দ্বিতীয় বিবাহ না ব্যভিচার: একজন মুসলিম পুরুষের বাস্তবতা ও ইসলামের নির্দেশনা
ভূমিকা
সমাজে এমন বহু পুরুষ আছেন যাদের ঘরে রূপবতী, চরিত্রবান, ভালোবাসাপূর্ণ স্ত্রী রয়েছেন। সংসারে কোনো ঘাটতি নেই, তবুও তাদের মন বারবার দ্বিতীয় বিবাহের কথা ভাবছে। অনেকে এটিকে মানসিক রোগ বলে মনে করেন, কেউবা পুরুষদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো — এই চাহিদা কীভাবে দেখা উচিত? এবং যদি তা নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে দ্বিতীয় বিবাহ কি উত্তম, নাকি ব্যভিচারে পতিত হওয়াই স্বাভাবিক? ইসলামের জবাব কী?
পুরুষের একাধিক নারীর প্রতি আকর্ষণ: স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক?
পুরুষের মধ্যে একাধিক নারীর প্রতি আকর্ষণ থাকা জৈবিকভাবে স্বাভাবিক। ইসলাম এ সত্যকে অস্বীকার করেনি, বরং বিবাহের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
“তোমাদের মধ্যে যারা ন্যায়পরায়ণ, তারা চাইলে দুই, তিন বা চারটি নারীর সঙ্গে বিবাহ করতে পারে।” — [সূরা নিসা, ৪:৩]
অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিবাহ জায়েয এবং শরিয়তের অনুমোদিত একটি রাস্তা, যদিও তা আবশ্যিক নয়।
ব্যভিচার বনাম দ্বিতীয় বিবাহ
বর্তমান সমাজে এক অদ্ভুত মানসিকতা দেখা যায়— অনেক স্ত্রী মনে করেন, "স্বামী ব্যভিচার করুক, তবুও দ্বিতীয় বিবাহ যেন না করে!" এমন ধারণা চরম ভুল ও আত্মঘাতী। কেননা:
দ্বিতীয় বিবাহ:
- হালাল
- দায়িত্বশীলতা ও সম্মানের সাথে সম্পর্ক
- আল্লাহর অনুমোদিত
- সমাজে বৈধ
ব্যভিচার:
- হারাম
- চারিত্রিক অধঃপতন
- আল্লাহর গজব ও শাস্তি
- পরিবার ধ্বংসের কারণ
“ব্যভিচারের ধারে-কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ।” — [সূরা ইসরা, ১৭:৩২]
যদি দ্বিতীয় বিবাহে স্ত্রী রাজি না হয়?
অনেক পুরুষ আছেন যারা:
- স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন,
- দ্বিতীয় বিবাহের ইচ্ছা পোষণ করলেও স্ত্রীর অনিচ্ছার কারণে করেন না,
- আবার হারামের পথেও যান না,
- কিন্তু তাদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, বিষণ্নতা ভর করে।
এদের প্রতি পরামর্শ:
1. আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া বাড়ানো
2. ধৈর্য ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া
3. স্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা ও সম্মানজনক আলোচনা
4. যদি স্ত্রীর মন গলানো সম্ভব না হয়, তবুও আল্লাহকে ভয় করে হারামের পথ পরিহার করা
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ করে দেন।” — [সূরা তালাক, ৬৫:২]
বাস্তব সমাধান কী?
যদি কারও মধ্যে দ্বিতীয় বিবাহের প্রবল ইচ্ছা থাকে এবং ব্যভিচারে পতনের আশঙ্কা থাকে — তবে ইসলাম তাকে দ্বিতীয় বিবাহ করতে উৎসাহ দেয়, ব্যভিচারে নয়।
কিন্তু দ্বিতীয় বিবাহের আগে শর্ত হলো —
- ন্যায়পরায়ণ হওয়ার সামর্থ্য,
- আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতি,
- প্রথম স্ত্রীর অধিকার হরণের ভয় না থাকা।
উপসংহার
ইসলাম জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিচালনার শিক্ষা দেয়। আমাদের চাহিদা, বাস্তবতা ও তাকওয়ার মধ্যে সমন্বয় রাখতে শেখায়। একজন মুসলিম পুরুষের উচিত:
- নিজের প্রবৃত্তিকে হালালের মাধ্যমে পূরণ করা,
- হারাম থেকে দূরে থাকা,
- এবং স্ত্রী ও পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।
"একমাত্র আল্লাহর নির্দেশনাই সত্যিকারের কল্যাণের পথ।" — [সূরা বাকারা: ২]
আশা করি এই লেখাটি অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, মন খুলে ভাবতে সাহায্য করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



