শহুরে ব্যাস্ত জীবন দিন দিন মানুষ আকৃতির মেশিনে রুপান্তরিত করছে আমাকে।নিজের স্বকীয়তা প্রায় হারাতে বসেছি।হারাতে বসেছি ভবঘূরে ছন্নছাড়া হয়ে অপার রহস্যময় মানব জীবনের গভীরে ডুবে থাকার আনন্দ।কত দিন রোদেলা অলস দুপুরের স্থির নিরবতা উপভোগ করিনা।কতই না প্রিয় ছিল তপ্ত অলস দুপুরগুলো।নিরব রাতে ঝি ঝি পোকার গা ছমছম করা ডাক শুনতে শুনতে গ্রামের কোন রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার এডভেঞ্চার আজ আর মনেই পরে না।অথবা কোন বৃদ্ধ গাছের পাশ কেটে রাতের বেলা হেঁটে যাবার সময় গা ছমছমে ভৌতিক অনুভূতিই বা কোথায় যেন হারিয়ে গেল।গ্রামের রাস্তার ব্রেক বিহীন ভটভটি গাড়ীর তেল পোড়া যে গন্ধ আমাকে নেশাগ্রস্থ করত তা আর পাই না কোথাও।ভেজা খড়ের গাদার গন্ধই বা কোথায় হারাল।গোছল করার নামে বৃষ্টিতে ভিজে গায়ে কাঁদা মাখাই না সে তো অনেক দিন।এমন অসংখ্য মৌলিক অনুভূতি আজ বিলুপ্ত প্রায়।
তবু কিছু মানুষ দেখেছি চারপাশে যারা শত যান্ত্রিক ব্যাস্ততার ভেতরে নিজের স্বকীয় মৌলিকতা ধরে রাখতে পেরেছেন। ব্যাস্ততার ভীরে একটু সুযোগ পেলেই নিজের মানবীয় মৌলিকতা জানান দেন। একজন কর্মব্যাস্ত নারীর কথা বলি।যিনি শহরের অনেক ব্যাস্ত মানুষের মতই সারাদিন অফিসে কাজ করে গৌধূলি বেলায় বাসে উঠার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এমন একটি অস্থির ক্লান্ত সময়ে কেও কি ভাবতে পারে হাসি,আনন্দ বা শৈশবের ছেলেমানুষি করার কথা।কিন্তু আমি দেখেছি ঐ নারীকে ।তিনি সত্যিই অবাক করেছেন আমাকে।এই শহরের অনেক ব্যাস্ত একটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েছি বাসে উঠার আশায়।এই সব রাস্তার মোড়ে সর্প হাতে টাকা চেয়ে বেড়ায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো কিছু মেয়ে।টাকা না দিলে সাপের ভয় দেখায়। এযুগে এসেও তারা যাযাবর।তারা এখন শহুরে বেঁদে।যথারীতি ঐ নারী ও তাদের আক্রমনের স্বীকার।উনি বারবার বলে যাচ্ছেন বিরক্ত করো না।কে শোনে কার কথা।সর্প এতক্ষন কৌটার ভেতর ছিল।এখন কৌটার ডাকনা খুলে দিয়ে ঐ নারীর সর্পভীতি বাড়ানোর চেষ্টায় মনযোগী হল নাছোড়বান্দা বেঁদের দল।তারপর যা হল তা সত্যিই অবাক করার মত।নারীর সর্পভীতি তুলনামূলক বেশী ,এই প্রচলিত ধারনা জয় করে তিনি কৌটা সহ সাপকে বেঁদেনীর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের পার্সে ভরে হাসি মুখে হাঁটতে লাগলেন যেন কিছুই হয়নি।কি অদ্ভুত ব্যাপার।বেঁদেনীরা তো হতভম্ব।তারা এমন অভিঙ্গতায় হয়ত ভুলেও পরেনি কখনও।ঐদিকে তিনি তো হাঁসিমুখে হেঁটে চলেছেন।বেঁদেনীরা অনুরোধ করে বলতে লাগল ,আমার টেকা লাগব না গো ,সাপটা দিয়া দেইন ,বইন না বালা।তিনি বললেন ,না ,সাপটা পছন্দ হয়ছে আমার।বাসায় নিয়ে পুষব।অনেক অনুনয় বিনয় শেষে ফিরিয়ে দিলেন সাপটি।বেঁদেনীরা কোনমতে সাপ নিয়ে ভাগল।আমি উনার কাছে যেয়ে কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম ,আপু কি করলেন এটা?উনি হেসে বললেন ,কেন?আপনি সাপ ভয় পান?তারপর বললেন ,আমার হাজব্যান্ড সাপ ভয় করে।ভাবলাম সাপটা নিয়ে রাতে ওকে ভয় দেখাব।কিন্তু নিয়ে গেল তো।এরপর আবার পেলে সত্যিই নিয়ে যাব।
এই আপু সত্যিই পেরছেন অনেক ব্যাস্ততার ভীরেও প্রানবন্ত রাখতে নিজেকে।
আসলে আমাদের শত বছরের সভ্য সংস্কৃতি যেখানে আধুনিক নামধারী সব ভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাবে বিলুপ্ত প্রায় সেখানে নিজের হারানো মৌলিকতা ফিরে পাওয়া বড় দায়।তাইতো অনেকে অনেক কিছু পেয়েও ভোগে শূ্ন্যতায়।