রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এই গ্রামটি আদিবাসী অধু্যষিত। এই নিভৃত পল্লীতে সাঁওতাল-ওঁরাওদের বাস। এখানে রয়েছে আদিবাসীদের একমাত্র স্মৃতিসৌধ। মাটি থেকে খানিকটা উঁচু পাকা বেদি। তার উপর টকটকে লাল-কালো পাঁচটি স্তম্ভ। মাঝের স্তম্ভটি আকারে অন্যগুলোর চেয়ে একটু বড়, লম্বায় একটু বেশিও। পাশেই লাল-কালোর প্রস্তর ফলক। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আদিবাসীদের স্মরণে নামফলক।
1971 সাল। শুরু হল দেশজুড়ে যুদ্ধ। দেশমাতৃকাকে বাচাঁতে ঝাপিয়ে পড়ে ল ল বাঙালী। পিছিয়ে ছিলো না আদিবাসীরাও। যুদ্ধে তাদের অবদানও ছিল অপরিসীম। এই স্মৃতিসৌধটি প্রমান করে তাদের সেই বীরত্বের কথা। স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিমভাগ বাঁশবাড়িয়া গ্রামের অসংখ্য আদিবাসী সাঁওতাল এবং ওঁরাও সমপ্রদায়ের নারী পুরুষ সরাসরি অংশগ্রহন করেছিলেন। জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকহানাদার ও আলবদর-রাজাকারদের ওপর। এদের মধ্যে এ গ্রামেরই বাসিন্দা নাডা হেমব্রম, টুনু মাড্ডি, ধেরিয়া, জটু সরেন ও কানু হাসদাহ্। তারা দেশ স্বাধীন করতে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
2005 সালের আগ পর্যন্ত আদিবাসীদের এই ত্যাগ ও অবদানের কথা দেশবাসীর কাছে ছিল অনেকটাই অজানা। স্বাধীনতার দীর্ঘ 34 বছর পর্যন্ত এসব আদিবাসী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ছিলো মূল্যায়নহীন। স্বাধীনতার পর অনেক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে গেলেও কেউই এসব আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্মৃতি রা করতে এগিয়ে আসেনি। ফলে মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী সাঁওতাল -ওঁরাওদের বীরত্ব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিলো।
2005 সাল। অ্যামপাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপল (এলকপ) নামক একটি বেসরকারী সংস্থা এগিয়ে আসে বঞ্চিত আদিবাসীদের সাহাস্য করতে। তাদের উদ্যোগে আদিবাসী শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে এখানে নির্মাণ করে একটি স্মৃতিসৌধ। 2005 সালের 22 নভেম্বর স্মৃতিসৌধটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও আদিবাসী নেতা চম্পাই সরেন। ওই দিন বাঁশবাড়িয়া গ্রামসহ অন্য কয়েকটি আদিবাসী এলাকা থেকে সাঁওতাল-ওঁরাও মেয়ে-পুরুষ এসেছিল নাচ-গানের জন্য। এই স্মৃতিসৌধটি দেশের আদিবাসীদের একমাত্র ও প্রথম স্মৃতিসৌধ বলে দাবি করেছেন আদিবাসী নেতা চম্পাই সরেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



