***এক মুঠো শুভ্র নীলা***
সকাল ১০:২০ ।শুভ্রর ফোন বেজে উঠল ।
ফোনটা এসেছে নীলার কাছ
থেকে ।
শুভ্র:[ঘুম জড়ানো কন্ঠে] হ্যলো,নীলা ?
নীলা:তুমি কোথায় ?আমি প্রায় ২০
মিনিট যাবত্
পার্কে অপেক্ষা করছি ।তোমার
সাথে জরুরী কথা আছে ।
শুভ্র:ওহো সরি ।ঘুম
থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে ।
মাত্র ৫ মিনিট
অপেক্ষা করো লহ্মীটি,
আমি এক্ষুনি আসছি ।
নীলা:আচ্ছা তাড়াতাড়ী আসো ।
নীলার কন্ঠটা আজ শুভ্রর কাছে একটু
অন্য রকম লাগছে ।নীলার
কথা শুনে শুভ্র
বুঝতে পারলো যে নীলার মন আজ
ভালো নেই ।যা হোক
তড়িঘড়ি করে শুভ্র
রেডি হয়ে নিলো ।
২০মিনিট পর,
শুভ্র:সরি লহ্মীটি আসতে দেরি হয়ে গেছে ।
রাস্তায় প্রচুর জ্যম ছিলো ।প্লিজ রাগ
করোনা ।
নীলাকে আজ খুব উদাসীন লাগছে ।
শুভ্র ভাবল যে দেরি করে আসার জন্য
হয়তো নীলা রাগ করেছে ।তাই
নিজেই আবার বলে উঠল,
শুভ্র:ওহে সম্রাজ্ঞী, আপনি আমার উপর
রাগ করলে যে আমার গর্দান যাবে,
সে খেয়াল কি আছে?
নাহ, নীলার পক্ষ থেকে কোন উত্তর
আসল না ।কিন্তু এর আগে যতবারই শুভ্র
ওকে 'সম্রাজ্ঞী' বলে সম্মোধন
করেছে, ততবারই
নীলা হেসে উঠেছে ।অথচ আজ
সে কোন সাড়াই দিচ্ছে না,
উদাসীন
হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ।শুভ্রর
বুঝতে বাকি থাকল না যে নীলা নতুন
কোনো সমস্যায় পড়েছে ।
শুভ্র:নীলা, তোমার কি হয়েছে?
এতক্ষনে নীলার চমক ভাঙ্গল ।
উদাসীনভাবে বলল,
নীলা:সেদিন
তোমাকে বলেছিলাম যে,
আমাকে দেখতে এসেছে ছেলে আমেরিক
থাকে ।মনে আছে?
শুভ্র:হুম, মনে আছে ।
নীলা:ঐ ছেলের সাথে আমার
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ।এই সপ্তাহের
মধ্যেই কোন এক সময়ে বিয়ের দিন
পড়বে ।
নীলাকে থামিয়ে দিয়ে শুভ্র
উত্তেজিত ভাবে বলল,
শুভ্র:তাই নাকি? Congratulation...
তো আমি তাহলে দাওয়াত পাচ্ছি,
তাই না ?
শুভ্রর কথা শুনে নীলা হতভম্ব
হয়ে গোলো ।যে ছেলেটার
সাথে আজ ৪বছর ধরে চুটিয়ে প্রেম
করেছে, সে কিনা তার বিয়ের
কথাটাকে হেসে উড়িয়ে দিলো ?
