somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফটোগ্রাফীর টুকিটাকি (আলো) - ২

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফটোগ্রাফীর টুকিটাকি (আলো) - ২

যে কোন ধরণের ফটোগ্রাফীর কাজে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আলো, তাই একে আলোকচিত্র বলা হয়ে থাকে। আলো ছাড়া কোন কোন ছবিই ফুটে ভালভাবে ওঠেনা। একটা ভাল ছবি তোলার জন্য প্রয়োজন-একটা ভাল ক্যামেরা, সঠিক পরিমাণের আলো, ছবির ফ্রেম বা কম্পোজিশন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ও একজন ক্যামেরাম্যান। সঠিক মাত্রার আলো একটা সুন্দর, স্বচ্ছ, ঝকঝকে এবং দৃষ্টনন্দন ছবি নিশ্চিত করে। পরিমিত আলোয় তোলায় ছবির গ্রে-স্কেল বা কালার টোন, ঔজ্জ্বল্য, রেজ্যুলেশন সবকিছু নান্দনিকভাবে ফুটে ওঠে। তাছাড়া আলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খুঁটিনাটি বিষয়, পরিবেশগত ভাব, আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি এবং সর্বোপরি ত্রি-মাত্রিক ধারণা অর্থাৎ স্থান, দূরত্ব, বিন্যাস ও কাঠামোকে সঠিক ও সুচারুরূপে ছবিতে ফুটিয়ে তোলে।

ব্যবহারিক অর্থে বা টেকনিক্যালি সঠিক আলো দুটো উপাদানের উপর নির্ভরশীলঃ

১। আলোর পরিমাণ (কোয়ানটিটি অফ লাইট)- যা প্রধানতঃ নিরুপণ করা হয় আলোর প্রজ্জ্বলন মাত্রা বা ইনটেনসিটি অফ ইল্যুমিনেশন দ্বারা এবং সেটা পরিমাপের একক হলো “লাক্স”।

২। আলোর মাণ (কোয়ালিটি অফ লাইট)- যা পরিমাপ করা হয় আলোর অন্তর্নিহিত রঙের তাপমাত্রা (টেম্পারেচার অফ লাইট) দ্বারা এবং যার পরিমাপের একক হলো “ডিগ্রী কেলভিন”।

আলোর পরিমাণঃ

যে কোন ছবি তোলার জন্য ন্যুনতম পর্যায়ের হলেও কিছু না কিছু পারিমাণ আলোর প্রয়োজন হয়। একটা ছবির জন্য আলোর পরিমাণের প্রয়োগ নির্ভর করে ক্যামেরার লেন্স, আলোর স্পর্শকাতরতা (সেন্সর) এবং অবশ্যই ক্যামেরাম্যানের শিল্পসম্মত চিন্তা-চেতনা বা ইল্যুশন সৃষ্টির দক্ষতা, ভাব, স্টাইল ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর। এই উপাদানগুলোর সমন্বয় যথাযথ হলে একটা চমৎকার, সৃজনশীল এবং গুনগত মানসম্পন্ন ছবি সৃষ্টি হতে পারে। আর যদি আলোর পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম হয়-তবে

ক) ছবি ঘোলাটে, অস্পষ্ট, অস্বচ্ছ, অনুজ্জ্বল, অপরিস্কার এবং টোনাল গ্রেডেশনের স্তর বা বিভিন্ন রঙের মধ্যেকার পার্থক্য যথেষ্ট নিম্মমাণের হবে।

খ) ম্যানুয়াল অবস্থায় না হলেও অটো ফোকাস ক্যামেরার ক্ষেত্রে আইরিশ/এ্যাপারচার বা ড্রায়াফ্রাম সম্পূর্ণ খোলা থাকবে এবং ক্যামেরার ফোকাসে অসুবিধা হবে এতে করে ছবি ঝাপসা ও “ডেপথ্ অফ ফিল্ড” ভাল পাওয়া যাবেনা।

গ) ছবি ঝাপসা ও মনোটোনাস মনে হবে এবং ছবিটা সাদামাটা ও অনাকর্ষণীয় মনে হবে।

আবার অতিরিক্ত আলো ছবি জ্বালিয়ে দিতে পারে, আর জ্বলে যাওয়া ছবি সাদাটে বা ফ্যাকাশে হয়ে যায় যা কখনোই দৃষ্টিনন্দন মনে হয়না।

