somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুয়াহাটীতে ( গৌহাটি ) দুই দিন-৫ ( শেষ )

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Click This Link
কোলকাতায় ৯ ঘণ্টা

ঝকঝকে সকালের আলোয় ফুরফুরে মেজাজে উড়তে উড়তে এক ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম কোলকাতা। হাওড়ার জোড়াব্রীজ ( বৃটিশ ও আধুনিক), বিশাল রেলওয়ে স্টেশন, ইডেনের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সল্টলেক ফুটবল স্টেডিয়াম, গঙ্গা নদী, আকাশছোঁয়া ভবনরাজী আর বিস্তৃত কোলকাতা শহর পাখীর চোখে দেখলাম। নামার আগে খুব নীচদিয়ে উড়ছিলো বলে সবকিছু খুব স্পষ্ট দেখা গেছে। ভালোয় ভালোয় কোলকাতায় নেমে গেলাম।

কলকাতায় আদতে ৫ ঘণ্টা বসে থাকার কথা ছিলো। গুয়াহাটীতে এক ঘণ্টা দেরী হওয়ায় কলকাতায় এক ঘণ্টা কম বসতে হবে ভেবে ভালোই লাগছিলো। তাই বিধাতা বোধহয় অজ্ঞাতে হেসেছিলেন। চেক ইনের ঘোষণায় বিলম্ব দেখে অস্থির হয়ে উঠছিলাম। এই সময় এলো বজ্রাহত হবার মতো খবর ! আরো ৫ ঘণ্টা বেশী থাকতে হবে কলকাতায় ! সব মিলে প্রায় ৯ ঘণ্টার ধাক্কা। আমরা দেশ ছেড়েছি বৃহস্পতিবার। শুক্রবার থেকে নাকি বিমানের এই সময় বদল হয়েছে। টিকিট বদলে কিংফিশার বা এয়ার ইণ্ডিয়ায় আসার ব্যর্থ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম।

এর মধ্যে প্রশ্ন উঠলো আদতে ৫ ঘণ্টা বিলম্বিত বিমানেই যেতে পারবো কিনা ? কারণ পাশে বসা এক পরিবারের ৭ জনের নাকি কনফার্মড টিকেট থাকা সত্বেও তারা সিট পাচ্ছেন না। আবার বিমান অফিসে যেতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা চেক ইন আদেশ ছাড়া ও এলাকায় যেতে দিতে রাজী হলেন না। ভাগ্যিস এ সময় বিমানের এক কর্মকর্তা এলেন। তিনি পুলিশকে বলে বিমান অফিসে যাবার ব্যবস্থা করলেন।

সাদা চামড়া কালা চামড়া

বিমান অফিসে কাজ করছিলেন এক ভদ্র লোক। কথা বলে বুঝলাম কোলকাতারই লোক। বললেন, কনফার্মড টিকিট থাকলেও ৭২ ঘণ্টা আগে আবার কনফার্ম করতে হয়। তাঁকে বললাম, এর আগেই যে আমরা গুয়াহাটীতে চলে গেছি, সেখান থেকে তো আমাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব ছিলো না। এ কথা শুনে বললেন, তাহলে বসুন। দেখছি আপনাদের ব্যাপারটা। দ্রুত হাতের কাজ সেরে কম্পিউটারের সামনে এলেন আমাকে সাথে নিয়ে। এ সময় হন্তদন্ত হয়ে এক সাদা চামড়ার বিদেশী ঢুকলেন। ঢাকায় দূতাবাসে কাজ করেন। তাঁর অনেক কাজ ঢাকায় সে জন্য টিকিট বদলাতে চান। বিমানের ওই কর্মকর্তা বললেন তাঁকে একটু অপেক্ষা করার জন্য। আমাকে দেখিয়ে বললেন, ওনার কাজটা সেরে নিই। সাদা ভদ্রলোক চাইলেন আমার কাজটা রেখে তাঁর কাজটা আগে করে দেয়া হোক। বিমান কর্মকর্তা বললেন, ''দু:খিত, আপনাকে দয়া করে অপেক্ষা করতে হবে।" এটা শুনে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে সাদা চামড়া বেরিয়ে গেলেন।