নীলা:আমি কিন্তু
কথাটা সিরিয়াসলি বলছি ।
হেসে উড়িয়ে দিও না ।আর প্লিজ
একটা ব্যবস্থা করো ।
শুভ্র:আমি কখনোই
তোমাকে নিয়ে উপহাস করি না ।এই
বিয়ে তোমার বাবা-মায়ের
ইচ্ছাতেই হচ্ছে ।আমার মতে, এই
বিয়ে মেনে নেওয়া তোমার কর্তব্য ।
কোনোভাবেই নিজের
বাবা মাকে কষ্ট দেওয়া উচিত্ না ।
তাছাড়া তুমি নিজেও সুখী হবে ।আর
ভেবে দেখো, যদি তোমার
বিয়েটা ভেঙ্গে যায়
তাহলে তোমার পরিবারের
অবস্থাটা কি হবে ?অন্তত তোমার
পরিবার আর নিজের ভবিষ্যতের
কথা ভেবে তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাও
।
নীলা পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেলো ।
শুভ্রর মুখ থেকে আজ প্রথম সে এই ধরনের
কথা শুনছে ।নিজের অজান্তেই
একফোঁটা অশ্রু গাল
বেয়ে পড়ে গেলো ।
নীলা:তুমি আমার ভবিষ্যতের
কথা ভাবলে, আমার পরিবারের
কথা ভাবলে, একটিবারের জন্য
নিজের কথাটা ভাববে না ?
আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে ?
কিছুক্ষন নীরব
থেকে নিজেকে সামলে নিল শুভ্র ।
তারপর আকাশের
দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করল,
শুভ্র:তুমি আমারই ছিলে, আমারই আছো,
আর আমারই থাকবে ।আমি তোমার
হৃদয়কে ভালোবাসি, তোমার
দেহকে নয় ।তোমার দেহটা অন্য কেও
পেতে পারে ।কিন্তু, তোমার
হৃদয়টা শুধুমাত্র আমার জন্যই তৈরী ।
তোমার হৃদয় খানা যে আমার
কাছে গচ্ছিত ।একটু একটু করে তোমার
হৃদয়কে আমার মাঝে গড়ে তুলেছি ।
আমাদের ভালোবাসার
কোনো সমাপ্তি ঘটবে না ।
আমি আজীবনই
তোমাকে ভালোবেসে যাবো ।'আর
তোমার সুখই আমার সুখ '।
নীলার গাল বেয়ে অঝর ধারায় অশ্রু
ঝরে পড়ছে ।নীলা আজ ভালোবাসার
প্রকৃত অর্থটা বুঝতে পেরেছে ।আজকের
পর থেকে এই ভালো মানুষটার
সাথে হয়তো আর
কখনো দেখা হবেনা, এমন কি কথাও
বলা হবে না ।নীলা, শুভ্র মুখের
দিকে অপলক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ।কিছুক্ষন
পরে অস্ফুট স্বরে বলল,
নীলা:আমি একটা কাজ করবো ?রাগ
করবে না তো ?
শুভ্র:আমার পক্ষ থেকে তুমি আজ
স্বাধীন ।তোমার
যা খুশি করতে পারো ।
ইচ্ছা হলে আমার গালে একটা চড়ও
বসাতে পারো ।
আমি তোমাকে কিছুই বলব না ।
শুভ্রর কথা শেষ হওয়ার সাথেই হঠাত্
নীলা, শুভ্রকে জড়িয়ে ধরল ।শুভ্র ঠিক
আগের মত করেই ঠায় বসে থাকল ।চার
বছরের প্রেমের জীবনে আজ প্রথম
নীলা শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেছে ।শুভ্রর
অনিচ্ছা সত্তেও
সে নীলাকে বাধা দিতে পারল
না ।এর আগে মাত্র একটি বারের জন্য
সে নীলার হাত ধরেছিলো ।
তাছাড়া আর
কখনো সে নীলাকে ছুঁয়ে পর্যন্ত
দেখেনি ।আজ প্রথমবারের মত
নীলা ওকে জড়িয়ে ধরেছে, আর আজই
শেষবারের মত ও নীলার স্পর্শ অনুভব
করছে ।শুভ্রর খুব ইচ্ছা হলো নীলাকে দুই
হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার,কিন্তু তার
বিবেক
তাকে বাধা দিয়ে বলল,''না এটা অন্যায়
।'' ওদিকে নীলা অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
নীলা :আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
শুভ্র সম্পূর্ণভাবে নীরব থাকল ।কিছুক্ষন
পর নীলা উঠে চলে যাওয়ার জন্য
প্রস্তুত হয়ে পিছন ফিরে বলল,
নীলা :নিজের খেয়াল রেখো ।
আল্লাহ হাফেজ ।
নীলার মুখের
দিকে তাকানোর সাহস শুভ্রর
হলো না ।আকাশের
দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল
।নীলা চলে গেলো ।আর শুভ্র ঠায়
বসে রইলো ।কিছুক্ষন পর অঝর ধারায়
নেমে এলো বৃষ্টি ।আজ
তো বৃষ্টি হওয়ার কোন লক্ষনই
ছিলো না ।তাহলে কেনো এই বৃষ্টি ?