আলোর পরিমাণ নির্ধারণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টার্মস্।

লুমিনাস ফ্লাক্সঃ আলোর উৎস থেকে প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত আলোর পরিমাণ। যার একক হলো “লুমেন”।

ইনটেনসিটি অফ ইল্যুমিনেশনঃ একটি একক ক্ষেত্রে পতিত লুমিনাস ফ্লাক্স-এর পরিমাণ।

ইনটেনসিটি = ফ্লাক্স/এরিয়া অথবা আই = এফ/এ ------------ (১)

ইনটেনসিটির একক সমূহ:

লাক্মঃ ১ লাক্স = ১ লুমেন/এম স্কয়ার (এম.কে.এস সিস্টেম)

ফুট-ক্যান্ডেলঃ ১ ফুট ক্যান্ডেল = ১ লুমেন/ফুট স্কয়ার --------(২)

ফুট-ক্যান্ডেল = ১০.৭৬ লাক্স (১ এম স্কয়ার = ১০.৭৬ ফুট স্কয়ার)

অর্থাৎ ১ ফুট-ক্যান্ডেল = ১০ লাক্স ----------------------------------------(৩)

সুতরাং কোন একক ক্ষেত্রে পতিত আলোর পরিমাণ বা ইনটেনসিটি অফ ইল্যুমিনেশন দুটো ফ্যাক্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

ক) আলোর উৎস এবং যে ক্ষেত্রটি আলোকিত হবে এদের মধ্যেকার দূরত্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে। এবং

খ) ইনসিডেন্ট আলোর কৌণিক দূরত্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে।

বিভিন্ন আউটডোর কন্ডিশনে আলোর ইনটেনসিটি অফ ইল্যুমিনেশন-এর যে তারতম্য ঘটে তা নীচে দেখানো হলো।

চার্ট -১ : আউটডোরে প্রাপ্ত ইল্যুমিনেশন লেভেল

লাইটিং কন্ডিশন ----------- ইল্যুমিনেশন (লাক্স)
ডাইরেক্ট সানলাইট -------------- ১০০,০০০
ফুল ডে-লাইট --------------------- ১০,০০০
ওভারকাস্ট ডে ---------------------- ১,০০০
ভেরী ডার্ক ডে -------------------------- ১০০
ট্যুইলাইট - ------------------------------ ১০
ফুল মুন --------------------------------- ০.১
কোয়ার্টার মুন------------------------- ০.০১
স্টারলাইট -------------------------- ০.০০১
ওভারকাস্ট স্টারলাইট ----------- ০.০০০১

এসএলআর ক্যামেরার নরমাল লেন্স সাধারণত এ্যাপারচার ভ্যালু এফ-১.২/১.৪/১.৮/২.৮/৩.৫ থেকে এফ-২২ পর্যন্ত হতে পারে। ক্যামেরার লেন্স-এর উপর নির্ভর করে নির্দ্দিষ্ট শাটার স্পীডে আলোর পরিমাণ কম বা বেশী পেতে হলে এ্যাপারচার সেটিং পরিবর্তন করতে হয়। যদি আলোর পরিমাণ অত্যন্ত কম হয় তখন এ্যাপারচার পুরো খোলা (যেমন এফ-১.২ লেন্স সবচেয়ে কম আলোয় ছবি তোলার ক্ষমতা রাখে) রেখে ছবি তোলা হয়- সেক্ষেত্রে শাটার স্পীড কমিয়েও ছবি তোলা সম্ভব (১/৩০সে: শাটার স্পীডের নীচে খালি হাতে ছবি তোলা সম্ভব নয়)। সুতরাং যদি ক্যামেরার লেন্স এফ-১.২ (যার এ্যাপারচার সেটিং ন্যুনতম ১.২) হয় আর শাটার স্পীড ১/৩০সে: হয় তবে উপরে উল্লেখিত চার্টের ভেরী ডার্ক ডে-তেও ছবি তোলা সম্ভব, তবে ছবির কোয়ালিটি খুব একটা ভাল হবেনা।