এটা দেখে সাদা চামড়াকে কোন রকম পাত্তা না দিয়ে আমাকে বললেন, আপনি বসুন তো দাদা। আপনার কাজই আমি আগে করে দোব। ও ব্যাটার দরকার হলে আবার আসবে। এই সালার ( কোলকাতার উচ্চারণ) সাদা চামড়াদের নিয়ে আর পারিনা। ব্যাটেদের ধারণা ওরা এখনো আমাদের মালিকমোক্তার রয়ে গেছে। ও রকম ডাঁট দেখাতে চায় সব সময়। সব কাজ ফেলে ওদের কাজ আগে করে দিতে হবে। ষাট বছর আগে যে ওদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছি সেটা ভুলে গেছে। আমরা আর পাত্তা দিই না। এক সময় শাসন করেছেন, করেছেন। ওসব ভুলে যান। আর ওসব তামাদী স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।

আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথা শুনছিলাম। আসলে এ রকম আত্মমর্যাদাবোধ ছাড়া কোন স্বাধীন জাতি স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে না। উন্নতিও করতে পারে না।

বেশ কিছু সময় পর আমাকে বললেন, ''আপনার ভাগ্য ভালো স্যার, আপনার সিট আছে। আপনাকে আরেকটা প্রিন্ট আউট দিয়ে দিচ্ছি।'' আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রিন্ট আউট নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এসময় সাদা চামড়া আবার এসে ঢুকলো। আমি মুচকি হেসে বেরিয়ে এলাম দীর্ঘ সময় বিমানের জন্য নিশ্চিন্তে অপেক্ষা করার জন্য।

বহুভাষা

বসে বসে এয়ারপোর্ট দেখছি। কোলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তরাষ্ট্রীয় বিমান বন্দরের আন্তরাষ্ট্রীয় টার্মিনালটি পুরনো ভবনে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল এরচেয়ে বড়ো এবং সুন্দর। ব্যস্ততাও এখানে বেশী। অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীও বেশি। কলকাতা থেকে বাসে গৌহাটি যেতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা লাগে। প্লেনে লাগে মাত্র সোয়া ঘণ্টা। এদের বিমান এবং বিমানবন্দরে তিনটি ভাষা ব্যবহৃত হয়। গুয়াহাটীতে প্রথমে অহমিয়া, তারপর হিন্দি এবং সব শেষে ইংরেজী। কোলকাতায় প্রথমে বাংলা, এরপর হিন্দী, সব শেষে ইংরেজী।

আসামে প্রধানত: অহমিয়া পত্রিকা পাওয়া যায়। কিছু বাংলা কাগজ যায় কোলকাতা থেকে। আর আছে ইংরেজী কাগজ। কিছু সর্বভারতীয় ( যেমন টেলিগ্রাফ, টাইমস অব ইণ্ডিয়া। তবে সেটার আসাম সংস্করণ।) আর আছে স্থানীয় ইংরেজী কাগজও।

অহমিয়ার সাথে শুদ্ধ বাংলা, সিলেটী আঞ্চলিক, ময়মনসিংহের রংপুরের কিছু আঞ্চলিক শব্দের মিশেল থাকলেও বর্ণমালায় ভিন্নতা আছে। বোঝার সুবিধার্থে দুটো অহমিয়া দৈনিক পত্রিকার লিঙ্ক দিলাম-
http://www.assamiyakhabor.com/
http://www.ajirdainikbatori.com/
প্রথমটির নাম অহমিয়া খবর দ্বিতীয়টির নাম আজির দৈনিক বাতরী।

