এরপর রাসূল(ছাঃ) জিবরাঈল(আঃ) তার মূল আকারে দেখলেন। রাসূল(ছাঃ) বলেছেন- জিবারাঈল(আঃ) দেখতে এতোটা বড় আকারের যেনো তার দেহ দিয়ে পুরো পৃথিবীটাকে ঢেকে রাখা যায়। আল্লাহর এই পবিত্র সৃষ্টির ৬০০টি ডানা রয়েছে। এবং প্রতিটি ডানা থেকে অনবরত মনিমুক্ত ঝড়তে থাকে। আল্লাহর এই প্রকান্ড পবিত্র সম্মানিত সৃষ্টি আকারে হয়তো তিনি মহাবিশ্বের গ্রহগুলো থেকেও অনেক বড়। তার শক্তি, তার মহাত্ব দিয়ে তুলনা করা যায় আল্লাহর সৃষ্টি এমন কোন বান্দা খুজে পাওয়া দুস্কর। আল্লাহর এই মহান সৃষ্টির দিকে রাসূল(সাঃ) তাকিয়ে এক আর্য্যকর দৃশ্য দেখলেন।
সিদরাতুল মুনতাহার কাছে এসে তারা আল্লাহর খুব কাছে চলে আসলেন। আল্লাহর এতো কাছে আসার পর জিবরাঈল(আঃ) আল্লাহর মাহাত্ব, তার অসীম ক্ষমতা, তার অকল্পনিয় কুদরত, তার সেই সীমাহীন রহমত আল্লাহর সব কিছুকে যেনো আবার নতুন করে অপলব্দী করতে লাগলেন। এই অপলব্দীর কারণে আল্লাহর মহান এই সৃষ্টি হয়েও তিনি এতোটা অসহয়ানুভব করলেন যে তাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি একটি ফেলে রাখা ভেজা নেকরার মতো। কিন্তু এটা তাকে কোন ভাবেই ছোট করে দেখার কথা বলা হয়নি। বরং তার অন্তরে আল্লাহর মহত্বের উপলব্দী এতোটাই প্রবল ছিলো যে সিদরাতুল মুনতাহায় এসেও তার মনের এই পরিস্থিতি হয়েছে। ভেবে দেখুন আল্লাহর পবিত্র এই মহান সৃষ্টির কথা, আর আমাদের কথা। আমরা বান্দারা আল্লাহর সামনে প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তে দাঁড়াই। এবং নামাজে দাড়িয়ে কত কি কথা ভাবি, কত অন্যমস্ক হয়ে যাই। তারপরও আমাদের রব আমাদের উপর রাগ করেননা। বরং আমাদের গাফেলতিগুলো অনবরত ক্ষমা করে দেওয়া জন্য অপেক্ষা করেন। কখন আমরা তার কাছে তওয়াবা করবো সেই আসায়।
এরপর, রাসূল(ছাঃ) জিবরাঈল(আঃ) কে সেখানে রেখে তিনি সিদরাতুল মুনতাহা থেকে আরো উপরের দিকে উঠলেন। যেখানে আল্লহ কোন সৃষ্টির এর আগে যায়নি। কোরআনে সূরা আন-নাজম এর প্রথম থেকে কয়েকটি আয়াতে এসেছে। আয়াত- ১ নক্ষত্রের কসম যখন তা ডুবে যায়। আয়াত- ২ তোমার সাথী পথ ভুলে যায়নি, সে পথভ্রষ্টও হয়নি আয়াত-৩ না সে কখনো নিজের খেকে কোন কথা বলে আয়াত-৪ বরং সে যা বলে তা হচ্ছে ওহী; যা তার কাছে পাঠানো হয়। আয়াত-৫ একজন তাকে এটা শিখিয়ে দিয়েছে, সে প্রবল শক্তির অধিকারী আয়াত-৬ সে সহজাত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী অতপর সে কি নিজ আকৃতিতে দাড়ালো আয়াত-৭ সে ঊর্ধ্বাকাশের উপনিভাবে অধিষ্ঠিত আয়াত-৮ তারপর সে তার কাছে এলো; অতপর সে আরো কাছে এলো। আয়াত-৯ উভয়ের মাঝে ব্যবধান থাকলো মাত্র দুই ধনুকের সমান বা তার থেকেও কম। আয়াত-১০ অতপর সে বান্দার কাছে ওহী পৌছিয়ে দিলো, যা তার কাছে পৌছানো কথা ছিলো। আয়াত-১১ সে যা কিছু দেখেছে তার অন্তর তা মিথ্যে প্রতিপন্ন করেনি। আয়াত-১২ তোমরা কি সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছো যা সে নিজের চোখে দেখেছে! আয়াত-১৩ সে তাকে আরেকবার দেখেছিলো আয়াত-১৪ সিদরাতুল মুনতাহার কাছে আয়াত-১৫ যেখানে রয়েছে মোমেনদের ঠিকানা; জান্নাত। আয়াত-১৬ সেটি এমন কিছু জৌতি দিয়ে আচ্ছন্ন ছিলো, যা দ্বারা তার আচ্ছন্ন হওয়া শোভনীয় ছিলো। আয়াত-১৭ এখানে তার কোন দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং তার দৃষ্টিও সীমালংঘন করেনি। অবশ্যই সে তার মালিকের বড়ো বড়ো নির্দশনসমূহ দেখেছে। সাহাবীরা যখন জানতে চেয়েছিলেন যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে সরাসরি কি দেখেছেন। তিনি বললেন- আমি তার নূরের হিজাবকে দেখেছি।
