মেজাজ খিঁচড়ে গেলো তিন পাতার ভিসা ফরম দেখে। দুনিয়ার সব অদ্ভুত তথ্য লাগে। আমেরিকা বা ইংল্যাণ্ড বা সেনজেন দেশের ভিসার জন্যতো মহাভারত লিখতে হয়। প্রথম দুটি আবার অনলাইনে। আমার দেখা মতে মালয়েশিয়ার ভিসা ফরম পূরণ করা সব চেয়ে সহজ। খুব কম তথ্য লাগে।
পরে মেজাজ খারাপ হলো ফ্লাইটের তারিখ দেখে। এ বছরের ২২ জানুয়ারী ছিলো সেই তারিখ। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় আখেরী মুনাজাতের দিন ছিলো সেটা। ফলে এয়ারপোর্ট যেতে ব্যাগ নিয়ে কয় মাইল হাঁটতে হবে তার কোন হিসাব নেই। পরে ঠিক হলো সবাই মিলে একটা বাসে যাবো। সেই বাস ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে যাবার জন্য বহুঘাট ঘুরে বিশেষ অনুমতি নেয়া হলো। বাস ছাড়বে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে। জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত যানজট থেকে রেহাই নেই ভেবে সকাল ৯টায় বাস ছাড়ার সময় ঠিক হলো। বাসা থেকে বের হলাম সকাল আটটায়। এয়ারপোর্ট পৌঁছালাম সকাল পৌনে দশটায়। ফ্লাইট দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। চার ঘন্টা বোনাস অপেক্ষা।
আমাদের বাহন
বসে বসে সবার ব্যস্ততা দেখি। এক সময় অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় ল্যাণ্ড করলো আমাদের বাহন। থাই এয়ারওয়েজের এয়ার বাস।
আমরা সব মিলে ৪৪ জন। ফলে যেখানে যাই আমরাই রীতিমতো ভীড় লাগিয়ে ফেলি। চেক ইন, ইমিগ্রেশন আর নিরপত্তা বলয় পার হয়ে চড়ে বসলাম বিমানে। কোচ সেকশান জমজমাট যাত্রীতে।
কোচ সেকশনে আমরা
বিমান যথা সময়ে উড়াল দিলো আকাশে। দুই ঘন্টার ফ্লাইট। অর্ধেক সময় চলে যায় আয়েস করে খেতে খেতে। ফলে বিরক্তিকর লাগে না বসে থাতে। ফ্লাইট ছিলো বেশ আরামদায়ক। কোন টার্বুলেন্স মোকবেলা করতে হয়নি।
যথা সময়ে অবতরণ করলাম বিশাল আকৃতির সুবর্নভূমি বিমান বন্দরে। আক্ষরিক অর্থেই চোখ ধাঁধানো। বহুপথ হাঁটতে হলো ইমিগ্রেশন পর্যন্ত পৌঁছাতে। তেমন সময় লাগলো না সেখানে।
আমাদের এগিয়ে নেবার জন্য লোক এসেছে এআইটি থেকে। কারণ ট্রেনিংয়ের এ অংশটার ব্যবস্থাপনায় ছিলো এআইটি এক্সটেনশন কর্তৃপক্ষ। এদের একজন সুফিয়ান। থাই মুসলিম। সুফিয়ান আবার খুব হুঁশিয়ার লোক। আমাদের দলনেতা বললেন সব লোক আছে। সুফিয়ান বললো সবাই লাইনে দাঁড়ান। আমি গুনবো। গুনতে গিয়ে দেখা গেলো একজন কম। কোথায় গেছে সে কেউ বলতে পারলো না। সুফিয়ান আমাদের সবাইকে দাঁড় করিয়ে একজনকে সাথে করে খুঁজতে গেলো। সুবর্নভূমি বিমান বন্দরে একজনকে খুঁজে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। পাক্কা দেড় ঘন্টা বসে রইলাম তাকে খুঁজে বের করার জন্য।
পরে জানা গেলো ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিতি তার এক থাই বান্ধবীর সাথে সটকে পড়ায় তাকে আমরা পাচ্ছিলাম না। (ফেসবুক নিপাত যাক)
তারপর সবাই উঠলাম দোতলা এক বাসে। নীচের বিশাল বক্সে আমাদের লাগেজ ঢুকিয়ে সবাই উঠলাম দোতলায়। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে ব্যাংককে। ব্যাংককের সাথে আমার প্রথম মোলাকাত আলো ঝলোমল রাতে !
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




