সপ্তম বর্ষপূর্তি পোস্টঃ অলখে চলে গেল ব্লগে আমার সপ্তম বর্ষপূর্তির দিনটি
ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি পোস্ট, যেখানে এর আগের সবগুলো বর্ষপূর্তি পোস্টের লিঙ্ক দেয়া আছেঃ “সামহোয়্যারইন ব্লগ” এ আমার ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি হলো
আজ রাতে প্রকাশিত ব্লগার মেহবুবা এর "১৫ বছর খুব বেশী সময় নয় ! কত কিছু মনে আসে, কত পরিবর্তন!" শিরোনামের পোস্টটা পড়ে আমার পরিসংখ্যান পাতায় গিয়ে দেখলাম, আমিও ব্লগে আমার অষ্টম বর্ষপূর্তি পার করে এসেছি তিন দিন আগেই। যাহোক, বেটার লেইট দ্যান নেভার, তাই বসে পড়লাম আমার এবারের বর্ষপূর্তি পোস্ট লিখতে। এ ব্লগে আমার প্রথম পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, রাত ১১টা ২৬ মিনিটে। তারপর, ২০১৬ সাল থেকে আমি নিয়মিতভাবে বর্ষপূর্তির এই দিনটিকে স্মরণ করে পোস্ট লিখে এসেছি। তবে যত দিন যাচ্ছে, বয়স ততই বাড়ছে এবং স্মৃতিশক্তি কমছে। সেজন্য গত বছর আর এই বছরে দিনটিকে সঠিক সময়ে স্মরণ করতে পারি নি, তাই সঠিক দিনে বর্ষপূর্তির পোস্টও লিখতে পারি নি।
আপনারা যারা আমার বর্ষপূর্তির পোস্টগুলো আগে পড়েছেন, তারা জানেন যে আমি বর্ষপূর্তির পোস্টে আমার লেখালেখির কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করতে ভালোবাসি। এবারেও তার ব্যতিক্রম করছি না। গত এক বছর তিন দিনে আমি পোস্ট লিখেছি ৫২টি, অর্থাৎ গড়ে প্রতি সপ্তাহে একটি করে। তার আগের বছরে সংখ্যাটি ছিল ৬৬, অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত এক বছরে ১৪টি পোস্ট কম লিখেছি। গত এক বছরে আমি মন্তব্য করেছি ১৮৭১টি, অর্থাৎ প্রতিদিনে ৫ টির কিছু বেশি। তার আগের বছরে সংখ্যাটি ছিল ২৬৫১টি, অর্থাৎ প্রতিদিনে সোয়া সাতটির মত। এ সংখ্যাটিও তুলনামূলকভাবে বেশ কম। তাহলে কি আমি মন্তব্য করা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি? জানিনা, তবে সামগ্রিকভাবে ব্লগে মন্তব্যের সংখ্যা দৃশ্যমানভাবেই অনেক কমে গেছে। গড়ে প্রতিদিন ৫টি করে মন্তব্য করাটাও বোধকরি অসন্তোষজনক কিছু নয়। গত এক বছরে আমি মন্তব্য পেয়েছি ১৬২৫টি, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চারটি এবং প্রতি পোস্টে ৩১.২৫টি। তার আগের বছরে সংখ্যাটি ছিল ২২৫০টি। তুলনামূলকভাবে এ সংখ্যাটিও অনেক কমে গেছে। তবে এখনও আমি গড়ে প্রতিদিন সাড়ে চারটি করে মন্তব্য পেয়ে সন্তুষ্ট আছি। এজন্য আমি মন্তব্যকারী পাঠকদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এ বছরে আমাকে ৯ জন নতুন পাঠক অনুসরণ করেছেন, আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যাটিও ৫ জন কমে গেছে। তবে গত এক বছরে আমার ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা ছিল ৪৮৯০০ জন , গড়ে দৈনিক ১৩৪ জন। গত এক বছরে কেবলমাত্র এই একটি পরিসংখ্যানই তুলনামূলকভাবে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার আগের বছরে এই সংখ্যাটি ছিল ৪৩২২০ জন, গড়ে ১১৭ জন। