Click This Link
মণিরাম দেওয়ান ট্রেড সেন্টারটি আসাম সরকার বাণিজ্য বিকাশের জন্য তৈরী করেছে। এখনো নির্মানকাজ শেষ হয়নি। এটি ঐতিহ্যবাহী ''বালাজী টেম্পল'' সংলগ্ন। শহরের এক প্রান্তে পাহাড়ের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় এলাকায় স্থাপিত।
কনফারেন্সের প্রতিটি সেশনে একাধিক পেপার উপস্থাপন করা হয়েছে খনি ও খনিজ শিল্প বিষয়ে। ভারত সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এসব উপস্থাপনা। কর্পোরেট হাউসগুলোর পক্ষ থেকেও পেপার পেশ করা হয়েছে।
এখানে এসে দেখলাম জিওলজিকাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়া ( জিএসআই ), ইণ্ডিয়ান ব্যুরো অব মাইন্স , কোল ইণ্ডিয়া লি. নিজেদের কাজে বেশ সক্রিয়।
শুরুতে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসা নিয়ে বিপাকে পড়লেও ভেতরে গিয়ে পেলাম সম্পূর্ন ভিন্ন চিত্র। সবাই খুব আন্তরিক ব্যবহার করলেন। খুব আগ্রহ দেখালেন বাংলাদেশ সম্পর্কে। মন্ত্রী, সচিব সবাই তাঁদের বক্তব্যে বাংলাদেশ এবং ভূটান থেকে প্রতিনিধি যোগদানের বিষয়টি উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের পেপার উপস্থাপনের এবং পরে প্রতিক্রিয়া জানাবার ব্যবস্থা করেছেন।
এসব আনুষ্ঠানিকতার বাইরে ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সাথে আলাপ পরিচয় হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাংলাদেশ থেকে ১৯৪৭ উত্তরকালে ভারতে চলে যাওয়া মানুষদের বাংলাদেশের প্রতি প্রচণ্ড টান।
জিওলজিকাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার মহাপরিচালক মি. নীতিশ কুমার দত্ত মুন্সীগঞ্জের মানুষ। ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে বারবার বাংলাদেশের খবর নিয়েছেন। বাংলাদেশে বেড়াতে আসার জন্য তাঁর তীব্র আকূলতা আমার খুব ভালো লেগেছে। তাঁকে বাংলাদেশে আসার জন্য আমিও দাওয়াত করেছি। ঠিকানা বিনিময় করে বলেছি বাংলাদেশে এলে তিনি যেন আমাদের জানান । আমরা তাঁকে বাংলাদেশে এলে সম্ভাব্য সব সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
এছাড়া বিভিন্ন কর্পোরেট হাউসে কর্মরত বরিশাল,ময়মনসিংহ, সিলেট, ফরিদপুর থেকে যাওয়া মানুষরা বাংলাদেশের জন্য পাগল। আমি নোয়াখালীর লোক হলেও তাঁরা আমার সাথে নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন। আমিও বরিশাল, সিলেট প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষায় তাঁদের সাথে কথা বলেছি। সিলেট এলাকায় প্রচলিত জোক শুনিয়েছি। তাদেরকে বাংলাদেশে দাওয়াত করেছি।
কোলকাতা থেকে গিয়েছেন অনেকে। অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় এই খাতের বাণিজ্যিক দিক নিয়ে পেপার পেশ করেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশেষত: অফিস আদালত, উচ্চ শিক্ষায় বাংলার ব্যবহার নিয়ে তাঁরা খুব উচ্ছ্বসিত সুনাম করলেন। জানালেন পশ্চিম বাংলায় বাংলা চর্চার দুরবস্থার কথা। সেখানে ব্যাপক হিন্দি চর্চা আর ইংরেজী না জানলে চাকরী না পাবার কথাও বললেন।
বাস্তবতা হলো বহুভাষী দেশ ভারতে ইংরেজী ছাড়া উপায় নেই। প্রত্যেকে নিজের ভাষা সম্পর্কে খুব সংবেদনশীল। নিজের ভাষা কেউ ছাড়তে চায় না। বিশেষত: দক্ষিণ ভারত হিন্দির আসেপাশেও যায়না। যে হিন্দি মুভি মধ্যপ্রাচ্য ছেয়ে আছে সেই হিন্দি মুভিও দক্ষিণে চলে না। সেদিন পেপারে দেখলাম, যে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইতে হিন্দি মুভির জন্ম হয় সেই মহারাষ্ট্র রাজ্য বিধান সভায় বিধায়ক আবু আজমী মারাঠীর বদলে হিন্দিতে শপথ নেয়ায় এমএনএস বিধায়কদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
হোটেল নক্ষত্রের বদলে প্রগতি মেনর
পরের দিনও পার্টি হবার কথা ছিলো হোটেল নক্ষত্রে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের জন্য সে পার্টি করতে হয়েছে হোটেল প্রগতি মেনরে। সে পার্টিতে যোগ দেন মিজোরামের মন্ত্রী মি. লালরিনলিয়ানা সাইলো। কতক্ষন পর দেখি বাংলাদেশ দলের লোকদের খোঁজা হচ্ছে। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো মন্ত্রী সাহেবের কাছে। তিনি জানালেন, অচিরেই তিনি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আমরাও বললাম, তাঁকে বাংলাদেশে স্বাগত: জানাবার জন্য আমরা সানন্দে অপেক্ষা করবো।
পার্টি ভালোই জমলো। আমি যখন নানা উপাদেয় পানীয়ের বদলে কোক আর জুসের সন্ধান করলাম তখন টেবিলে যেন বাজ পড়লো। উড়িষার রাজধানী ভূবনেশ্বর ( সাবেক কটক ) থেকে আসা এক ভদ্রমহিলা পর্যন্ত অবাক হলেন। তিনি সমানে চালাচ্ছিলেন লাল পানীয়। সিলেটী ভদ্রলোক বললেন আপনিতো এখন বিদেশে, আপন মর্জিতে চলুন। আমি হেসে বললাম, আপন মর্জি মতোই তো কোক চাইছি। টেবিল জুড়ে হাসির বন্যা বয়ে গেলো।
একটু পর নিজ বাড়ী থেকে দূরে আসা একজনকে দেখা গেলো সত্যিই বেশ স্বাধীন হয়ে গেছেন। এসেছেন অরণাচল প্রদেশ থেকে। নিজেকে বিশ্বের কনিষ্ঠতম পিএইচডি ডিগ্রীধারী বলে ঘোষণা দিলেন জড়ানো কণ্ঠে। বললাম, আপনার নাম তাহলে গিনেস বুকে পাওয়া যাবে। ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ও শালারাতো হিন্দি জানে না। আবার হাসির রোল উঠলো।
(চলবে )
পরের পর্ব-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




