somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তবর্তীকালীন সরকারের রুপরেখা আর কতদূর?

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাত্র জনতার সংগঠিত আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ। সংগঠিত আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা জাতিগতভাবে সংগঠিত হতে বহু বাধার সম্মুখীন হই বা হলেও স্থায়ী হয় না। এই সুযোগ সহজে হাতছাড়া করা আমাদের উচিত হবে না। অর্ন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩০ দিন ইতিমধ্যে শেষ হলো, কিন্তু তাঁরা জনগণের সামনে রাষ্ট্র গঠনের বা সংস্কার প্রক্রিয়ার রূপরেখা এখনো হাজির করতে পারেনি। এটা সময়ের অপচয়। গতকাল সচিবসভায় প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোঃ ইউনুস স্যার সব পর্যায়ে সংস্কারের কর্মসূচি নিতে সচিবদের নির্দেশ দেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার ও গণমানুষের এবং আপনারা তাদের মনোনীত প্রতিনিধি। কেন সচিবেরা এই সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে যাবে? তারা কি পারবে গত ১৫ বছরের ফ্যাসিজম থেকে বের হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে? ভুল বললাম ১৫ বছর নয় ৫৩ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করে আমাদেরকে আলোর পথ দেখাতে? যা করার আপনাদেরকেই করতে হবে। আপনারা কাঠামো ঠিক করে দিবেন, তাঁরা বাস্তবায়ন করবে এবং জনগণ ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবে। আমার মতে এটাই হওয়া উচিত।

আপনাদেরকে ঠিক করতে হবে গুরুত্ব বিবেচনায় কোন কোন খাতে হাত দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় ২০% সমস্যা আইডেন্টিফাই করে যদি সংস্কার করা যায় তাহলে ৮০% সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপনাদেরকে ঠিক করতে হবে এই বিশ পার্সেন্ট কাজ কোনগুলা।

আমার দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে যেসব বিষয়ে আমূল সংস্কার দরকার, তা পয়েন্ট আকারে লিখে জনগণের সামনে আনা, যেমন:

১) সংবিধান সংস্কার বা পুনঃ লিখন
২) শিক্ষা খাতে সংস্কার
৩) প্রশাসন খাতে সংস্কার
৪) চিকিৎসা খাতে সংস্কার
৫) অর্থ ও ব্যাংক ব্যবস্থা খাতে সংস্কার
৬) খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাজার ব্যবস্থাপনার খাতে সংস্কার
৭) পুলিশ প্রশাসনের সংস্কার
৮) যে সমস্ত ব্রিটিশ আমলের আইন দিয়ে এখনো আমরা পরিচালিত হচ্ছি সেইসব আইনের সংস্কার
৯) রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি স্তম্ভ কিভাবে কাজ করে, কাজের গতিপ্রকৃতি সংস্কার
১০) রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামোগত সংস্কার (সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ)
১১) নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার

যদি ধরা হয় যে এই ১১টি মূল কাজ আগেই সংস্কার করতে হবে, তার জন্য ১১ টি সংস্কার বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা ঠিক করবে এ ১১ টি কমিটির সদস্য কারা হবে, তাদের কর্ম পরিকল্পনা কি হবে, তাদের মিশন স্টেটমেন্ট এবং ভিশন স্টেটমেন্ট কি হবে, এইসব কমিটিতে কি ধরনের লোক থাকবে, তাদের অভিজ্ঞতা কি রকম, তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কি কি যোগ্যতা বিবেচনায় আনা হবে ইত্যাদি।

আমার মনে হয় কমিটি ফরম করাটা উপদেষ্টাদের হাতে না রেখে একটি সার্চ কমিটি করে দেওয়া উচিত। আলোচনার মাধ্যমে উপদেষ্টারা এই সার্চ কমিটি গঠন করে দিতে পারে। সার্চ কমিটির কার্যক্রম কি হবে, তাদের কর্ম পরিকল্পনা কি হবে, সুনির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম ইত্যাদি ঠিক করে জাতির সামনে তুলে ধরবে উপদেষ্টা পরিষদ। সার্চ কমিটির কাজ শুধু কমিটি ফর্ম করে দিয়ে শেষ হবে না, তারা রেগুলেটরি বডি হিসেবে কাজ করবে, যেমন কোনো কমিটি বিলুপ্ত করা বা কমিটির নতুন সদস্য গ্রহণ বা বাদ দেওয়া, সর্বোপরি কমিটির সব কাজের জবাবদিহি সার্চ কমিটির আওতায় থাকবে । পাশাপাশি সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টার জবাবদিহির আওতায় থাকবে যেমনটি প্রধান উপদেষ্টা জনগণের কাছে জবাবদিহির আওতায় আছে।

