার স্ত্রী পরে ওগুলো সরিয়ে ফেলেন। সেই আনায়াকে দেখার জন্যই আমি একদিন অনলাইনে কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করে ফেলি। দীর্ঘ আবেদনপত্র পূরণ করতে গিয়ে আমাকে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়। আবেদনের নয় মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমার এবং আমার স্ত্রীর ভিসা অনুমোদিত হয়। কিন্তু ততদিনে কানাডায় শীত পড়া শুরু হয়ে গেছে। প্রতিকূল আবহাওয়া এড়ানোর লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেই আমরা এ বছরের মে মাসে যাবো, যখন কেবল গরম পড়া শুরু হবে। এ লক্ষ্যে জানুয়ারী মাসের দুই তারিখেই টিকেট ক্রয় করে ফেলি। কানাডাগামমী যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে যাত্রার চার মাস তিন দিন আগে টিকেট করেও অনেক উচ্চমূল্যে টিকেট ক্রয় করতে হলো।

আজ শুক্রবার, ০৫ মে ২০২৩। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এমিরেটস এর ফ্লাইটে আমরা কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা হবার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছি। এমিরেটস এর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ফ্লাইটের অন্ততঃ চার ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে। আমি পরিবারের সবাইকে বলে রেখেছিলাম যে জুম্মার নামাজ পড়ে এসেই লাঞ্চ সেরে বেলা তিনটার মধ্যে রওনা হবো। তিন মাসের জন্য যাচ্ছি, খুঁটিনাটি কত কিছুই না ম্যানেজ করে তবে যেতে হয়। একটা চেকলিস্ট বানিয়ে সে অনুযায়ী স্যুটকেস ৫/৬ দিন আগেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু মে মাসের ১, ২ ও ৩ তারিখে পরপর তিন দিন ধরে আমাদের এক নিকটাত্মীয়ের মেয়ের বিয়ের নানা অনুষ্ঠানের কারণে গোছানো স্যুটকেস থেকে আমাদের দুই একটা কাপড় বের করে পরতে হয়। ফলে শেষ দিনে গোছানো স্যুটকেস পুনরায় গোছাতে হয় এবং এতে বেশ কিছুটা সময় ব্যয় করতে হয়। যাহোক, সব দিক সামলিয়ে বাসা থেকে ঠিক সাড়ে তিনটায় রওনা হয়ে আমরা চারটায় ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। দিনটা শুক্রবার ছিল বলে আমরা নিত্যদিনের যানজট থেকে রক্ষা পেলাম।

বেশ দ্রুতই বলা যায়, সাড়ে চারটার মধ্যে আমাদের চেক-ইন এবং ইমিগ্রেশনের সকল আনু্ষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। ফ্লাইটের তখনো তিন ঘণ্টা বাকি। তাই সময় কাটানোর জন্য কিছুক্ষণ নিরিবিলি বসে ইন্টারনেট ব্রাউজ করলাম এবং একে একে অনেক আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু্দের সাথে কথা বলে বিদায় সম্ভাষণ জানালাম। ঘড়ির কাঁটা ধরেই একে একে সব কার্যক্রম এগিয়ে চলতে থাকলো। একসময় এমিরেটস এর স্টাফ এসে বোর্ডিং গেটের দিকে অগ্রসর হবার আহ্বান জানালো। আমরা শেষ নিরাপত্তা বৈতরণী পার হয়ে বিমানে আসন গ্রহণ করলাম। ঠিক সাতটা একত্রিশ মিনিটে আমাদের বিমানটি ধীরে ধীরে চলা শুরু করলো। কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে এসে রানওয়ের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বিমানটি অনেকক্ষণ ধরে স্থি্র হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একই সময়ে অনেকগুলো বিমান ওঠানামার জন্য তৈরি হয়ে গেলে এভাবে একেকটাকে রানওয়েতে আটকে রেখে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারগণ এক এক করে ওঠানামার অনুমতি দেন। অবশেষে সাতটা বাহান্ন মিনিটে আমাদের বিমানটি একটা লম্বা দৌড় দিয়ে নিঃসীম আকাশে উড্ডীন হলো। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা উড্ডয়নের পর বিমানটি স্থা্নীয় সময় রাত দশটা চব্বিশ মিনিটে দুবাই বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করলো এবং একেবারে ঠিক কাঁটায় কাঁটায় রাত সাড়ে দশটায় যাত্রীদের প্রস্থানের জন্য বিমানের দরজা খুলে গেল। এমিরেটস এর (এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সেরও) এমন অভাবনীয় সময়ানুবর্তিতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।

দুবাই বিমানবন্দরে আমাদের ট্রানজিট ঠিক পাঁচ ঘণ্টার। কানেকটিং ফ্লাইটের বোর্ডিং লাউঞ্জে এসে দেখি ফ্লাইটের তখনো চার ঘণ্টা বাকি। সৌভাগ্যক্রমে খুব সহজেই বিমানবন্দরের ফ্রী ওয়াই-ফাই সংযোগ পেয়ে গেলাম। সাথে সাথে ছেলেদেরকে দুবাই পৌঁছানোর আপডেট জানালাম। ওরা হোয়াটসএ্যাপে/মেসেঞ্জারে ফোন করলো, কিন্তু কোন পক্ষই কথা ঠিকমত শুনতে পারলাম না, ফলে কথা বোধগম্যও হলো না। অগত্যা চ্যাটের মাধ্যমেই কথোপকথন সারতে হলো। ফোনে কথা শোনা না গেলেও, বার্তা আদান প্রদানে কোন সমস্যাই হচ্ছিল না। বোর্ডিং লাউঞ্জে বসে কিছুক্ষণ ব্রাউজিং করলাম, ফেসবুকিং করলাম এবং ব্লগেরও কয়েকটা পোস্ট পড়ে নিলাম। কিছুক্ষণ পর বোর্ডিং এর আহ্বান জানানো হলো। মুহূর্তের মধ্যে একটা বিরাট লাইন দাঁড়িয়ে গেল, যার শেষ মাথাটা আরও তিনটা বোর্ডিং গেট অতিক্রম করে গেল। এত লম্বা লাইন দেখে বুঝতে পারলাম, কেন এখানে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার ট্রানজিট রাখা হয়েছে। প্লেনটির শতভাগ আসন পূর্ণ ছিল। প্রায় নয়শত যাত্রীর চেক-ইন এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করতে করতে পাঁচ ঘণ্টা সময় নিমেষেই পার হয়ে গেল।


ট্রানজিট লাউঞ্জ, দুবাই বিমানবন্দর
০৬ মে ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৭৮৩

এর পরের পর্বটি পাবেন এখানেঃ দিনলিপিঃ যাত্রা হলো শুরু.... কানাডার পথে – ২
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২৩ রাত ১১:০৩
২৫টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×