Click This Link
নন্দন হোটেল
নন্দন হোটেলে এসে হোটেল কর্মীদের পেশাদারী মনোভাব ও দক্ষতা দেখে বেশ ভালো লাগলো। তিন তারকা এ হোটেলটি পল্টন বাজার এলাকায়। এখানকার এককালের সবচেয়ে ভালো হোটেল। এর চেয়ে ভালো নতুন দু'টি হোটেলে ভারতীয় আর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের অবস্থানের জন্য বুকড থাকায় এখানেই উঠতে হলো। ভেতরের সাজসজ্জায় প্রাচীনত্বের সৌন্দর্য ফুটে আছে। লিফট দুটোও এন্টিক- লোহার গ্রিলের দরজাবিশিষ্ট।
সকালে এক কপি ''টাইমস অব ইণ্ডিয়া''র সাথে ফ্রি নাস্তার কুপন। পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে নাস্তার টেবিলে গিয়ে ভালো লাগলো। ব্যুফে সিস্টেম। তবে আমাদের কাছাকাছি নাস্তার ধরণ। নাস্তার মেন্যুটা আর নাস্তার মান খুব ভালো। স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। লুচি,সবজি,ডাল,টোস্টেড ব্রেড,ফ্রেন্চ ফ্রাই, টক এইসব বিচিত্র স্বাদের আয়োজন।
মণিরাম দেওয়ান ট্রেড সেন্টার
এরপর কামাক্ষানাথের গাড়ীতে তীব্র যানজট পেরিয়ে সম্মেলনস্থল মণিরাম দেওয়ান ট্রেড সেন্টারে হাজির হলাম সকাল সাড়ে নটায়। যাবার পথে শহর ঘিরে থাকা আকাশছোঁয়া পাহাড়ের সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। কামাক্ষানাথ জানালেন এসব পাহাড়ে এখনো কিছু চিতাবাঘের আনাগোনা আছে। মাঝে মাঝে চিতাবাবুরা শহর পর্যটনে বেরিয়ে পড়েন। তখন বন বিভাগের লোকজনের ডাক পড়ে। তাঁরা চিতাবাবুদের ধরে আবার তাদের পাহাড়ী বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। মাঝে মাঝে নরমাংসভোজের সাধও তারা অপূর্ণ রাখেন না। পাহাড়ে নরভোজী চিতাদের আনাগোনা আছে বলে বাঘেরবাড়া মানুষজন যে পাহাড়বিবাগী হয়ে গেছেন তা কিন্তু নয়। গাছের ফাঁকে ফাঁকে সেই ঘোর পাহাড়চূড়াতেও বহু ঘরের চাল মাথা বের করে আছে। গুয়াহাটী মেডিকেল কলেজও কম যাবে কেন ? সেটাও একটা দশাসই পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উঁচিয়ে আছে।
সম্মেলনে যাবার আগে যেমনটা ভেবেছিলাম আয়োজন দেখলাম তার চেয়ে বড়ো। এলাহী কাণ্ডই বলা চলে। প্রধান অতিথি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের খনিজসম্পদ মন্ত্রী মি. বি.কে. হেনডিক। বিশেষ অতিথি আসামের মুখ্যমন্ত্রী মি. তরুণ গগৈ, আসামের খনিজ সম্পদ মন্ত্রী মি. খোরসিঙ এংটে ও মিজোরামের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ; শ্রম,কর্মসংস্থান ও শিল্প প্রশিক্ষণ এবং ব্যবসা ও বাণিজ্য মন্ত্রী মি. লালরিনলিয়ানা সাইলো। আরো ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের খনিজ সম্পদ সচিব শ্রীমতি শান্থা শীলা নায়ার এবং আসাম সরকারের খনিজ সম্পদ কমিশনার ও সচিব মি. রবি কাপুর।