কমিটিতে থাকা উচিত কিছু সজ্জন লোক যারা সর্বজন সমাদ্রিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে অভিজ্ঞ। এটা স্বল্প পরিসরে হওয়া উচিত। তারা ঠিক করবে ওই ১১ টি কমিটি কে কে লিড করবে এবং কারা কারা সদস্য হিসেবে থাকবে। ধরা যাক এক একটা কমিটিতে ২১ জন করে লোক থাকবে। কোন কোন ক্যাটাগরির লোক এসাইন করা হবে, তার একটা ক্রাইটেরিয়া সার্চ কমিটি নির্ধারণ করবেন। যেমন প্রত্যেকটি প্রধান দল(দল বলতে বোঝাচ্ছি যেসব দল পূর্বে সরকারি বা বিরোধী দলে ছিল) থেকে ১১ টি কমিটির জন্য ১১ জন লোকের নাম চাওয়া যাইতে পারে। যেহেতু এটা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল, তাদের পক্ষ থেকেও ১১ জন লোক থাকা উচিত, এভাবে করে গণমাধ্যম , সমাজকর্মী, সাংবাদিক কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত আর্মি, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সচিব, যেসব লোক গত ১৫ বছর ধরে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন মিডিয়ায় বা বিভিন্নভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তাদেরকেও এ কমিটিতে ডাকা উচিত।

সার্চ কমিটি বা রেগুলেটরি বডি তাদেরকে একটি অ্যাকশন প্ল্যান ধরিয়ে দিবে, যেখানে একটা সময় উল্লেখ করে দেয়া হবে, যেমন ছয় মাস বা এক বছর। প্রত্যেকটি কমিটি কাজের অগ্রগতি নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর রেগুলেটরি বডির সাথে বসবে, কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করবে এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং তারা বাস্তবায়নে হাত দেবে। কমিটি দেখবে বাস্তবায়ন করতে কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা গণজরিপ, ডিবেট বা সমাজের বিভিন্ন প্রতিনিধির গঠনমূলক সমালোচনা আমলে নিয়ে, প্রয়োজন অনুসারে সংশোধন করে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে।

আমরা প্রায় দেখে থাকি কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে একটা কমিটি গঠন করা হয়, কমিটি রিপোর্ট প্রদান করে, রিপোর্টে কিছু ফাইন্ডিংস তাকে এবং প্রস্তাবনা থাকে। সেগুলো আর বাস্তবায়ন হয় না। এক্ষেত্রে কমিটি সিস্টেমে কোথায় কোথায় সংস্কার করতে হবে, তা খুঁজে বের করবে এবং বাস্তবায়নে নিজেরাই হাত দিবে। এক্ষেত্রে রেগুলেটরি বডি তা মনিটর করবে এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে জবাবদিহির আওতায় থাকবে।

এক্ষেত্রে সুবিধা হল উপদেষ্টারা সরাসরি সংস্কার কাজে নিজেদেরকে ইনভ্লব না করে নিজেদের কাজে মনোযোগী হতে পারবে এবং জনগণের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে সংস্কার কার্য পর্যবেক্ষণ করতে পারবে কারণ যারা বাস্তবায়ন করে তারা তাদের নিজেদের ভুল নিজেরা দেখতে পাই না। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি উপদেষ্টা নিজেরাই সংস্কার কাজের সাথে জড়িত না হয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পক্ষের হাতে সংস্কার কার্য বাস্তবায়ন এর কাজ ছেড়ে দিবে।


সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের শেষের দিকে উপদেষ্টারা নির্বাচনের প্রতি মনোযোগী হবে এবং তা শুরু হবে ইউনিট পর্যায়ে থেকে অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দিয়ে এবং ধাপে ধাপে নির্বাচন শেষ করে জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন দিবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। সর্বশেষে আরেকটি বিষয় যোগ করতে চাই, আমরা দেখি রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকার দলীয় লোক দ্বারা পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে দলীয় লোকের বাইরে নিরপেক্ষ এবং যোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়া উচিত এবং যৌক্তিক পর্যায়ে সংস্কার বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×