আল্লাহ তায়ালা রাসূল(ছাঃ)কে যে তিনটি বিশেষ উপহার দিয়েছে তা প্রথমটি হলো- ফরজ নামাজ, দ্বিতিয়টি হলো সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং তৃতিয়টি হলো- তার উম্মতদের জন্য একটি বিশেষ রহমত তা হলো যারা আল্লাহ সাথে শিরক না করে মৃত্যুবরন করবে তাদের বড় বড় গুনাহগুলো আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।
এরপরই সেই ঘটনাটি ঘটে আল্লাহ তায়ালা রাসূল(ছাঃ) কে পঞ্চাশওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য আদেশ দিলেন তার উম্মতদের। এই পঞ্চাশওয়াক্ত ফরজ নামাজ নিয়ে ফিরার সময় আবারও দেখা হলো হযরত মুসা(আঃ)এর সাথে। তিনি রাসূল(ছাঃ)কে উপদেশ দেন- আল্লাহর কাছে ফিরে যেয়ে অনুরোধ করতে, তিনি যেনো নামাজের এই আদেশটি কমিয়ে আনেন। জিবরাঈল(আঃ) তিনিও বললেন হ্যা তার উচিত হবে আল্লাহর কাছে অনুরোধ করা। তিনি ফিরে এলেন চল্লিশওয়াক্ত নামাজ নিয়ে। এরপর মুসা(আঃ) আবার উপদেশ দিলে তিনি যেনো আরো কমিয়ে আনার অনুরোধ করেন আল্লাহ কাছে। এইভাবেই তিনি আল্লাহ নিকট কয়েকবার গেলেন। শেষে তা পাঁচওয়াক্তে নামিয়ে আনলেন। এবারও মুসা(আঃ) বললেন এই পাঁচওয়াক্ত নামাজও তোমার উম্মতরা পড়বেনা। তুমি আরো অনুরোধ করে কমিয়ে আনো। এবার রাসূল(ছাঃ) নিজেই লজ্জা পেলেন। তিনি বললেন আমি মাত্র এই পাঁচওয়াক্ত নামাজ থেকে আর কিভাবে অনুরোধ করবো কমানোর জন্য। তিনি যাকে এতোটা অনুগ্রহ করছেন। ঠিক সেই মুহুর্তে দূর থেকে ভেসে আসছে সংয় আল্লাহ মধুর নিজ কণ্ঠ- আল্লাহ বললেন- আমার ফরজ প্রতিষ্ঠিত হলো, এবং আমি আমার বান্দাদের ইবাদত সহজ করে দিলাম। যদিও সালাত পাঁচওয়াক্ত কিন্তু আমি এর প্রতিদান দিবো পঞ্চাশওয়াক্তর সমান, ছুবহাল্লাহ্।
এবার হয়তো মানুষ এটা ভাববে যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে কেনো এরকম ভাবে নামাজ ফরজ করলেন। তিনি তো অতীত এবং ভবিষৎ সম্পর্কে সব জানেন। তিনি তো আগে থেকে জানতেন যে রাসূল(ছাঃ) তার কাছে কয়েকবার নামাজ কমানোর জন্য এসে অনুরোধ করবেন। তাহলে কেনো সরাসরি একবারই পাঁচওয়াক্ত নামাজের আদেশ দিলেন না। এবার বলি তার কারণ, কারণ আল্লাহ তায়ালা তো বলেছেনই আমি তোমাদের শিক্ষা দেই বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন বিষয়ে। তাই আল্লাহ তায়ালা এইভাবেই আমাদের উপর নামাজ ফরজের মাধ্যমে একটি উত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণা শিক্ষাদান করেছেন।
ভেবে দেখুন আমাদের উপর যদি পঞ্চাশওয়াক্ত নামাজ প্রতিষ্ঠা থাকতো তাহলে আমাদেরকে প্রতি আধাঘণ্টা পর পর নামাজ পড়তে হতো। অন্য কিছু করার সময় থাকতো না। যেখানে পবিত্র ফেরেস্তারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য সবসময় নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমাদের দূবর্লতার কথা ভেবে ইবাদত সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদের পার্থিক জীবনের বিলাসিতাও দিয়েছেন, এবং তার ইবাদতের জন্যও বলেছেন। যেখানো আমারা আমাদের নিজেদের ব্যপারটা বুজতে পারি। কিন্তু আমরা তা ক’জনই বা আল্লাহ তায়ালার ভালোভাবে ইবাদতে নিয়োজিত থাকি। তিনি যা হুকুম দেন ফেরেস্তারা তাই করতে বার্ধ্য। কিন্তু আমদের তো তিনি নিজের থেকে বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের উপর সব কিছু ছেড়ে দিয়েছেন। এতো বড় নেয়ামত পাওয়ার পরও সেই আল্লাহ তায়ালাকে আমরা কি কিরে ভুলে যাই!
ছবিগুলো নেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০৩