অবশেষে ঢাকায়

বিমানের সেই মুড়ির টিনে চড়ে রাত সোয়া ন'টায় ঢাকায় এসে নামলাম। আবারো শ্রদ্ধা বিমানের দুর্ধর্ষ সাহসী ক্রুদের । শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের দক্ষতাকে। ঢাকা নেমে পড়লাম ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইনের পাল্লায়। দেড় ঘণ্টা ওখানে শেষ। বাসায় আসতে আসতে রাত বারোটা। পৌনে দু'ণ্টার বিমান ভ্রমনের জন্য সবমিলে লাগলো ১৫ ঘণ্টার মতো। হাড়ে হাড়ে বুঝলাম ভ্রমন কাহাকে বলে !

সমাপনী

শুরুতেই বলেছিলাম দিন যদিও মাত্র দু'টি। গুয়াহাটী তথা আসামের জন্য বড়ো কিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে।

প্রথমত: আহমেদাবাদে প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচে ( শচীনের ১৪১ বলে ১৭৫ রানের অতিমানবিক ইনিংসের বদৌলতে) মাত্র তিন রানে হেরে গুয়াহাটী এসেছিল ভারতীয় দল সিরিজে ফেরার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু গো-হারা হেরে সব শেষ। এই ম্যাচ নিয়ে সবার খুব আশা ছিলো। আরেকটি কথা গুয়াহাটীর আকাশ বাতাস বেদনাবিদুর করে রেখেছিলো। সব পত্রিকায় বিশেষ প্রতিবেন ছাপা হয়েছে- এটাই খুব সম্ভবত: গুয়াহাটীর মাঠে লিটল মাস্টার শচীনের শেষ ম্যাচ !

দ্বিতীয়ত: আমরা যেদিন গেলাম সেদিনই ঢাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন উলফার দুই শীর্ষ নেতা শশধর ও চিত্রবন। রাতে তাঁরা ধরা পড়েন বিএসএফ সৈন্যদের হাতে। প্রথমে খবরে বলা হয়েছিলো তারা আত্মসমর্পন করেছেন। কিন্তু টিভির সামনে তাঁরা বললেন, তাঁরা আত্মসমর্পন করেননি। ৯ নভেম্বর তাদের মুক্তির দাবীতে আসাম বন্ধ পালন করেছে উলফা। এসব নিয়ে ব্যাপক অলোচনা সমালোচনা দেখা গেছে গুয়াহাটীতে।

তৃতীয়ত: গুয়াহাটী হয়ে অরুণাচল প্রদেশে গেছেন দালাই লামা। এটা নিয়ে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রকারান্তরে ভারতকে হুমকিই দিয়ে ফেলেছে চীন। এটাও বড়ো ঘটনা পুরো ভারতের জন্যও।

চতুর্থত: আমরা যে সম্মেলনে গেলাম সেটা সফল হবে বলেই আশা করা যায়। এর সফলতা মানে সেভেন সিস্টার্সের অর্থনৈতিক অঙ্গনে বিপুল সাড়া পড়বে। এ অঞ্চলের জীবন যাত্রাও বদলে যাবে।

পঞ্চমত: আসাম এই পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে সেভেন সিস্টার্স ( এখন এইট ) এলাকার গেট-ওয়ে হয়ে উঠতে চলেছে।

মাত্র দু'দিনে কিছুই দেখা হয়নি। এমন কি গণসঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ ড. ভূপেন হাজারিকার বাড়ীটাও অন্ধকারের জন্য ঠিক মতো দেখতে পারিনি। তাই সুন্দর এই শহরের ডাক বুকের ভেতর শুনতেই থাকবো আবার তার কাছে যাবার আগ পর্যন্ত। আপনিও ইচ্ছে করলে যেতে পারেন গৌহাটি তথা গুয়াহাটী। আমি নিশ্চিত সেখানে আপনার ভালো লাগবে।

মান্না দে'র একটা গান দিয়ে শেষ করি--
'' আবার হবে গো দেখা
এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো !"

( শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৫৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×