ম্যানুয়াল সেটিং-এ লেন্স যেহেতু এর চেয়ে কম ভ্যালুতে সেটিং সম্ভব নয় তখন ছবি তুলতে হলে অবশ্যই ফ্লাশ লাইট দরকার হবে। আর যদি ক্যামেরার লেন্স এফ-১.৮, ২.৮, ৩.৫ বা ৫.৬ হয় তবে সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে এই লেন্সগুলোর এ্যাপাচার সেটিং ভ্যালু সেটাই সর্বনিম্ন আর একই শাটার স্পীডে অর্থাৎ ১/৩০সে: শাটার স্পীডে প্রতিটি “এফ” সেটিং এক স্টেপ বাড়াতে গেলে আলোর পরিমাণ দ্বিগুন লাগবে। আর আলোর পরিমাণ যত বাড়বে এ্যাপার সেটিংও উপরের দিকে উঠবে। উদাহরণ হিসেবে নীচের চার্টটা লক্ষ্য করলেই হবে।

লেন্স ------------------ লাক্স ----------- এ্যাপারচার সেটিং
১.২ নরম্যাল লেন্স ----৩০০ -৩৫০ ----এফ ৫.৬
১.২ নরম্যাল লেন্স ----৬০০ -৬৫০ ----এফ ৮
১.২ নরম্যাল লেন্স ----১২০০ -১৬০০ --এফ ১১
১.৪ নরম্যাল লেন্স ----৩০০ -৩৫০ ----এফ ৪
১.৪ নরম্যাল লেন্স ----৬০০ -৬৫০ ----এফ ৫.৬
১.৪ নরম্যাল লেন্স ----১২০০ -১৬০০ --এফ ৮
১.৮ নরম্যাল লেন্স ----৩০০ -৩৫০ ----এফ ২.৮
১.৮ নরম্যাল লেন্স ----৬০০ -৬৫০ ----এফ ৪
১.৮ নরম্যাল লেন্স ----১২০০ -১৬০০ --এফ ৫.৬

খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে “এফ” এর ভ্যালু যা মানুষের সাধারণ দৃষ্টিতে যে পরিমান আলো দেখে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ক্ষমতা বা দেখার ক্ষমতা ৬/৬ যা “এফ” “১” একক দ্বারা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এই এককের উপর নির্ভর করেই ক্যামেরার লেন্সের লাইট সেনসিটিভিটি বা “এফ”-কে ১ ধরা হয়। আর এভাবেই ক্যামেরার লেন্সের ভ্যালু এফ-১.২/১.৪/১.৮ থেকে এফ-৫.৬ বা টেলি ও জুম লেন্সের ক্ষেত্রে এফ-৮/১১/২২ হতে পারে।

একটা লেন্সের এফ ভ্যালু মানেই হলো এই লেন্সের মাধ্যমে আমরা যে আলো যা দেখি তা মানুষের দৃষ্টিতে দেখা আলোর তুলনায় কতটা কম বা রেসিওর পরিমাপ কত। যেমন ক্যামেরার লেন্সের ভ্যালু এফ-১:১.২ বা এফ-১:৫.৬ থাকা মানে হলো মানুষ সাধারণ দৃষ্টিতে যে পরিমাণ আলো দেখে তার চাইতে এই লেন্স সেই আলো কত গুণ কম দেখবে। সেই হিসেবে এফ-৫.৬ মানে হলো আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে যে পরিমাণ আলো দেখি এই লেন্সের মধ্যে দিয়ে সেই আলো ৫.৬ টাইমস্ কম দেখা যাবে।

যে কোন লেন্সের এফ-এর ভ্যালু যত কম হবে তার আলো স্পর্শকাতরতা তত বেশী হবে। আর সেকারণেই এইসব লেন্সের দাম তত বেশী হবে। একটা এফ-১.২ লেন্স-এর দাম এফ-১.৪ লেন্স-এর চেয়ে প্রায় দেড় গুন, এফ-১.৮ এর চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশী দাম। একটা লেন্স যত স্বচ্ছ হবে সেই লেন্সে তোলা ছবির রেজ্যুলেশন তত ভাল হবে।

ছবি সূত্রঃ বিয়ের পর ট্রেন যোগে ঢাকা থেকে চিটাগাং যাবার পথে হঠাৎ বউয়ের বসার পোজটা ভাল লেগে গেল। একটা আলো-আঁধারী ভাব। ক্যামেরায় ক্লিক করতেই মুহূর্তটা ধরা পড়ে গেল।

চলবে---
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৩
১৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×