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে যে পাঠকেরা আমার ব্লগে তুলনামূলকভাবে আসছেন বেশি, কিন্তু মন্তব্য করছেন কম। এর কারণ কী হতে পারে? আমি নিজ থেকে একটু ভেবে যা পেয়েছি, তা হলোঃ
*এমনিতেই সামগ্রিকভাবে ব্লগে নতুন পোস্ট এবং মন্তব্য আসার সংখ্যা অনেক কমে গেছে, এটা কোন গবেষণা ছাড়াই, খালি চোখেই দেখা যায়। এর প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই আমার পোস্টেও পড়েছে। এমন কি ব্লগ সেলিব্রিটিদের পোস্টেও মন্তব্যের জোয়ারে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তবে এটা ভেবে আমি কোন আত্মতুষ্টি পেতে চাইনা। আমি মনে করি, লেখার মান ভালো হলে মন্তব্য আসবেই। 'লাইক' এর ব্যাপারটাও মন্তব্যের সাথে অনেকটা সমানুপাতিক।
*আমার লেখার মান হয়তো কমে গেছে। মান কমার সম্ভাব্য কারণ, আমি হয়তো 'typed and monotonous' হয়ে গেছি। অনেক পাঠকের মত আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি, আমার লেখায় ঘুরে ফিরে প্রত্যুষের চেয়ে সায়াহ্নের, দিনের চেয়ে রাতের কথা বেশি আসে। স্রষ্টার বিষয়, প্রার্থনার বিষয়, মৃত্যুর বিষয়, মৃত্যুর সাথে জড়িত পার্থিব এবং অপার্থিব ভালোবাসার বিষয়, ক্ববরস্থানের বিষয় ইত্যাদি ঘুরে ফিরে আসে। ব্লগে লেখার বিষয় হিসেবে এগুলো নিতান্তই dull subject। পাঠকেরা এসব বিষয়ে পড়তে বা ভাবতে ব্লগে আসেন না, কারণ এগুলো পশ্চাদমুখী বিষয়, অনেকের জন্য হয়তো মন বিষণ্ণ করা বিষয়ও।
*ব্লগে আমার লেখার বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকে সাধারণতঃ সাদামাটা কবিতা, ট্রাভেলগ- যেখানে আমার ব্যক্তিগত কথাই বেশি থাকে, যাপিত জীবনের দিনলিপি, কদাচিৎ ছবিব্লগ, তার চেয়েও কম মাঝে মধ্যে দুই একটি গল্পও। তবে আমি অনায়াসে স্মৃতিকথা লিখতে পারি, এবং এ যাবত আমার প্রত্যেকটি স্মৃতিকথাই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
*গত বছরে ব্লগে আমার কবিতাই আনুপাতিক হারে বেশি এসেছে। ৫২টি পোস্টের মধ্যে কবিতার সংখ্যা ২১টি, শতকরা হিসেবে ৪০%। এমনিতেই কবিতা পাঠক টানে না। ব্লগে অনেক কবিতাবিদ্বেষীকে সদর্পে কবি ও কবিতার প্রতি অবজ্ঞা ও নিন্দা প্রকাশ করতে দেখেছি, যদিও মানব মনের কোমল অনুভূতিসমূহের নান্দনিক প্রকাশের শুদ্ধতম এবং সহজতম মাধ্যম কবিতা বলেই আমি মনে করি। ৪০% কবিতা পোস্ট করে আমার ব্লগে মন্তব্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, এমন আশা করাটা দুরাশা মাত্র।
