আমাদের পাড়াঁর মেয়ে লিপির পেছনে যে নেশাখোঁর ছেলেটি সবসময় ঘুরঘুর করত,তার নাকি একটি পা কাটা পড়েছে।শোনে খারাপই লাগল।তার কাজকর্মে এতদিন যারা অতিষ্ট ছিল তারা অনেকে হয়ত খুশীই হয়েছে মনে মনে।একজন বলে উঠল ,উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।শাকিল নামের ছেলেটি রাত দুপুরে গাঁজার নেশায় অস্থির হয়ে লিপিদের বাড়ির পেছন পাশটায় এসে অকারনে চিৎকার চেঁচামেচি করত।কেউ কিছু বলতে গেলে অশ্রাব্য গালিগালাজ করত।ভাত পঁচানো মদ আর গাঁজা ছিল শাকিল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের প্রধান আনন্দ উপকরন।এই আনন্দ উপকরনের টাকা যোগাতে তারা চুরি ,ছিনতাই সহ কত কূকর্মই না করেছে।এমনি কোন কূকর্ম করতে যেয়েই শাকিল একটি পা হারাল।পা হারিয়ে শাকিলের প্রেমিক মন আরও অভিমানী হয়ে উঠেছে বলেই মনে হল।সেদিন দেখলাম রাস্তার পাশে একটা পুরোনো হুয়িল চেয়ারে বসে উদাস ভঙ্গিতে সিগারেট টানছে।লিপির সাথে প্রেম করাটা আর কখনই হয়ে উঠবে না এটা তার মেনে নিতে হয়ত খুব কষ্ট হচ্ছে।রাতে মাঝে মাঝে লিপিকে উদ্দেশ্য করে করা তার চিৎকার গুলো এমন ছিল ,'তরে পাইলেই আমি ভাল হইয়া যাইতাম।তুই কেন বোযস্ না'।কিন্তু লিপির কোন প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ত না।এখন সে জানে চিৎকার করে আর লাভের সম্ভাবনা নেই।সে এখন অসহায়।তার সঙ্গিরা ও আস্তে আস্তে তার সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছে।যে কজন খুব আপন ছিল তারাই এখন ও তার পাশে আছে।
এদিকে লিপির বিয়ে ঠিকঠাক।তার খালা খালুর পছন্দের পাত্রের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।লিপিও মনে মনে খুশী।অন্তত বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে তার সাজগোজ দেখে তাই মনে হচ্ছে।পাত্র দেখতে ভাল।রোজগারও ভাল।কিন্তু তার পরিচয় স্পষ্ট নয়।কিছুদিন হল সে আগন্তুক হয়ে এসেছে এই জনপদে।সে তার ব্যবহার এবং কাজ দিয়ে লিপির খালুর মন জয় করেছে।
আগন্তুকের সাথে আজ সন্ধায় লিপির বিয়ে।বর চলে এসেছে।আগন্তুকের খুব অস্বস্থি হচ্ছে।এমন অবস্থায় সে আগে পড়েনি।বিয়ে সে আগেও করেছে।তবে এত নিয়ম মেনে নয়।সে বুঝতে পারছেনা এত দেরী হচ্ছে কেন।কোনভাবে বিয়েটা সেরে বউ নিয়ে যেতে পারলেই সে বাঁচে।লিপির খালার বাড়ির পাশে ছোট্ট একটা ঘর ভাড়া করেছে সে লিপিকে নিয়ে উঠবে বলে।অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হল।আগন্তুক নতুন বউ নিয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় নিল।শাকিলকে আজ কোথাও দেখা গেল না।
চারদিন পরের কথা,সকাল বেলায় দেখলাম লিপি তার বর নিয়ে রিক্সায় করে নিজ বাড়িতে বেড়াতে আসছে।তাদের দুজনকে দেখেই খুব খুশী মনে হচ্ছিল।হাত ধরে হাসাহাসি করছিল।বিয়ের পর নাকি মানুষের লজ্জা কমে যায়।এটা তার ই প্রমান।আমি ভাবলাম ,ভাল সমাপ্তি।কিন্তু না।
প্রায় দুইমাস ব্যস্ততার কারনে এলাকায় ছিলাম না আমি।শেষে ফিরলাম।কিন্তু পরদিন একি দেখলাম...।লিপি আবার রিক্সায় করে নিজ বাড়িতে বেড়াতে আসছে।হাতে হাত রেখে আগের মতই হাসিখুশী।লজ্জাও আগের চেয়েও কমে গেছে।রাস্তায় পরিচিত মানুষ দেখেও দুজন দুজনের হাত ধরে টানাটানি করেই যাচ্ছে।কিন্তু অবাক ব্যাপার হল তার সাথে হাত রেখে রিক্সায় যে ছেলেটি বসে আছে সে লিপির সেই আগন্তুক স্বামী নয়।অন্য কেউ।
লিপির সেই আগন্তুক স্বামী ছিল পলাতক আসামী।পুলিশ তাকে খোঁজে বেড়াচ্ছিল।এই অপরিচিত এলাকায় এসে পালিয়েছিল সে।সে বুদ্ধিমান ছিল এবং খুব ভাল কাজ জানত বলে কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।বিয়ের দু সপ্তাহ পর কেউ কিছু বোঝার আগেই সে এই এলাকা ছেড়ে উধাও।আর কোন খোঁজই পেল না কেউ।এদিকে লিপির পরিবার মেয়ের কথা ভেবে অনেক কথা গোপন রেখে অতিদ্রুত একটি ছেলে দেখে লিপিকে আবার বিয়ে দিল।লিপিকে নতুন স্বামী নিয়ে খুব খুশীই মনে হল।যেন কিছুই হয়নি।মানুষের জীবন আসলেই অদ্ভুত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:০০