আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় আসছেন। অনেকের ধারণা সুজাতাকে পাঠানোর উদ্দেশ্য আওয়ামীলীগকে একদলীয় নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে উৎসাহ, সমর্থন ও নিশ্চয়তা প্রদান করা। আবার অনেকে তার এই সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের পদতলে বিসর্জিত লেন্দুপ দর্জির সিকিমের কথা স্মরনে আনছেন এবং এ থেকে অনেকে আবার অশনি সংকেত পাচ্ছেন।
বাংলাদেশে ভারতীয় সচিবদের আগমন এই প্রথম কোন ঘটনা নয়। কিন্তু সুজাতা সিং-এর সফর অনেকের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই জন্য যে, লেন্দুপ দর্জি কর্তৃক সিকিমকে ভারতের পদতলে বিসর্জন দেওয়া কালীন সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনকারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর মহা পরিচালকের মেয়ে হলেন এই সুজাতা সিং। যাইহোক বিষয়টির নাড়াচাড়া সুস্পষ্টভাবে এদেশের মানুষের ইতিহাস, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক সচেতনাকে প্রমাণ করে, যেটা আমার কাছে সুজাতা সিংএর সফরের চেয়ে বেশী তাৎপর্য বহন করে। ভারত সিকিমের মতো ছলে-বলে-কৌশলে বাংলাদেশকে দখল করে নেবে এটা মনে হলেই নিজেকে মখার মতো বেকুব মনে হয়।
সংখ্যা ও শক্তির বিচারে বাংলাদেশের তুলনায় ভারত একটা বৃহৎ শক্তি সন্দেহ নেই। কিন্তু হাতির বিশাল দেহের তুলনায় চোখ যেমন ছোট। ঠিক তেমনি ভারতের দেহ যত বড় আমার জানামতে তার মন বা সাহস ঠিক ততটাই ছোট। ভারতের বিশাল সেনাবাহিনীর দুই তৃতীয়াংশকে সার্বক্ষণিক দাড়িয়ে থাকতে হয় চিন, পাকিস্তান সীমান্ত পাহারা দিতে। কিন্তু তার পরেও তারা তাদের সীমান্ত রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। চিনের হাত থেকে কাশ্মীরের একটা অংশ এবং তিব্বত সিমান্তের লাদাখ তারা রক্ষা করতে পারেনি। আবার পাকিস্তানীরা মাত্র কয়েক বছর আগে তাদের কারগিল অভিযানে ভারতকে পর্যদুস্ত করে ছেড়েছিল। যদিও বরাবরের মতো সেইবারও পশ্চিমারা কূটনীতিক চ্যানেলে পাকিস্তানের হাত থেকে ভারতীয়দেরকে উদ্ধার করে। যাইহোক সেনাবাহিনীর বাকী এক তৃতীয়াংশের বড় একটা অংশ ব্যতিব্যস্ত থাকে কাশ্মীর ও সেভেন সিস্টারের স্বাধীনতাকামী এবং উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মতো বিশাল এলাকার বিদ্রোহী মাওবাদিদের সামাল দিতে।
১৯৮৭ সালে শান্তি রক্ষার নামে শ্রীলঙ্কায় সেনা বাহিনী পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বিকার করে লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়ে তাদের সেখান থেকে ফেরত আসতে হয়। আবার ঐ দিকে স্বজাতি নেপালিদের কাছে ভারতীয়দের চেয়ে চাইনিজরা বেশী আপন। ছোট্ট মালদ্বীপের জনগনও অতি সাম্প্রতিক ভারতপন্থী নাশিদকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করেছে।
১৯৭৩ সালে লেন্দুপ দর্জির সিকিমের জনসংখ্যা ছিল ৩ লাখের কাছাকাছি। সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ ছিল হিন্দু। ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী হয়ে ওঠা রাজা চগিয়াল ছিল জনগনের কাছে পূর্ব থেকেই অপ্রিয়। ভারতীয়রা মাত্র পাঁচ/ছয় হাজার সেনা পাঠিয়ে প্রায় পৌনে তিন হাজার বর্গ মাইলের ছোট্ট সিকিমকে দখল করে নেয়।
ভারত বর্ষ মুসলিমরা প্রায় এক হাজার বছর শাসন করেছে। তাই ইন্দিরা গান্দি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের পর দিল্লির লাল কেল্লার জনসভায় সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন "হিন্দুস্তান হাজার সালকা বদলা লে লিয়া। হাজার সালকা স্বপন সফল হুয়া।" আমরা ভাবতে চাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ওটাই প্রথম ও শেষ বিজয়। তার পরিবর্তে ভারত যদি ৯২% মুসলিম অধ্যুষিত ১৭ কোটি জনগনের বাংলাদেশে কখনো সেনা অভিযান চালাতে আসে আমি মনে করি অনেক মন্দের মধ্যে সেটা হবে আমাদের জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ। কারণ এর মাধ্যমে হয়তো আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি জিওগ্রাফিক্যাল ক্যাপ্টিভিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা রাস্তা পেয়ে যাবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




