somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা - ১২

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব - Click This Link

আতাউস সামাদ

আমাদের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ। পাকিস্তান আমল থেকেই সাহসী সাংবাদিকতার জন্য তিনি খ্যাতিমান। আশির দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় বিবিসিতে স্যারের বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী রিপোটিংই ছিলো বাংলাদেশের মানুষের সঠিক খবর পাবার প্রধান উৎস। সাথে ছিলো ভয়েস অব আমেরিকায় গিয়াস কামাল চৌধুরীর রিপোটিং। গিয়াস কামাল সাংবাকিতা বিভাগের মাস্টার্স প্রথম ব্যাচের ছাত্র। একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভি আর বেতার তখন সাহেব বিবি গোলামের বাক্স বলে বদনাম কিনে বসেছিলো। হাতে গোনা পত্রিকাগুলোর টুঁটি চেপে ধরা। এরশাদ তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য স্যারকে গ্রেফতারও করেছিলো। তাঁর মুক্তি দাবী করে আমরা স্যারের ছাত্রছাত্রীরা ঢাকার রাজপথে মিছিলও করেছিলাম।

স্যার পড়াতেন এডভান্স রিপোর্টিং। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতার গল্পগুলো স্যারের ক্লাসকে দারুন আকর্ষণীয় করতে তুলতো। তার একটা আপনাদের কাছে নিবেদন করলাম।

১৯৬৯ সালে ( নাকি ৭০ সালে ? এটা নিয়ে একটু খটকা আছে মনে )তখনকার হার্টথ্রব হলিউড অভিনেতা মার্লোন ব্যাণ্ডো ঢাকা সফর করেছিলেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসাবে। প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন তিনি। নানা বিষয়ে বহু প্রশ্ন করা হলো তাঁকে। প্রশ্নের উত্তর শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন মার্লোন ব্রাণ্ডো। তরুন সাংবাদিক আতাউস সামাদ বললেন, একটা ছোট প্রশ্ন- আপনি এমন অদ্ভুত রঙচঙে কোট প্যাণ্ট টাই পরেছেন কেন ? খুশিতে আটখানা হয়ে টেবিল চাপড়ে আবার বসে পড়লেন ব্রাণ্ডো। বললেন, ধন্যবাদ ইয়াং ম্যান। আমি তোমাদের কাছে প্রথম যে প্রশ্ন আশা করেছিলাম সেটাই তুমি সবশেষে করলে। আমি যেহেতু শিশুদের জন্য শুভেচ্ছা দূত তাই আমি লক্ষ করেছি শিশুরা কোন কোন রং পছন্দ করে। সেই রংগুলোর কথা মনে রেখে আমি পোষাকের রং ঠিক করেছি। ওদের প্রিয় রঙের পোষাক পরলে সহজেই ওরা আমার প্রতি আকৃষ্ট হবে। আমার সাথে সহজ ভাবে মিশে মনের কথা খুলে বলবে। ওদের মনের কথা জেনে সেটা ইউনিসেফকে জানাবো যেন তারা সে অনুযায়ী শিশুবান্ধব কার্যক্রম নিতে পারে।

এখনো সাংবাদিকতা আর কলাম লেখায় ডুবে আছেন স্যার। এরশাদ পতনের পর স্যার বিবিসি ছেড়ে দেন। ছেড়ে দেন সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও। আমার বিরল সৌভাগ্য যে আমি তাঁর মতো কিংবদন্তী সাংবাদিকের ছাত্র।

খোন্দকার আলী আশরাফ

খোন্দকার আলী আশরাফ ছিলেন দৈনিক বাংলার সহকারী সম্পাদক। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ''দুর্জন উবাচ'' নামে খুব জনপ্রিয় কলাম লিখে পরিচিতি পান স্যার। বই আকারে বের করেছিলেন সেগুলো। এছাড়া সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় ''দুর্জন'স কলিয়াম'' এবং ''দুর্জনস্য অর্থশাস্ত্রম'' নামে আরো দুটি জনপ্রিয় কলাম লিখেছিলেন। সেবা প্রকাশনী থেকে বেশ কয়েকটি ওয়েস্টার্ন বইও বের করেছিলেন স্যার।

তিনি পড়াতেন ফিচার। দারুন ফিচারের হাত ছিলো স্যারের। খুব ছোটখাট আকৃতির ছিলেন। চোখে অনেক পাওয়ারের পুরু লেন্সের চশমা।কিন্তু ভরাট গমগমে কণ্ঠ ছিলো তাঁর। মুখের দিকে চেয়ে না থাকলে কেউ বিশ্বাস করতো না এটা তাঁর কণ্ঠস্বর। প্রাথমিক ক্লাস নেবার পর স্যার একদিন বললেন, আধঘন্টা সময় দিলাম। টিএসসি ঘুরে আয়। ঘুরে আসার পর বললেন, কে কি দেখলি তার ওপর নিজের মতো করে ফিচার লিখ। আমরা তো থ'। স্যার বললেন, ফিচার আছে সমাজের সর্বত্র, এমনকি ঘাসে পাতায়ও ফিচারের উপাদান থাকে। প্রখর দেখার চোখ হলো ফিচারের উৎস। আকর্ষণীয় ঘটনাতো এমনিতেই সংবাদ। ফিচার আড়ালে পড়ে থাকে। খুঁজে নিতে হয়। পিআইবি থেকে ফিচার লেখার একটা দুর্দান্ত হ্যান্ডবুক মতো বইও বের করেছিলেন।

এখনো মনে পড়লে রোমাঞ্চিত বোধ করি এই ভেবে যে, আমি দুর্জন উবাচ বইয়ের লেখকের ছাত্র ছিলাম।

এখন খুব সম্ভব অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাসভবনে বাস করছেন তিনি।

শহীদুল হক

শহীদুল হক স্যার ছিলেন ''বাংলাদেশ টাইমস'' এর সম্পাদক। খুবই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী নিয়ে দারুন বিশ্লেষণী ক্লাস নিতেন তিনি। হঠাৎ করে মারা যান স্যার। তাঁর ছেলে শাহরিয়ার শহীদ আমাদের আগের ব্যাচে সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এখন বাসস'র বিশেষ সংবাদদাতা।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম চৌধুরী ( বেবী)

বেবী স্যারও বাংলাদেশ টাইমসের সম্পাদক হয়েছিলেন। শহীদুল হক স্যারের উল্টা স্বভাবের। হাসিখুশী দিলখোলা। তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য সবাইকে বিস্মিত করতো। স্যার পরে ডেইলী টেলিগ্রাফের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। স্যারও বেঁচে নেই।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×