এটা ছিলো মূলত: ইনভেস্টারস কনফারেন্স। ফলে খনিজ সেক্টরের সব মহারথীরাই হাজির ছিলেন। ফেডারেশন অব ইণ্ডিয়ান মিনারেল ইণ্ডাস্ট্রিজ অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিলো। এই সংগঠনটি খুবই প্রভাবশালী। কারণ খনিজ সেক্টর হচ্ছে সব চেয়ে ব্যয়বহুল সেক্টর। এই সেক্টরের মেনিবিড়ালরাই অন্য অনেক সেক্টরের বাঘের চেয়ে বড়ো সাইজের। শতশত কোটি বা হাজার কোটিতে এদের হিসাব। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সেক্টরের হিসাব লক্ষ কোটিতে। সেভেন সিস্টার্স ( এখন এর সাথে সিকিমকেও জুড়ে আট বোন বলা হচ্ছে ) বলে পরিচিত এই অঞ্চল খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। ( আসাম,মণিপুর,মেঘালয়,অরুণাচল প্রদেশ,মিজোরাম, নাগাল্যাণ্ড ও ত্রিপুরা )
সরকারের তরফ থেকে এই সম্মেলনে তুলে ধরা হলো গত কয়েক বছরের কিভাবে শতশত কোটি রুপি ব্যয়ে এসব রাজ্যে বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। জানানো হয়েছে চলমান উন্নয়ন পরিকল্পনায় কতো বিপুল বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং বিনিয়োগের জন্য কী ব্যাপক ও চোখ কপালে ওঠার মতো উৎসাহপ্যাকেজ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর তরফ থেকে। সব কথা মনে নেই তবে এটুকু মনে আছে শতভাগ ট্যাক্স হলিডে, ক্যাপিটাল মেশিনারির ট্যাক্সের ওপর ৯০% পর্যন্ত রি-ইমবার্সমেন্ট ( এখানে অবশ্য কিছু সীমারেখা আছে)। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো ৩০% পর্যন্ত বিনিয়োগ ফেরতের ঘোষনা এবং এর কোন ঊর্ধসীমা নেই অর্থাৎ বিনিয়োগ হাজার কোটিতে হলেও তার ৩০% ফেরৎ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। মন্ত্রী, সচিব সমস্বরে এসব জানিয়ে বিনিয়োগের আহবান জানালেন। এ সবের সাথে ভাবা হচ্ছে ''জিও ট্যুরিজম'' চালুর কথাও। আকর্ষণীয় জিওলজিক্যাল সাইটগুলো দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে পর্যটকদের। ঘনসবুজ নিবিড় বনে ছাওয়া মন ভরিয়ে দেয়া রোমাঞ্চকর পাহাড়ী পথে ছুটে চলার বিমলানন্দতো সাথে থাকছেই।
মন্ত্রী সচিবদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সাথে বিপুলসংখ্যক কমাণ্ডোও মোতায়েন ছিলো। এর বাইরে স্থানীয় কোন নেতাকর্মী কিংবা আমলা বাহিনীর টিকির সন্ধানও পাওয়া গেলো না আসেপাশে। মন্ত্রী সচিবদের কথার ওজন, সেক্টর সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা আর কাজের গতিশীলতা দেখে টাসকি খাবার যোগাড় ! ব্যবসায়ীরা আইনগত কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুললেন। সচিব প্রতিটি সমস্যার জবাবে জানালেন নতুন তৈরি করা আইনে কী সব সংস্কার করা হচ্ছে। সাথে জানালেন লোকসভার চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই পাশ হতে যাচ্ছে এই নতুন আইন। আর দেখলাম আইনের সর্বগামিতা। প্রতিটা বিষয়ে আইন রয়েছে। পরিবেশ আইনের কড়াকড়ি নিয়ে কথা তুলতেই সচিব জানালেন, খনি, অর্থনীতি,উন্নয়ন এসবের মতো পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটা মেনেই কাজে নামতে হবে। (চলবে)
পরের পর্ব-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




