somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে আয় বন্ধু

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন কোন কারনে মন খারাপ ছিল।আমাদের মেস রুমে চুপচাপ বসে ছিলাম একা।তখন রুমে হয়ত একজন প্রবেশ করেছে,আমি খেয়ালই করিনি।হঠাৎ খুব কাছ থেকে কেউ একজন বলল,কিরে ভাল আছিস?প্রশ্নকর্তা আর কেও নয়।আমার বন্ধু ফারুক।দৈনিক কয়েকবার সে এই একই প্রশ্ন আমাকে করত।তার প্রশ্ন করার ধরন আর অঙ্গভঙ্গিতে যে কেও হেসে ফেলে।আমি অনেক কষ্টে হাসি চেপে গম্ভীর ভাব নিয়ে বললাম ,যা শালা পাবনার ম্যান্টাল। এই মেসের সবাই ফারুককে পাবনার ম্যান্টাল বলে ডাকত।আমিও তাই ডাকতাম।আমি এই নামে ডাকতে গেলেই সে এক ধরনের অভিমানী ভাব নিয়ে হেসে বলত,বন্ধু তুইও দিচ্ছিস?না,এই জীবন রেখে আর লাভ নেই।আমি বলতাম,তুই মরলে তোর ডারলিং এর কি হবে।সে বলত,'আর বলিস না রে,প্রেম করে শান্তি পেলাম না,ত্রিশটা দিন ঝগড়া,আজ যদি ঝগড়া হয় তো নিশ্চিত তালাক দিব'।মানে প্রেমিকার সাথে ব্রেকআপ করবে।প্রেমিক প্রেমিকার ঝগড়া খুব কমন ব্যাপার হলেও তাদের ঝগড়ার বিষয়বস্তু ছিল বেশ ব্যাতিক্রম এবং মজার।যেমন,এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।রুমের লাইট নেভানো।সবাই ঘুমাচ্ছে।কিন্তু পাশের বিছানায় ম্যান্টাল ফারুক নিচু গলায় তার প্রেমিকাকে বউ বলে সম্মোধন করে কথা বলছে।
ফারুক: বউ আমি শেষ।মেসের অখাদ্য ,কুখাদ্য খেয়ে আমার পেটে ইঁদুর আর তেলাপোকা জন্মাইছে।এইগুলো পেটের ভেতর দৌড়াদৌড়ি করে।

ফারুকের প্রেমিকা: কি অসভ্যের মত কথা বল। মানুষের পেটে কি ইঁদুর হয় নাকি?[অনেক রাতে পরিবেশ খুবই নীরব থাকায় পাশাপাশি থাকা ফারুকের মোবাইলের অপর প্রান্তের কথা অনেকটা বোঝা যাচ্ছিল।]

ফারুক: সত্যি বলতেছি বউ। ইদুঁর ভেতরে দৌড়ায়।

ফারুকের প্রেমিকা:ছিঃ তুমি একটা জংলী।

ফারুক: কি বল তুমি?আমার মত এমন জামাই একটাও পাবা তুমি?