হয়তো শুভ্র চোখের অশ্রুকে আড়াল
করার জন্যই এই বৃষ্টির আগমন ঘটেছে ।
বিকেলে বাড়িতে ফিরে এলো শুভ্র
।মনে হচ্ছে বুকের ঠিক
মাঝখানে কেও
একটা বর্শা গুজে দিয়েছে ।নীলার
বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সেই
কথা ভেবে কিন্তু শুভ্রর কষ্ট হচ্ছে না ।
শুভ্র কষ্ট পাচ্ছে এই কথা ভেবে যে,আর
কোনো দিন হয়তো নীলার মুখটা ওর
সামনে ভেসে উঠবেনা,নীলার
কন্ঠস্বর হয়তো আর কোনদিন ওর
কানে পৌছাবে না ।
নিজেকে সান্তনা দিয়ে শুভ্র
ভাবলে যে নীলাতো ওর বুকের
মাঝেই আছে,তাহলে কষ্ট
পেয়ে লাভ কি ।
**১০ বছর পর,
শুভ্র একজন মেডিকেল ডাক্তার ।
ভালে ডাক্তার হিসাবে শহরে তার
অনেক নামও আছে ।আজ শুক্রবার ।শুভ্রর
আজ ছুটি ।তাই প্রাইভেট
নিয়ে বেরিয়েছে ।আকাশটা বেশ
ফুরফুরে বৃষ্টি হওয়ার কোন লক্ষন নেই ।
হঠাত্ একটা জায়গায় শুভ্রর চোখ
আটকে গেলো ।সেই পার্ক
যেখানে ১০ বছর আগে শুভ্র আর
নীলা শেষবারের মত
দেখা হয়েছিলো ।রাস্তার
পাশে গাড়িটা রেখে পার্কের
ভেতরে ঢুকল ।সেই বেঞ্চের ঠিক সেই
পাশেই বসলো যেখানে ১০বছর
আগে সে বসেছিলো ।সব কিছু সেই আগের
মতই আছে ।শুধু আজ নীলা নেই ।বিষন্ন
মুখে শুভ্র মাটির
দিকে তাকিয়ে আছে ।আর পুরানো দিন গুলোর কথা মনে
করছে ।
হঠাত্ তার পাশে এসে কেও একজন বসল
।শুভ্র চোখ তুলে দেখল সেই চির
চেনা মুখখানি ।শুভ্রর
পাশে নীলা এসে বসেছে ।বয়সের
ছাপটা নীলার মুখে পড়েছে ।শুভ্র
যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস
করতে পারছে না ।তাই একবার চোখ
মুছে নিলো ।কিন্তু না,সত্যই
নীলা তার সামনে বসে আছে ।শুভ্রর
এই অবস্থা দেখে বলে উঠলো,
নীলা :কি মশাই ভূত দেখেছেন
নাকি ?
এতক্ষন শুভ্রর চমক ভাঙ্গলো ।
তারপর অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
শুভ্র :তুমি কি এখানে প্রতিদিন
আসো ?