সপ্তম বর্ষপূর্তির পোস্টটি ৫৬৭ বার পঠিত হয়েছিল, ৩৮টি মন্তব্য (প্রতিমন্তব্যসহ ৭৬) এবং ২৪টি 'লাইক' পেয়েছিল। উপরে বর্ণিত কারণগুলোর মধ্যে অন্ততঃ কয়েকটির কারণে হয়তো অষ্টম বর্ষপূর্তির এই পোস্টটি ততটা সাফল্যের মুখ দেখবে না, তবে আমি পাঠকদের বিবেচনা ও বিচক্ষণতার উপর আস্থাবান ও আশাবাদী। সপ্তম বর্ষপূর্তির পোস্টে বেশ কয়েকজন গুণী এবং সহৃদয় ব্লগারের মন্তব্য আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছিল। তার মধ্যে ব্লগ প্রতিষ্ঠাতা জানা, বিজ্ঞ ব্লগার ড. এম এ আলী, কবি জাহিদ অনিক, সব্যসাচী লেখক, গায়ক ও সুরকার সোনাবীজ অথবা ধুলোবালিছাই, স্বাপ্নিক কবি স্বপ্নবাজ সৌরভ এবং প্রকৃতির কবি মনিরা সুলতানা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। আমি তাদের প্রত্যেকের কাছে এই উৎসাহ এবং প্রেরণার জন্য ঋণী এবং তাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
গত এক বছরে আমার এই পোস্টটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিলঃ ব্লগারঃ পাঠক, লেখক এবং পর্যবেক্ষক
এক হাজারের বেশি ক্লিক সংখ্যা পাওয়া পোস্ট আমার সঞ্চয়ে খুব বেশি নেই, বছরে দুই একটার বেশি আসে না। গত বছরে ঐ একটাই এসেছিল। অন্ততঃ দু'জনের 'প্রিয় তালিকা'য় স্থান পেয়েছে, এমন মোট তিনটি পোস্ট ছিল। সেগুলো হচ্ছেঃ একটি প্রার্থনা, ব্লগারঃ পাঠক, লেখক এবং পর্যবেক্ষক এবং ভালোবাসার ভাষা
একটি কবিতা কমপক্ষে ১৫০ বার পঠিত হলে এবং ৫টি মন্তব্য পেলে আমি মোটামুটিভাবে কবিতাটিকে পাঠকপ্রিয়তার মানদণ্ডে গড় মানের হয়েছে বলে গণ্য করি। এর উপরে যত যাবে, ততই সেটা অধিগড় হবে। সেই মানদণ্ড অনুযায়ী গত এক বছরে আমার একটি মাত্র কবিতা এই 'গড়' মান অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি খানিকটা হতাশার হলেও তা স্বীকার করতে কোন দ্বিধা নেই। কবিতাটি হলোঃ কবিতাঃ গতি ও স্মৃতি
ভালোয় মন্দে আমাদের এ ব্লগটা এগিয়ে চলেছে। এখান থেকে গত প্রায় দেড় যুগে অনেক জ্যোতিষ্মান তারা ঝরে পড়েছে, তাদের জন্যে আমরা প্রায়ই হা-হুতোশ করি। তবে সংখ্যায় কম হলেও, এরই মধ্যে টিমটিমে আলো নিয়ে অনেক নতুন তারাও উদিত হয়েছে। আসুন, তাদের আমরা সকলে মিলে উৎসাহিত করি। তাহলে নতুনরাও পুরনোদের মত অচিরেই দীপ্যমান হবে। যাওয়া আসা জগতের নিত্য খেলা। এর মাঝেই যারা শারীরিক অদৃশ্য থেকেও লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকের মনে ঠাঁই করে নিতে পারবেন, তাদের ব্লগিংই সার্থক।
ব্লগ প্রতিষ্ঠাতা, প্রশাসক, মৌন ও সক্রিয় পাঠক, লেখক, পর্যবেক্ষক সকলের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে অষ্টম বর্ষপূর্তির এই পোস্টের ইতি টানছি। সবাই ভালো থাকুন, সপরিবারে, সুস্বাস্থ্যে!
ঢাকা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৯৪৩
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৩