ফারুকের প্রেমিকা:তোমার মত এমন জংলী মানুষের সাথে কোন কথা নাই।তোমাকে বিয়ে করলে আমার বাচ্চারা ও এমন জংলী হবে।
বলেই ফোন কেটে দিল।আমি হাসি আটকাতে না পেরে জোরে হেসে উঠলাম।কিন্তু ফারুকের কোন প্রতিক্রিয়া নাই।সে মোবাইলের আলোতে সিগারেট খুঁজতে লাগল,তখন আবার ফোন এল ।সে রিসিভ করে অপর প্রান্তের কথা শুনে কোন উত্তর না দিয়েই ফোন রেখে দিল।তারপর বলল,একবারে বড় বোনটার মত হইছে।আমি প্রশ্ন করে জানতে পারলাম,এখন ফোন করেছে তার প্রেমিকার ছোট বোন।সে ফোন করে জানতে চাইল,ভাইয়া আপনার পেটে নাকি ইঁদুর হইছে।কয়টা হইছে।এগুলো কখন দৌড়ায়।ইত্যাদি।
এমনি ছিল ফারুক।নিজে ঘুমানোর আগে রুমের কাউকে সে রাতে ঘুমাতে দিত না।কেউ ঘুমিয়ে গেলে হয়ত সে তার শরীরে পানি ঢেলে দিত বা সিগারেট খেয়ে অ্যাশ ফেলত।তুলনামূলক দূর্বল ও নিরীহ রুমমেটরাই তার পাগলামীর শিকার হত।তখনতো আমরা সবে এইচ এস সি পাশ করেছি।ছোটই বলা যায়।তাই আমাদের শাসন করার জন্য মেস কতৃপক্ষ ছিল।তারা আমার এবং ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে শুনতে ক্লান্ত ছিল।তাই এইসব অভিযোগ যেমন কাউকে বিরক্ত করা,সিগারেট খাওয়া ইত্যাদি তেমন গুরুত্ব দিত না।পাশের রুমে একটা নিরীহ ছেলে সারাক্ষন টেবিলে বসে পড়ত।ফারুক তার নাম দিল জ্ঞানী।তাকে দেখলেই প্রশ্ন করত কি জ্ঞানী,ডিকশনারী মুখস্থ হইছে?ঐ ছেলে ফারুকের সামনে খুব একটা পড়তে চাইত না।
একরাতে বাইরে প্রবল বৃষ্টি।সবাই আরাম করে ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ মোবাইলের আলোতে দেখি ফারুক রুমে নাই।আমি উঠে তার খুজে আমাদের রুমের পেছনের ছোট্ট বারান্দায় গেলাম।দেখি রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই হাত ছড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফারুক গান গাচ্ছে,তুমি চেয়ে আছ তাই আমি পথে হেঁটে যাই....।পাশের বড় বিল্ডিংটায় লেডিস হোষ্টেল ছিল।বুঝলাম কয়েকজন মেয়ে লাইট নিভিয়ে জানালার পাশে এসে তাকে দেখছে।কিন্তু আমাদের মেসের কতৃপক্ষ একজন উঠে যাওয়ায় ফারুক পালিয়ে চলে এল।পরদিন এ নিয়ে বিচার শুরু হল।কিন্তু সাক্ষী না থাকায় ফারুককে শাস্তি দেওয়া গেল না।
ফারুকের কাজের রুটিন ও ধরন ছিল সবার চেয়ে ভিন্ন।একদিন রাত দুইটায় তার মনে হল কাপড় ধূয়া উচিৎ।সে বালতি নিয়ে পেছনের বারন্দায় যেয়ে কাপড় ধূতে লাগল।পাশের রুমের কয়েকজন তাকে জানালা দিয়ে ক্ষ্যাপাতে লাগল।একপর্যায়ে তারা ফারুকের দিকে পানি ছোড়ল।ফারুক একা পেরে না উঠে রুমে চলে এল।আমরা সব শুনে তাকেই বকতে শুরু করলাম।বললাম,তুই এই রুমের কলঙ্ক।তুই কিছু করলি না কেন?
ফারুক এবার রেগে গিয়ে বলল,আমি কি করব দেখতে চাস?আমরা বললাম ,চাই।ফারুক সঙ্গে সঙ্গে যেয়ে বালতি ভর্তি পানি তাদের জানালা দিয়ে ঢেলে দিল।তাদের বিছানা সহ সব ভিজে গেছে।এই নিয়ে বেশ কয়েকদিন অস্থিরতা বিরাজ করল।এমন অসংখ্য ঘটনা সে প্রতিনিয়ত তৈরি করত।

অনেক বছর হয়ে গেল ফারুকের কোন খোঁজ নেই।ফোন বন্ধ।তার বাসায় কখনও যাইনি বলে ঠিকানা ও জানি না।তখন facebook ছিল না।এখন থাকলেও তাকে পাই না।জানতে ইচ্ছা করে,এখনও কি ইঁদুর নিয়ে প্রেমিকার সাথে ঝগড়া করিস?

না বলে কোথায় চলে গেলি।আজকাল তোর কথা অনেক মনে পড়ে বন্ধু।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×