নীলা :নাহ,১০ বছর পর আজ প্রথম এলাম ।
রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়
পার্কের দিকে চোখ পড়াতেই
চলে এলাম ।
শুভ্র :আমিও ১০ বছর পর আজ প্রথম এলাম ।
গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম ।
পার্কটা দেখে চলে এলাম ।
নীলা :আমাদের ভাগ্য ১০ বছর এক
জায়গায় টেনে এনেছে ।
শুভ্র :আচ্ছা বাদ দাও ।এখন বলে কেমন
আছো ?
নীলা : এই তো স্বামী সংসার
নিয়ে সুখের আছি ।বিয়ের ছয় মাসপর
আমেরিকা চলে গেছিলাম স্বামীর
সাথে ।আর এক সপ্তাহ
আগে দেশে ফিরলাম ।
শুভ্র : সুখেই আছো তাহলে ?
নীলা :হুম ।
শুভ্র :ছেলে মেয়ে কতটা ?
নীলা :একটা মেয়ে আছে ।৮ বছর
বয়স,এইবার প্রথম
ওরা বাংলাদেশে এসেছে ।
শুভ্র :ও...... ।
নীলা :তুমি কেমন আছো ?
শুভ্র :এই তো কোন রকম ।
নীলা :মেডিকেল পড়া শেষ
করেছিলে ?
শুভ্র :হুম ।আমি এখন ডাক্তার ।
নীলা :ছেলে মেয়ে কয়টা ?
শুভ্র :নেই ।
নীলা :তোমার স্ত্রী কি করে ?
শুভ্র :নেই ।
নীলা :মানে ?
শুভ্র :আমি বিয়ে করিনি ।
কথাটা শোনা মাত্র নীলা হতবাক
হয়ে গেলো ।শুভ্রর
দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট
স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
নীলা :কেনো ?
অন্যমনস্ক হয়ে শুভ্র
বলা শুরু করল ।
শুভ্র :আমি,তোমাকে আমার হদয়ের
যে স্থানে বসিয়েছি,সে স্থানে অন্য
কাওকে বসানো আমার পক্ষে সম্ভব
না ।
নীলা :আমার জন্য
তুমি এইভাবে নিজের জীবনটা নষ্ট
করে দিলে ?
শুভ্র একটু মুচকি হেসে বলল,
শুভ্র :তোমার সুখই আমার সুখ ।
নীলার
চোখ দিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু ঝরে পড়ল
।প্রকৃতি যেন ওদের সাথে নিরবতায়
অংশ নিয়েছে ।হঠাত্ শুভ্রর ফোন
বেজে উঠল ।
শুভ্র :হ্যলো.....
শুভ্র :আচ্ছা আমি এখনি আসছি ।শুভ্র
উঠে দাড়ালো ।শুভ্রর মুখের
দিকে তাকানোর সাহস নীলার
হলো না ।শুভ্র পিছন ফিরে বলল,
শুভ্র :নিজের খেয়াল রেখো ।আল্লাহ
হাফেজ ।নীলা আকাশের
দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো ।
শুভ্র চলে গেলো ।নীলা ঠায় বসে রইল
।কিছুক্ষন পর অঝর ধারায়
নেমে এলো বৃষ্টি ।আজ
তো বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো না ।
তাহলে কেনো এই বৃষ্টি ?
হয়তো নীলার চোখের অশ্রু আড়ার
করার জন্যই এই বৃষ্টি আগমন ঘটেছে ।
বি:দ্র: সম্পূর্ণ কাল্পনিক ।
**এক মুঠো শুভ্র নীলা পাওয়ার যেমন
অসম্ভব,ঠিক তেমনি এই ধরনের
ভালোবাসা পাওয়াটাও অসম্ভব ।
**** সমাপ্ত ****
লেখা : অতৃপ্ত কল্পনার মানব