somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'তুমি অনেক বুড়া'!

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবারে আমাদের আদরের নাতনিটা চল্লিশ দিনের মত বেড়িয়ে গেল দেশ থেকে। এই চল্লিশ দিনের মধ্যে ওর জন্মদিনটাও পড়েছিল। সেদিন ওর মা, বাবা ও ছোটভাইটা সহ ওরা সুন্দরবনে ছিল। সেখানে ছোট্ট করে শুধুমাত্র পরিবারকে নিয়ে ওর জন্মদিন স্মরণ করা হয়েছিল। ফিরে আসার পর একটি অনুষ্ঠান করে ওর জন্মদিনটাকে পালন করা হয়। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে সে উৎফুল্ল মনে ওর গিফটগুলো খুলে খুলে দেখছিলো। নগদ টাকা হাতে পেয়েও সে খুব খুশি! একটু পরে সে একটা ডায়েরি আর কলম নিয়ে এসে বসলো। সেখানে সে তালিকা করছিল ওর উপহারের টাকা দিয়ে কাকে কাকে উপহার কিনে দিবে। তালিকার এক নম্বরে দেখলাম ওর প্রাণপ্রিয় ছোটভাই আরহামের নাম, যদিও চব্বিশ ঘণ্টা জুড়েই ওদের মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকে। দেখলাম, তখন পর্যন্ত করা তালিকার মধ্যে আমার নামটি নেই। তার পরের কিছু কথোপকথনঃ

- লিস্টে আমার নাম নেই কেন?
-ওয়েট করো।
- আরহামকে তুমি কী কিনে দিবা?
-গাড়ী।
-আমাকেও একটা গাড়ী দিও।
-না, তুমি গাড়ী পাবা না।
-কেন?
- কারণ তুমি অনেক বুড়া! (You are too old for toy cars!)
-তা'হলে আমাকে তুমি কী দিবা?
-পরে দেখবা।

এর পরে আর বলার কীই বা থাকে! তাই কথা আর গড়ালো না, শুধু মুখ টিপে হাসলাম। পরেরদিন বিকেলে সে তার মাকে নিয়ে ইউনিমার্ট থেকে সবার জন্য গিফট কিনে এনে যার যার হাতে তুলে দিল। আমাকে দিল একটা কলম। বুঝলাম, বুঝে শুনেই সে আমার গিফটটা কিনেছে।

ইতোমধ্যে কানাডায় ওর স্কুল খুলে গেছে বেশ কয়েকদিন হলো। কানাডায় ওদের সাথে ছিলাম ৯৫ দিন। আমরা ফিরে আসার দুইদিন পর ওরা ঢাকায় এসে থেকে গেল একনাগাড়ে ৪০ দিন। একসাথে প্রায় ১৩৫ দিন থাকার ফলে বুকের মাঝে মায়ার বৃক্ষ দিনে দিনে অনেক ডালপালা ছড়িয়েছে। ওদের যাবার সময়টা যতই নিকটে আসছিল, ভেতরে ভেতরে ততই শূন্যতার অনুভূতি ঘনিভূত হচ্ছিল।

বুড়ি ফিরে গেছে। বাসার আনাচে কানাচে রেখে গেছে অনেক, অনেক ছোট ছোট স্মৃতি! ও ফিরে যাবার পর ঘরটা যেন শূন্য খাঁচায় পরিণত হয়েছে, আমরা হয়ে গেছি empty-nesters। আমরা এদিকে ওদিকে ঘুরি ফিরি, কখনো দু'জনে এককভাবে, আবার কখনো দীর্ঘদিনের বন্ধুদের সাথে যূথবদ্ধ হয়ে। দিনশেষে ঘরে ফিরে এলে, ঘর ফাঁকা!

এই তো জীবন! যুগ যুগ ধরে এভাবেই মানুষ প্রিয়জনদের সান্নিধ্য লাভ করে উষ্ণ হয়েছে, উৎফুল্ল হয়েছে; একসময় তাদেরকে দৃষ্টির অগোচরে বিদায় জানিয়ে বিষাদগ্রস্ত হয়েছে, বুকে ও চোখে ধারণ করা তাদের স্মৃতিগুলোকে অবসরে স্মরণ করে আপন মনে ভারাক্রান্ত হয়েছে। ওর দিদিকেও দেখি, ওর কথা বলতে বলতে উঠে গিয়ে আড়ালে চোখ মুছে আসে। এই যে মায়া, এ মায়ার বাঁধন থেকে মানুষের যেন কোন নিস্তার নেই!



ঢাকা
০৬ অক্টোবর ২০২৩
শব্দ সংখ্যাঃ ৩৮৯
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:০৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×