Click This Link
ভাংলো মিলন মেলা
৭ নভেম্বর মধ্যাহ্ণ ভোজ দিয়ে শেষ হলো দু'দিনের সম্মেলন। প্রতি বছর এই সম্মেলন হবে বলে সিদ্ধান্ত হলো। আগামী বছর এটা হবে নাইজেল শহরে। সবাই সবার কাছে ঠিকানা বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগের প্রতিশ্রূতি দিলাম। বাংলাদেশে আসার জন্য দাওয়াত দিলাম। জানিনা এদের কারো সাথে আর দেখা হবে কিনা। ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে কারো কারো সাথে দেখা হয়েও যেতে পারে। কিন্তু সবার সাথে হবেনা এটা নিশ্চিত। কারণ পৃথিবীর কোন মিলন মেলাই আর কখনো একই লোকদের নিয়ে বসে না। কিছু মানুষ আর আসে না। নতুন কেউ সে স্থান দখল করে।
ভেবেছিলাম শহর ঘুরবো। ব্রক্ষ্মপুত্র নদ দেখবো এবং উত্তর গুয়াহাটী যাবো নদীর ওপরের সরাইঘাট ব্রিজ পার হয়ে। ওপারের আমিনগাঁওয়ে আছে ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলোজি ( আইআইটি)। এপারে আছে গুয়াহাটী বিশ্ববিদ্যালয়, কামাক্ষার বিখ্যাত মন্দিররাজি ( কামাক্ষা মন্দির,আদি মন্দির, মা কামাক্ষা মন্দির ইত্যাদি), আছে চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ক। এর কিছুই হলো না মহাস্বাধীন ড্রাইভার কামাক্ষানাথের বদৌলতে। প্রায় ঘণ্টাখানেক বিলম্বে এলেন। এই দেরী তাঁর কাছে কোন ব্যাপারই না। সোজা জানালেন, জ্যামের জন্য দেরী হয়েছে, তার কী দোষ !? ফলে শহর ভ্রমনের প্ল্যান বাদ দিতে হলো। কারণ সূর্যাস্তের পর শহরের দূরের প্রান্তে যাওয়া সমীচীন মনে হলো না।
হোটেলে ডলার ভাঙ্গানোর কোন ব্যবস্থা নেই। ডলার ভাঙ্গানো নিয়ে এক ঝামেলায় পড়লাম। স্টেট ব্যাঙ্ক (অহমিয়া ভাষায় লেখে বেঙ্ক) অব ইণ্ডিয়ার অল্প কিছু শাখায় ভাঙ্গানো যায়। এরকম একটা ব্রাঞ্চ খুঁজে পেতে পেতে ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত হোটেলের মধ্যস্থতায় ডলার ভাঙ্গানো হলেও ডলার প্রতি ৩ রুপি কমে ভাঙ্গাতে বাধ্য হয়েছি।
বিগ বাজার
যানজট এড়িয়ে খুব বেশী কিছু করা যাবেনা বলে চেইন সুপারশপ ''বিগ বাজারে'' ঢুকলাম। কিছু শপিং করলাম। বেশ ভালো শপিংয়ের জন্য।তবে একটা পরিবর্তন লক্ষ করলাম জিনিসপত্রের দামে। এতোদিন শুনেছি ভারতে বিশেষত: উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেশীরভাগ জিনিস সস্তা। কিন্তু এখন অনেক দাম। কিছু কিছু বাংলাদেশের চেয়ে দাম বেশী।
ফিরে আসা
পরদিন ৮ তারিখে ভোরে রওয়ানা দিলাম। গুয়াহাটি এয়ার পোর্টে পৌঁছার ঠিক আগে দেখি বিরাট সামিয়ানা টানিয়ে হজ্বযাত্রীদের বিমানযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দেখে ভালো লাগলো। ভেতরে ঢুকে দেখলাম সেখানেও হজ্বযাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা সর্বতোভাবে তাঁদের সাহায্য করছেন।
ঢোকার মুখে পুলিশ কর্মকর্তা বললেন আপনাদের ফ্লাইট নাম্বার কিন্তু মিলছে না। কাউন্টারে যোগাযোগ করুন। জেট এয়ারের টিকেট আমাদের। পরে আসতে হলো জেট লাইটে। জেট এয়ার আর জেট লাইটের যাত্রীদের একত্রে জেট লাইটে আসতে হলো।
দালাই লামা
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিমানে আরোহনের জন্য বসে আছি। কথা বলছিলাম জিওলজিকাল সার্ভে অব ইণ্ডয়ার মহাপরিচালক নীতিশ দত্ত মহাশয়ের সাথে। তিনিও কোলকাতায় আসবেন, কারণ জিওলজিকাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার সদর দফতর কোলকাতায়। এমন সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষ নড়াচড়া চোখে পড়লো। ইণ্ডিগো এয়ার লাইন্সের একটা বিমান আমাদের সামনে এসে টেক্সিং শেষে থামলো। দেখলাম তিব্বতের প্রধান ধর্মগুরু দালাই লামা বিমান থেকে নামলেন। সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলাম। খুব কাছে থেকে তাঁকে দেখার সুযোগ পেয়ে খুব ভাগ্যবান লাগলো নিজেকে। ছবিতে তাঁকে দেখতে যেমন লাগে বাস্তবে তিনি দেখতে অনেক বেশী আকর্ষণীয়। যা ভাবতাম তার চেয়ে অনেক বড়োসড়ো ও সুন্দর দেহের অধিকারী তিনি। বিমান বন্দরে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে তিনি হেলিকপ্টারে অরুণাচল প্রদেশে চলে যান। ( অরুণাচলের বিষয়টি পরে পেপারে পড়ে জেনেছি)
পাখির চোখে ব্রক্ষ্মপুত্র নদ
কুয়াশার জন্য এক ঘণ্টা বিলম্বে বিমান আকাশে উড়লো। জেট লাইটের নতুন বোয়িং ৭৩৭-৯০০। চারপাশে সকালের রোদের ঝকঝকে আলো। জানালার পাশে বসে পাখির চোখে দেখলাম গুয়াহাটী শহর। ব্রক্ষপুত্র নদের সূচনা ধারাও দেখলাম। চারপাশ থেকে অনেকগুলো ঝর্ণাধারা মিশেছে। কী বিশাল সেই জলধারা ! অবিশ্বাস্য রকমের চওড়া সেখানে এই নদ। তবে শীতের সময় বলে পানির পরিমান কম। পাহাড়ের কোলে বিস্তৃত গুয়াহাটী শহরটি আসলেই খুব সুন্দর। প্রকৃতির অপরিমেয় সৌন্দর্যের এক ঈর্ষণীয় ভাণ্ডার ! (চলবে)
শেষ পর্ব-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




